অন্যান্য

সেই শিশু বললো, মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলাম

ঝিনাইদহের চোখঃ

বনানীর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হওয়া ফায়ার সার্ভিসের পাইপ ধরে রাখা শিশু মো. নাঈম ইসলাম জানিয়েছে কী কারণে সে এগিয়ে এসেছিল।

চ্যানেল আই অনলাইনকে নাঈম জানায়, মানুষগুলোর জীবন বাঁচাতে আমার মতো করে সাহায্য করছিলাম। সবাই সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করছিল যেন মানুষগুলো বাঁচতে পারে। তাই আমিও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসি।

শুক্রবার দুপুরে বনানীর সেই এফআর টাওয়ারের সামনে আবার এসেছিলো শিশু নাঈম। এসময় চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, তার নাম মো. নাঈম ইসলাম। কড়াইল বস্তিতে বাবা-মা ও এক বোনের সঙ্গে বসবাস তার। স্থানীয় আরবান স্লাম আনন্দ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আগুনের খবর শুনে ছুটে আসেন বনানীতে।

অনর্থক উৎসাহী জনসাধারণের ভিড়ের কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের কাজ করতে বেগ পেতে হয়েছে। তবে হাতেগোনা কিছু মানুষ হাত মিলিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের সঙ্গে। তারা সার্বক্ষণিক রাস্তা খালি করে পানির গাড়ি কিংবা অ্যাম্বুলেন্স যাতায়াতে সহায়তা করে গেছেন।

উৎসুক জনতার এতো কাণ্ডজ্ঞানহীনতার মধ্যেই একটি ছবি নজর কেড়েছে সকলের। এক শিশু ফায়ার সার্ভিসের ফাটা পাইপ দিয়ে বের হয়ে যাওয়া পানি আটকে রাখার চেষ্টা করছিলো। তার চোখেমুখে চরম উদ্বিগ্নতার ছাপ স্পষ্ট। দুইদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ছবিটি।

নাঈম জানায়, তার বাবা রুহুল আমিন বনানীতে ডাব বিক্রি করেন। মা বাসা বাড়িতে কাজ করেন। বাবার বনানীতে ব্যবসা, সেই তাড়নাতেই আগুনের খবর শুনে বনানীতে ছুটে আসে সে। আসার পর ভিড় ঠেলে আগুন লাগা এফআর টাওয়ারের সামনে চলে আসে। এসে নিজ তাড়নাতেই রাস্তার পাশে পলিথিন নিয়ে ফায়ার সার্ভসের পাইপ ধরে অন্যদের সঙ্গে সহযোগিতার চেষ্টা করে।

এরপর যখন ভবনের গ্লাস ভেঙে পড়ে তখন অন্যরা নাঈমকে দূরে সরিয়ে নেয়। গ্লাস ভাঙা একটু কমতেই নাঈম দেখে একটি পানির পাইপ কেটে তা থেকে পানি বের হয়ে যাচ্ছে। তখন পাশ থেকেই একটি পলিথিন কুড়িয়ে তা দিয়ে পাইপের ফাটা অংশটি চেপে ধরে নাঈম।

বনানীর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে মরেছেন ২৫ টি তাজা প্রাণ। আগুন লাগার পর থেকেই ভবনে অবস্থান করা মানুষগুলো যখন জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বাঁচার আকুতি জানাচ্ছিল, তখন নিচে দর্শকের ভূমিকায় ছিলেন হাজারো মানুষ। অনেকে ছবি তুলে কিংবা ভিডিও করে পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তখন শিশু নাঈম নিজেই সামর্থের সবটুকু দিয়ে কাজ করেছেন কোনো প্রকার ভয় ছাড়াই।

নাঈম জানায়, আমি কোনো ভয় পাইনি, ওই সময় আল্লার কাছে সবাই দোয়া করছিল ভেতরের মানুষগুলা যেন বাঁচে। আমিও চাইছিলাম ছোট একটু সাহায্য করে যদি কাউকে বাঁচানো যায়।

সে আরো জানায়, বাসায় যাওয়ার পর তার নানী ও এলাকার অন্যরা সবাই তাকে বাহবা দিয়েছে। সবাই জড়িয়ে ধরেছে। তার নানী বলেছেন, ছবিটা দেখেছি, ভালো কাজ করছিল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button