অন্যান্য

টানা ১০ মাস উড়তে পারে যে পাখি

 

ঝিনাইদহের চোখ:

পাখিটার নাম কমন সুইফট (Common Swift)। টর্পেডো মিসাইলের মতো আকৃতি, সঙ্গে বর্ষার ফলার মতো তীক্ষ্ণ, লম্বা ডানা। অনায়াসে যেন বাতাস কেটে ছুটে চলেছে। শত শত বছর ধরে পাখিপ্রেমিকরা এই পাখিটির ওড়ার দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে এসেছে।

কিন্তু এর চেয়েও মুগ্ধ করা আরেকটি বৈশিষ্ট্য আছে ছোট এই পাখিটির। একবারের জন্যও মাটি স্পর্শ না করে টানা ১০ মাস উড়ে বেড়াতে পারে এই কমন সুইফট। দীর্ঘ সময়ের এই যাত্রার কারণে পাখিটি গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জায়গা পেয়েছে।

সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী অ্যান্ডার্স হেডেনস্ট্রম বলেন, মানুষের জানা মতে বিরতিহীন ওড়ার চরমতম উদাহরণ এই কমন সুইফট। বৃহস্পতিবার কারেন্ট বায়োলজি জার্নালে এই পাখির বিস্ময়কর দক্ষতা নিয়ে একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়, যার প্রধান লেখক তিনি।

হেডেনস্ট্রম ও তার সহকর্মীরা টানা দু’বছর ধরে ১৩টি সুইফট পাখিকে পর্যবেক্ষণ করেন। পাখিগুলোর পিঠে ছোট্ট ব্যাকপ্যাকে করে লাইট সেন্সর এবং অ্যাক্সেলেরোমিটার বসিয়ে দেয়া হয়। লাইট সেন্সরের ফলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় চিহ্নিত করে পাখিগুলোর অবস্থান সনাক্ত করা হচ্ছিল।

অন্যদিকে অ্যাক্সেলেরোমিটার দিয়ে প্রতিটি পাখির  ডানা ঝাপটানো ও তাদের সামনে এগিয়ে চলাকে মনিটর করা হচ্ছিল। এই দু’য়ের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছিলেন কত দূরে এবং কত দ্রুত পাখিগুলো উড়ে যাচ্ছে এবং কতটা সময় তারা মাটিতে কাটাচ্ছে তা হিসেব করতে।

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, কমন সুইফট প্রতি বছর ইউরোপের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্য আফ্রিকা যায় টানা ১০ মাসের যাত্রা করে। এর ৯৯.৫ শতাংশ সময়ই তারা আকাশে থাকে। যখন কোনো গাছের ডালে বা মাটিতে নামে, তা মাত্র এক থেকে দু’ঘণ্টার জন্য। তারপর আবার শুরু হয় তাদের ‘ম্যারাথন ওড়া’।

হেডেনস্ট্রম জানান, অন্য পাখিগুলো এরকম ক্ষুদ্র সময়ের জন্য থামলেও পরীক্ষাধীন তিনটি পাখি একবারের জন্যও নিচে নামেনি। এক মুহূর্তেরও বিশ্রাম ছাড়া টানা ১০ হাজার মাইল উড়েছে পাখিগুলো। অন্য কোনো প্রজাতির পাখি কয়েক সপ্তাহের বেশি এভাবে আকাশে কাটাতে পারে না।

সারাক্ষণ ওড়ার ওপরই থাকে বলে কমন সুইফট সব কাজ আকাশেই করে। উড়ন্ত পোকামাড় খাওয়া থেকে শুরু করে প্রজনন – সবই হয় উড়তে উড়তে। উড়তে উড়তে জলাশয় থেকে তারা চুমুক দিয়ে পানি খায়।

এমনকি পাখিগুলো ঘুমের কাজটাও ওড়ার মধ্যেই সারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। গতিবেগ ও গতিপথ মনিটর করার সময় এমনটা সন্দেহ করলেও এখন পর্যন্ত হেডেনস্ট্রম ও তার দল ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে পারেননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button