নানা সংকটে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্যবিভাগ

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে দিন দিন রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেলেও ডাক্তারের শূন্য পদে কোন নিয়োগ নেই। ফলে গরীব ও অসহায় রোগীরা কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। এদিকে যেসব ডাক্তার সেবা দিচ্ছে তারা ঠিকমত অফিস করেন না। গত ১৪ মার্চ ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ১৪ জন চিকিৎসককে শোকজ করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত অফিস সময় হলেও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসক যথাসময়ে কর্মস্থলে উপস্থিত হন না। অনেক সময় দুপুরের আজান হলেই চিকিৎসকরা ক্লিনিকে নতুবা বাড়ির পথ ধরেন। এছাড়া হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রাতের বেলা রাউন্ড দেবার বিধান থাকলেও মেডিসিন, সার্জারি ও হৃদরোগের চিকিৎসকরা রাউন্ড দেন না। ফলে বেশিরভাগ জটিল রোগী রেফার্ড করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় ডাক্তার সংকটের অজুহাতে হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে পছন্দের ক্লিনিকে। শৈলকূপাসহ প্রায় সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম ঔষধ সংকট রয়েছে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলায় ২১১ ডাক্তারের পদে মাত্র ৬৩ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন। শূন্য পদ আছে ১৪৮। সূত্র মতে, ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সহকারী সার্জনের ২০টি পদে কর্মরত আছেন মাত্র ৭ জন। ১৩টি পদ শূন্য আছে। এছাড়া সিভিল সার্জন অফিসে ১ জন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ৪০ জন ডাক্তারের মধ্যে ১৭ জন, কালীগঞ্জ হাসপাতালে ৩১ জন ডাক্তারের মধ্যে ৭ জন, মহেশপুর ৩৪ জন ডাক্তারের মধ্যে মাত্র ৪ জন, শৈলকুপায় ২৬ জনের মধ্যে ৭ জন, হরিণাকুন্ডুতে ৩০ জনের মধ্যে ৫ জন ও কোটচাঁদপুরে ২৬ জন ডাক্তারের মধ্যে ৮ জন কর্মরত আছেন।
বছরের পর বছর এ সব শূন্য পদে কোন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয় না। ফলে স্বল্পসংখ্যক ডাক্তার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে রোগীদের সাথে চিকিৎসকদের প্রায়ই বাদানুবাদের ঘটনা ঘটে। হয় আদালত ও থানায় মামলা।
রোগীদের অভিযোগ, ডাক্তাররা সময়মতো হাসপাতালে আসেন না। আবার দুপুরের আজান হলেই বাসায় চলে যান। অনেক সময় রোগীদের ভাল মানের ওষুধ থাকলেও দেওয়া হয় না।
জানা গেছে, প্রতিদিন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে এক হাজারের বেশি রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নেন। নির্দিষ্ট সংখ্যক শয্যার বিপরীতে অসংখ্য রোগী ভর্তি হয়ে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নেন। জেলার মহেশপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রোগীদের ঠিকমত খাবার দেওয়া হয় না। একই অবস্থা ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে ঠিকাদাররা এ কাজ করে থাকেন।
অনিয়মের শেষ নেই
ডায়রিয়া ও শিশু ওয়ার্ডে ভর্তিরত রোগীরা ঠিকমত চিকিৎসা পায় না। অনেক ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও উন্নত পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ না পেয়ে রোগীরা দৌড়ান প্রাইভেট ক্লিনিকে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে অক্সিজেন বিভাগে কোন টেকনিশিয়ান নেই। ফলে কোটি টাকার বেশি এই প্রকল্প প্রায় অচল হতে বসেছে। অনেক বিভাগে এক্সপার্ট না থাকার কারণে মেশিনপত্র পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ডাক্তাররা কোন পিয়ন পান না। এক গ্লাস পানি খেতে হলেও নিজে খেতে হয়। ডাক্তারের অভাবে উপজেলা পর্যায়ে অপারেশন সম্ভব হয়ে উঠে না। এদিকে উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন দুই শতাধিক রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসে। ভর্তি থাকেন ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী। এই বিপুল সংখ্যক রোগী ৪/৫ জন ডাক্তারকে সামাল দিতে হচ্ছে। হরিণাকুন্ডু হাসপাতালে ৩০ জন ডাক্তারের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন। দু’জন ডাক্তার রাতের ডিউটি করে বিশ্রামে গেলে বাকি তিনজন ডাক্তার সামলান দিনের বেলা। এ ভাবেই চলছে জেলার চিকিৎসা সেবা।
এসব বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ রাশেদা সুলতানা জানান, আমরা একাধিক বার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে শূন্যপদ পূরণের কথা বলেছি। কিন্তু পদ পূরণ হয় না। ফলে কর্মরত চিকিৎসকরা সুযোগ পাচ্ছেন না। তারপরও এতো কম সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে আমরা রোগীদের মানসম্মত চিকিৎসা দেবার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন