ঢাল নেই তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যত্রতত্র গড়ে উঠছে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নেই কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ। ফলে অটিজম কিংবা প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবেও স্কুলকে ব্যবহারের অভিযোগ রযেছে। তবুও এগুলো বন্ধে নেই কোন পদক্ষেপ।
অটিস্টিক কিংবা প্রতিবন্ধী শিশুদের স্বাবলম্বী কিংবা আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে ঝিনাইদহে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে তাদেরকে কারিগরি, পাঠ্য বিষয়সহ নানা বিষয়ে শেখানোর কথা রয়েছে।
কিন্তু ঝিনাইদহে এ চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় থাকার কথা থাকলেও ঝিনাইদহে রয়েছে ২১টি। যার ৯৫ ভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নেই কোন বিএসএড প্রশিক্ষণ (বিশেষ শিশুর জন্য বিশেষ শিক্ষাদান প্রশিক্ষণ)। ফলে প্রচলিত পদ্ধতিতেই এসব শিশুদের পাঠদান করা হচ্ছে।
স্থানীয় কিছু ব্যক্তিদের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে ইচ্ছেমত পরীক্ষা নিয়ে দেওয়া হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ। এক্ষেত্রে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন অংকের টাকা নেওয়ার। কোন কোন প্রতিষ্ঠান আবার পরিত্যক্ত বিদ্যালয়ের ভবন ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। বিভিন্ন এনজিও এগুলোর পেছনে কাজ করছে। ফলে যত্রতত্র গড়ে ওঠা এসব বিদ্যালয় এবং প্রশিক্ষণ বিহীন শিক্ষকদের দ্বারা অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী শিশুদের কতটুকুই উন্নয়ন হবে সেটা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার যাত্রাপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত স্কুলে ২০১৫ সাল থেকে চলছে জহুরা বেগম অটিস্টিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এই অটিস্টিক বিদ্যালয়ের নেই অধিকাংশ ক্লাস রুমে জানালা-দরজা।
অন্যদিকে সদর উপজেলার হাজী আমজাদ আলী অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ১৬ জন শিক্ষকের মাত্র পাঁচ জনের রয়েছে মাত্র এক মাসের নিউরো ডেভেলপমেন্টালী ডিজএ্যাবিলিটি প্রশিক্ষণ (এটা অটিস্টিকের একটি অংশ) যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে রান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নামের একটি এনজিও। অন্যদের কোন প্রশিক্ষণই নেই। এসব বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ না নেওয়া শিক্ষকরা বলেন, আমাদের কোন প্রশিক্ষণ নেই, তবে প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টা করছি। অনেকেই আবার কথা এড়িয়ে যান।
সদর উপজেলার হলিধানী মো. আ. রশিদ মিয়া বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের নিজস্ব কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ হয়। কোন টাকা নেওয়া হয়না, তবে কিছু খরচ লাগতে পারে, তা নেওয়া হয়।
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বাবু কনক কান্তি দাস বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিস্টিক শিশুদের নিয়ে কাজ করে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের নাম উজ্জল করেছেন। কাজেই সেই সুনাম ধরে রাখতে এবং শিক্ষার সঠিক মান নিশ্চিতে রাতারাতি গড়ে ওঠা এসব ভুইফোড় অটিস্টিক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঝিনাইদহ সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জাহিদুল আলম বলেন, বিদ্যালয়গুলো সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম চালায়। মন্ত্রণালয়ের চাহিদার প্রেক্ষিতে আমরা এর সঠিক প্রতিবেদন দিই। কিন্তু এগুলো বন্ধ বা ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব আমাদের না।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি উপজেলায় একটি করে অটিস্টিক বিদ্যালয় থাকার কথা। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ব্যক্তিগত স্বার্থে টাকার বিনিময়ে এগুলো করছে। প্রতিবন্ধী বা অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষার মান নিশ্চিতে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের তথ্য মতে ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ২৬ হাজার ৯০৮ জন প্রতিবন্ধ শিশু রয়েছে যার মধ্যে অটিস্টিক শিশু রয়েছে ৩৩৫ জন।