ঝিনাইদহের রিজিয়ার জীবণ যুদ্ধ
ঝিনাইদহের চোখঃ
এমেলি (২২), চামেলি (১৮) ও নয়ন (১৫) শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী তিন সন্তান নিয়ে রিজিয়া খাতুন চোখে অন্ধকার দেখছেন। নতুন করে এই তিনজনের দৃষ্টিশক্তিও হ্রাস পেতে শুরু করেছে। অথচ এই তিন সন্তানের চিকিৎসা দূরে থাক, কিভাবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকবে তারও কোনো কিছুই জানা নেই। এদের নিজস্ব বাড়ী-ঘর কিংবা মাথা গোজার ঠাঁইও নেই। তাই রিজিয়া চোখে হতাশার অন্ধকার দেখছেন। বর্তমানে প্রতিবন্ধী এই সস্তানদের নিয়ে রিজিয়া খাতুন একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। আর লোকের বাসা বাড়ির কাজ কিংবা কায়িক পরিশ্রম করে চলে তাদের জীবন।
রিজিয়া ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার বিদ্যাধরপুর গ্রামের মৃত আপেল দফাদার মেয়ে। প্রায় ২৫ বছর আগে তার বিয়ে হয় স্থানীয় পৌর এলাকার গাবতলা পাড়ার মান্দার আলী মণ্ডলের ছেলে নুর ইসলামের সাথে। দাম্পত্য জীবনে একে একে তাদের ঘরে জন্ম নেয় মেয়ে এমেলি, চামেলী ও ছেলে নয়ন। কিন্তু শিশুগুলো একপর্যায়ে বড় হলে দেখা যায় এরা বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। সে সময় সাধ্য অনুযায়ী ডাক্তার-কবিরাজের মাধ্যমে এদের প্রতিবন্ধী অবস্থা থেকে সুস্থ করার জন্য অনেক চেস্টা করেও কোনো লাভ হয়নি। একে একে তিন সন্তানই একইভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে বড় হতে থাকে।
সাংসারিক জীবনে একপর্যায়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে প্রতিবন্ধী এই তিন সস্তানের বাবা নুর ইসলাম এদের ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। সেই থেকে তিনটি সন্তান নিয়ে রিজিয়া চোখে অন্ধকার দেখছেন। জীবন-জীবিকার জন্য বিভিন্ন লোকের বাসাবাড়ির কাজ করে যা পান তাই দিয়ে চলে তাদের জীবন। রিজিয়া জানান, দুবছর আগে অনেক আশা নিয়ে বড় মেয়ে এমেলিকে বিয়ে দিয়েছিল জাহিদ নামের এক ছেলের কাছে। রিজিয়ার প্রতিবন্ধী মেয়ে এবং তাদের এই অসহায় পরিবারের প্রতি সহযোগিতা প্রদর্শন করে বিয়ে করে জাহিদ।
কিন্তু সে বেকার, কোনো কাজ না করে ঘুরে বেড়ায়। রিজিয়ার ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়ায় সে। এক পর্যায়ে সে দাবি করে তাকে টাকা দেয়ার। যৌতুকের টাকা নিয়ে ব্যবসা করবে। কিন্তু মেয়ের জামাইকে যৌতুকের টাকা দেবে সে সামর্থ্য রিজিয়ার নেই। আর চামেলিকে একটি বাসায় ঝিয়ের কাজে দিয়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধী এই তিন ছেলেমেয়ে দিন দিন দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে। যার ফলে রিজিয়া নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কিভাবে এদের দৃষ্টিশক্তি রক্ষায় চিকিৎসা করাবেন তার কোনো দিশা পাচ্ছেন না। আর চিকিৎসা করাতে না পারলে যদি সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায় এরা তবে তো এদের নিয়ে এক মহা বিপদে পড়বে রিজিয়া। তাতে তার মৃত্যু ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না।
রিজিয়া হতাশা প্রকাশ করে আরো জানায়, আমার জীবনের প্রতি আর কোনো মায়ামমতা নেই। তাই মাঝে মধ্যে মনে হয় যদি মরে যেতাম তবেই বোধ হয় ভালো হতো। কিন্তু এই তিন অসহায় সন্তানের কথায়ও তিনি ভাবেন। তাহলে এরাই কার কাছে যেয়ে আশ্রয় পাবে। এমন নানান চিন্তার সাগরে হাবুডুবু করছে তার জীবন। অসহায় এই পরিবারের প্রতি সহানুভ‚তি দেখিয়ে সমাজের কোনো কেউ হৃদয়বান সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। যোগাযোগের জন্য মোবাইল নং : ০১৯৬৯৩০১২২০।