পাঠকের কথা

বৈশাখ!! এক দিনের জন্য কি?—মোঃ সবুর মিয়া

ঝিনাইদহের চোখঃ

বৈশাখ!! এক দিনের জন্য কি?—ফিচারটি লিখেছেন ঝিনাইদহের ডাকবাংলার সন্তান মোঃ সবুর মিয়া।

এক দিনের জন্য কি?আসলে আমি বলতে চাচ্ছি,বাঙ্গালিত্ব কি শুধু এক দিনের জন্য? পহেলা বৈশাখ বাঙালির উৎসব, আনন্দ ও উৎযাপনের দিন ।

নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বাঙালি নিজেকে সাজাতে চায় তার নিজের মতো করে। নিজস্ব ঐতিহ্যের পোশাক পরা, খাবারে বাঙ্গালিতত্ব। ভেতর তারুণ্য , ছুটতে চায়, উড়তে চায়। পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও নতুন বাংলা বছরকে বরণ করে নিতে চারদিকে নানা আয়োজন ।

পহেলা বৈশাখ বাঙালির সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসবও বটে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব বাঙালি এখন মেতে আছে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের বিভিন্ন প্রস্তুতিতে। শপিংমল, মার্কেটে পহেলা বৈশাখের পোশাকের সমারোহ। লাল সাদা রঙের নানা মিশ্রণে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, ফতুয়ায় নারীরা সাজিয়ে তুলবে নিজেদের। ছেলেরা পরবে পায়জামা, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ধুতি। শিশুদের জন্যও রয়েছে আলাদা সব পোশাক। বাহারি রঙের এসব পোশাকের বেচাকেনা চলছে ও চলবে।

পহেলা বৈশাখের আরেকটি বিশেষ অনুষঙ্গ নিজস্ব খাবার। যে যতই বলুক পান্তা-ইলিশের সঙ্গে পহেলা বৈশাখের কোনো সম্পর্ক নেই, তারপরও এদিন……, আর সেজন্যই বাজারে এখন ইলিশের দাম চড়া !!

এ ছাড়াও দেশের সব শহর, বন্দর, গ্রামে বসবে মেলা। প্রাণে প্রাণে মিলবে বাঙালি। সারাদিন বাজবে ঢোল, বাঁশি, একতারা, দোতারা। অনেকে হোটেল-রেস্তোরাঁতে গিয়েও বাঙালি খাবারের স্বাদ নেবেন। চলবে মণ্ডা, মিঠাই আর মিষ্টিমুখ। সারাটা দিনই থাকবে উৎসব, আনন্দ ও উৎযাপন।

সমালোচনা বিশ্লেষণঃ

আসলেই কি তাহলে বাঙালি,পহেলা বৈশাখ শুধু মাত্র একদিনের জন্য পালন করে থাকে? আমরা মুখে মুখে বলি বাঙালি। আমরা হৃদয় কি ধারণ করি? ঠিক সকালে আমরা দিন শুরু করি পান্তা ইলিশ দিয়ে, দুপুর হলেই বাঙালিত্ব ভুলে যাই। আর বিকালে যায় নামি দামি বিদেশি রেস্টুরেন্টে বার্গার, পিৎজা আর চাইনিচ খাবারের টানে, তাহলে আমরা কিসের বাঙালি!
আমাদের যে সকল কৃষ্টি-কালচার আছে, তার মধ্যে আমরা সবচেয়ে বেশি উৎসব দেখি পহেলা বৈশাখে,বৈশাখের ঠিক পরেরদিন মনে থাকে না বাংলা মাস কিবা বছর ।বাংলা ভাষা আর ইতিহাস, বলতে গেলে আমাদের অধিকাংশ বাঙালিরই অজানা।

আমরা কি কখনো নিজেকে প্রশ্ন করেছি ? আসলে আমরা কতটুকু বাঙালি নাকি শুধু উৎসবে বাঙালি , সাজুগুজু তে বাঙালি, খাওয়া-দাওয়া তে বাঙালি নাকি লেবাসধারী বাঙালি।
অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন কে এত সমালোচনা , আমি বলব শুধু সমালোচনা নয় ,আশার বাণী,প্রত্যশার মোড়ক । আমরা আশা করেছিলাম,আমরা বাঙ্গালিতত্ব নিয়ে বাঁচবো ।পৃথিবীকে আমরা আমাদের হৃদয়ে ধারণ করা কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরব ।সেটা কি আমরা আসলে পেরেছি ?
প্রশ্ন নিজেদেরকেই করতে হবে!শুধু রংচঙে বাঙালি হলেই হবে না আমাদের যে একটা ঐতিহ্য আছে ,একটা অবস্থান আছে সর্বোপরি একটা বিরাট বাংলা ভাষা ভাষী জনগোষ্ঠী আছে ,এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি ।

আমরা অন্যদের কালচার সম্পর্কে জানব ,তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবো তবে সেটা এমন নয় যে, নিজেদের সংস্কৃতি বিবর্জিত করব। শুধু একদিনের মধ্যে উৎসব সীমাবদ্ধ করে রাখা কাম্য হতে পারে না ।
আমাদের মনে রাখতে হবে কোন উৎসব পালনের ক্ষেত্রে, শালীনতা বজায় রাখা, অশ্লীলতা উগ্রতা বাঙালি জাতির সাথে কোন ভাবেই সম্পর্কিত নয়। বাঙালি হচ্ছে বীরের জাতি।

মোঃ সবুর মিয়া
E-mail: sabur2050@gmail.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button