ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

ঝিনাইদহের রেখা, কার সাজা কে খাটে?

ঝিনাইদহের চোখঃ

শিরিন বেগম। মাদক মামলার দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত। বর্তমানে লেবানন প্রবাসী। তার মামলায় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে সাজা খাটছেন রেখা খাতুন।

পুলিশ তাকে শিরিন বেগম হিসেবে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন, দাবি রেখার পরিবারের।

সাজপ্রাপ্ত শিরিন বেগম যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া ইসমাইল কলোনি এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী। আর রেখা খাতুন ঝিনাইদহ শহরের শহীদ মশিউর রহমান সড়কের বাসিন্দা লাল্টু শেখের মেয়ে ও যশোর শহরের ডালমিল এলাকার ভাড়াটিয়া। রেখা শহিদুলের সাবেক দ্বিতীয় স্ত্রী।

আদালতের পরোয়ানা তামিলকারী কোতয়ালি থানার সেকেন্ড অফিসার ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিরুজ্জামান বলেন, সাজাপ্রাপ্ত শিরিন বেগমকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি নাম পরিবর্তন করে রেখা খাতুন হিসেবে চলছেন। ঠিক আসামিকেই গ্রেফতার করেছি। আদালতে সেটি প্রমাণ করে দিবো।

আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ২০ মার্চ কোতয়ালি থানা পুলিশ শহরের রায়পাড়া এলাকা থেকে রেখা খাতুনকে শিরিনা বেগম হিসেবে গ্রেফতার করে। ওই দিন তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ২০০৫ সালের একটি মাদক মামলায় ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট (হেরোহিন উদ্ধার) যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া ইসমাইল কলোনি এলাকার শহিদুল ইসলামের স্ত্রী শিরিন বেগমকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৪ মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয় জেলা জজ আদালত।

এই মামলায় শিরিন বেগমের স্বামী শহিদুল ইসলামকে খালাস পায়। শিরিন বেগম পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। গত ২০ মার্চ শহিদুল ইসলামের সাবেক দ্বিতীয় স্ত্রী রেখা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতার রেখা খাতুন শিরিন বেগম নয়, দাবি করে ২৪ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালতে আবেদন করেন আইনজীবি আব্দুস সহিদ। বিচারক শুনানি শেষে বিষয়টি পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

রেখা খাতুনের আইনজীবী আবদুস সহিদ বলেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামি শিরিন বেগম বিদেশ রয়েছে। তার পরিবর্তে রেখা খাতুনকে গ্রেফতার করে শিরিন দাবি করা হয়েছে। নিরাপরাধ ব্যক্তি কারাগারে সাজা খাটছে। সাজাপ্রাপ্ত শিরিন বেগমের আইনজীবীও আমি ছিলাম। আমি নিশ্চিত রেখাকে শিরিন বেগম হিসেবে সোপর্দ করা হয়েছে। তাই আমি চ্যালেঞ্জ করেছি। এর স্বপক্ষে রেখার পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি আদালতে জমা দিয়েছি।

আইনজীবীর কথার সূত্র ধরে অনুসন্ধন করেছে এই প্রতিবেদক। শনিবার দুপুরে শহরের চাঁচড়া রায়পাড়ার ইসমাইল কলোনিতে শহিদুল ইসলামে খোঁজে যায়। প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সামাদ বলেন, শিরিন বেগম ও রেখা খাতুন একই ব্যক্তি নয়। দু’জন ভিন্ন ব্যক্তি। এদের একজন শিরিন বেগম শহিদুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী। অপর জন দ্বিতীয় স্ত্রী (ডিভোর্স) রেখা খাতুন। শিরিন বেগম বেশ কয়েক বছর ধরে বিদেশে আছে। আর রেখাকে শিরিন হিসেবে পুলিশ আটক করেছে।

শিরিন বেগমের স্বামী শহিদুল ইসলাম বলেন, শিরিন বেগম আমার প্রথম স্ত্রী। বর্তমানে সে লেবাননে থাকেন। ওই মামলায় আমিও আসামি ছিলাম। আমি খালাস পেয়েছি। শিরিনের সাজা হয়েছে। পুলিশ রেখা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে। রেখা খাতুন নির্দোষ।

তিনি আরও বলেন, রেখার সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছিল ২০০৯ সালের দিকে। এরপর ২০১২ সালের দিকে ডিভোর্স হয়ে যায়। সে তার মতো থাকতেন চাঁচড়া ডালমিল এলাকায়। পুলিশ শিরিন বেগম দাবি করে, রেখা খাতুনকে আটক করেছে।

তবে শিরিন বেগম লেবাননে আছেন এমন কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, খুঁজে দেখতে হবে।

রেখা খাতুনের প্রথম পক্ষের (প্রথম স্বামী) মেয়ে সাহিদা আক্তার রানী বলেন, মা সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলেন। চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার রাস্তা থেকে পুলিশ তাকে আটক করেছে। মা এখন জেলে আছে। কিছুই বুঝতে পারছি না। কোথায় যাবো কি করবো।

দেশে বিদেশে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button