কোমল পানীয় পানে কী ঘটে শরীরে?
ঝিনাইদহের চোখঃ
একটু ভারি খাবার খাওয়া হলেই প্রয়োজন হয় ঠাণ্ডা এক গ্লাস কোমল পানীয়ের।
বাইরে কোথাও ঘুরতে বেরুলে কিংবা পছন্দের খাবারটি খাওয়ার সময়েও প্রয়োজন হয় ঝাঁজ ওঠা কোমল পানীয়ের। এমনকি পিপাসা পেলে অনেক পানি পানের পরিবর্তে কোমল পানীয় পান করে থাকে। টানা কয়েকদিন কোমল পানীয়ের ধারেকাছে না ঘেঁষলেই মনে হতে থাকে কি যেন অনেকদিন যাবত খাওয়া হয়নি, কি যেন জীবনে নেই!
একমত হতেই হবে, এমন অনুভূতি আপনারও হয়েছে। আমাদের নিত্যদিনের জীবনে এভাবেই জড়িয়ে গেছে কোমল পানীয়ের উপস্থিতি। দিন দুয়েক বাদেই চলে আসবে বর্ষবরণের দিনটি। খাবারের বিশেষ আয়োজনের মাঝে নিশ্চয় থাকবে কোমল পানীয়ও।
কিন্তু কোমল পানীয় পানের পর কী ঘটে শরীরে? জানা আছে কি? এটা প্রায় সকলেরই জানা, উচ্চমাত্রার চিনিযুক্ত কোমল পানীয় শরীরের জন্য বেশ অনেকগুলো কারণেই ক্ষতিকর। তবে অজানা রয়েছে কোমল পানীয় পানের পর কী ঘটে শরীরে!
উচ্চমাত্রার চিনি যখন বলা হচ্ছে, তখন বুঝে নিতে হবে কোমল পানীয়তে আক্ষরিক অর্থেই অনেক বেশি মাত্রায় চিনি থাকে। কোমল পানীয় পানের পর রক্তে চিনির মাত্রা হুট করেই অনেক বেড়ে যায়। অতিরিক্ত মাত্রার এই চিনির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বাড়তি শরীরের বিভিন্ন প্রত্যাঙ্গের উপরে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়।
কোমল পানীয়তে থাকা চিনি হলো কার্বোহাইড্রেট। আমাদের পেশীর শক্তি সরবরাহের জন্য কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজন হয়। তবে কোমল পানীয়ের কার্বোহাইড্রেটের মাত্রা এতো বেশি অতিরিক্ত হয় যে, তা আমাদের পেশীর প্রয়োজন হয় না। মাত্র ২০ আউন্স পরিমাণ কোমল পানীয় থেকে পুরো একবেলার খাবারের কার্বোহাইড্রেট পাওয়া যায়। ফলে পেট ভরে খাবার খাওয়ার মাঝে যখন কোমল পানীয়ও পান করা হয়, তা অতিরিক্ত হিসেবে শরীরে জমা হয়ে যায়।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/11/1554980889669.jpg
এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো মেডিসিন এর মেডিসিনের প্রফেসর ও এন্ডোক্রিনোলজিস্ট মেলটেম জেটিংলু। তিনি আরও জানান, এই বাড়তি চিনি শরীরে প্রসেস হতে পারে না বিধায় পেশী ও টিস্যুর মধ্যে ফ্যাট হিসেবে জমে থাকে। যা পরবর্তিতে লিভার ফ্যাট হিসেবে দেখা দেয়।
তবে কোমল পানীয় পানের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি। মূত্রের সাহায্যে অতিরিক্ত চিনি বের হয়ে যায়। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মূত্রের বেগ দেখা দেয়। এতে করে একাধারে যেমন কিডনির উপরে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়, তেমনিভাবে শরীরে দেখা দেয় পানিস্বল্পতার সমস্যা। এছাড়া কোমল পানীয়তেও থাক ক্যাফেইন। যা খুব একটা স্বাস্থসম্মত নয়।
আরও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো- কোমল পানীয় যতই পান করা হোক না কেন, কখনোই সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না। বিষয়টা অনেকটাই কোকেইন কিংবা হেরোইনে নেশার মতো। এমনটা হওয়া কারণ, হাই-কার্ব, হাই-ক্যালোরিতে শরীরের বাড়তি চাহিদা তৈরি হওয়া।
কোমল পানীয় অনেক বেশি পছন্দ? সেক্ষেত্রে ভালো একটি খবর আছে আপনার জন্য। কোমল পানীয় পান করা সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। মাসে একবার স্বল্প পরিমাণ পান করা যেতেই পারে। তবে নিয়মিত নয়। এছাড়া পানীয় হিসেবে ফলের জুস, আইসড টি, কোল্ড কফি এগুলোও রাখা যেতে পারে।