জানা-অজানা

এই গরমে শিশুর সঠিক যত্ন

ঝিনাইদহের চোখঃ

শিশুদের সব সময়ই যত্নের প্রয়োজন। তা হোক শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষাকাল। চারিদিকে এখন প্রচণ্ড গরম। যখন তখন বৃষ্টি আর ভ্যাপসা গরমে বড়দেরই অবস্থা যখন শোচনীয় তখন ছোটদের অবস্থা কল্পনা করাই দায়। এই গরমে প্রতিটি শিশুরই চাই বাড়তি যত্ন। নইলে যেকোনো সময় আপনার আদরের সোনামণি অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। জেনে নাও শিশুদের যত্নে কি করবেন আর কি করবেন না।

শিশুর খাদ্য:

গরমে শিশুর খাদ্য তালিকায় হালকা, পুষ্টিকর, টাটকা এবং সহজপাচ্য খাবার রাখুন। সেটা হতে পারে নরম খিচুড়ি বা সবজির স্যুপ। মাছ-মাংস দিতে পারো পরিমিত মাত্রায়।

শিশুর খাবার ঘরেই তৈরি করো। বাইরের কেনা খাবার দিবেন না। এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশ দেখা যায়। ঘরে তৈরি টাটকা খাবার শিশুকে এই ধরনের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করবে।

শিশুকে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করান। তবে খেয়াল রাখবে পানি যেন অবশ্যই যথাযথভাবে বিশুদ্ধ হয়। খুব ঠাণ্ডা বা খুব গরম দুটোই শিশুর জন্য ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে পরিমিত ঠাণ্ডা পানি পান করান।

শিশুকে মৌসুমি ফল খাওয়াতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের ফলের রসও দিতে পারেন। তবে তা বাসায় নিজে তৈরি করাই ভালো। বাজারের প্যাকেটজাত ফলের রস শিশুর দাঁতের ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া এগুলোতে দেয়া প্রিজারভেটিভ শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই বাইরের খাবার, কোমল পানীয় এমনকি ফলের রস ইত্যাদি থেকে শিশুকে দূরে রাখাই শ্রেয়।

প্যাকেটের তরল বা গুঁড়ো দুধ খাওয়ালে খুব বেশিক্ষণ আগে থেকে বানিয়ে রাখবেন না। এতে পুষ্টিগুণ নষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে।

অন্যান্য খাবার তৈরিতে এই বিষয়টি মাথায় রাখুন। বেশি আগে বানিয়ে রাখা খাবার শিশুর জন্য ভালো নয়। কেনা খাবার এড়াতে বাইরে যাবার সময় শিশুর খাবার তৈরি করে নিয়ে যান। সেক্ষেত্রে খাবার এবং পানি বহন করার জন্য ভালো মানের ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহার করতে পারো যাতে করে খাবারের মান অক্ষুন্ন থাকে।

খাবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা এই সময়টাতে খুব বেশি থাকে তাই যেকোনো সময় যেকোনো খাবার দেওয়ার আগে একবার ভালো করে দেখে নিতে ভুলবেন না যে খাবারটা আদৌ ঠিক আছে কিনা।

শিশুর বয়স যদি ছয় মাসের কম হয় তাহলে তাকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াও। মনে রাখবে ছয় মাসের কম বয়সের শিশুকে এই সময়টাতে আর কোনো কিছু দেওয়ার দরকার নেই। এমনকি পানিও নয়। শিশুকে বার বার বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। এর মাধ্যমেই শিশু তার সব প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে যাবে।

শিশুর পোশাক এবং আবাসস্থল:

শিশুর পোশাকের দিকে লক্ষ্য রাখো। শিশুকে গরমের এই দিনগুলোতে অবশ্যই সুতির নরম এবং পাতলা পোশাক পরাও।

ডিসপোজেবল ন্যাপির পরিবর্তে সুতির পাতলা কাপড়ের ন্যাপি পরানো ভালো কেননা ডিসপোজেবল ন্যাপিগুলো ঘাম এবং তাপ শোষণ করতে পারেনা; যার ফলে ঘামাচি, র‌্যাশ প্রভৃতি সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তীব্র রোদের সময়টাতে শিশুকে বাইরে বের না করাটাই উত্তম। তারপরও যদি বাইরে বের হতেই হয় তবে পাতলা কিন্তু ফুল হাতার কাপড় পরান যাতে রোদের অতিবেগুনী রশ্মি শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে না পারে।

খেয়াল রাখবে শিশুর ঘরটি যেন প্রচুর আলো-বাতাস যুক্ত হয়। এতে ঘরের আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর থাকে। স্যাঁতসেতে ঘরে শিশুকে রাখবে না।

অনেকে ঘরে এসি ব্যবহার করে থাকেন। যদি শিশুকে সবসময় এসিতে রাখেন তবে অবশ্যই তাকে একটু মোটা কাপড় পরাবেন। কারণ শিশুরা খুব দ্রুত ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হয়। এছাড়া গোসলের পর পর শরীর এবং মাথার চুল পুরোপুরি না শুকানোর আগে শিশুকে এসিতে আনবেন না। আবার শিশু যদি অনেকসময় ধরে এসিতে থাকে তবে তাকে এসির বাইরে নেওয়ার আগে ঘরের এসিটি বন্ধ করুন। ঘরের তাপমাত্রা এতে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হবে এবং শিশু ধীরে ধীরে তা সহ্য করে নেবে যার ফলে হঠাৎ করে গরম লেগে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

ফ্যানের সামনে শিশুকে এমন স্থানে রেখবেন না যাতে করে সরাসরি ফ্যানের বাতাস শিশুর গায়ে লাগে। সরাসরি অনেকসময় ধরে বাতাস লাগার ফলে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button