ঝিনাইদহ নার্সিং ইনিষ্টটিউটের ভর্তি বাণিজ্যে দুর্নীতি
সাহিদুল এনাম পল্লব, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ নার্সিং ইনিষ্টটিউটের সদ্য অবসর প্রাপ্ত ইনচার্জ মোছাঃ আলেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে ব্যপাক অর্থ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে বিনা রশিদে অর্থ আদায় করে ভাগ বাটরা করে নেওয়া হয় বছরের পর বছর। এমন একটি অভিযোগের ভিত্তিতে ঝিনাইদহ নার্সিং ইনিষ্টটিউটে সরেজমিনে গেলে বেরিয়ে আসে এই অর্থ দুর্নীতির অভিনব খবর।
এই প্রতিষ্ঠানে নেই অর্থ আদায়ের কোন নিয়ম নীতি বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠান প্রধান বিনা রশিদে প্রশিক্ষনাথীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করে থাকে। নার্সিং ইনিষ্টটিউটে প্রশিক্ষক নিতে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় যে চলতি বছরে ৭৫ জন ভর্তি শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে জন প্রতি ১৪ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অফিস সহকারী হুমায়নের নিকট এই বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায় যে ৬৮১০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
হিসাব করে দেখা গেছে যে শুধু ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের অতিরিক্ত ৯ লক্ষ্য ৫১ হাজার টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়েছে কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
উল্লেখ মোছা. আলেয়া খাতুন ২৪/০৮/২০১১ সাল থেকে ১০/০৩/ ২০১৯ সাল পযুন্ত ঝিনাইদহ নার্সিং ইনিষ্টটিউটের ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছে।
গত ০১/০২/২০১৮ তারিখের বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব কর্তৃক প্রেরীত পত্র অনুযায়ী ভর্তি ফি-১০০টাকা, মাসিক বেতন ১০টাকা, পরীক্ষার ফি সেমিষ্টার প্রতি ৫০০ টাকা, সনদ ও নম্বরপত্র ফি ৮০০ টাকা, পরিচয়পত্র বর্ষ প্রতি- ১০০টাকা, জাতীয় দিবস পালন-৬০০ টাকা, লাইব্রেরী ফিস ৬০০ টাকা, ল্যাব চার্য বর্ষ প্রতি ৩০০ টাকা। তিন বছরের জন্য সর্ব সাকুল্যে মোট অফেরতযোগ্য ৬৪১০ টাকা প্রদান করার কথা সার্কুলারে উল্যেখ আছে।
তারপরেও প্রতি ছাত্রীর নিকট থেকে ১৪,৫০০ টাকা মোট নেওয়া হয়েছে যাহা ছাত্রী প্রতি ৮০৯০ টাকা বেশী। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ৭৫ জন ছাত্রীদের নিকট থেকে ৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৭৫০ টাকার পরিবর্তে গ্রহণ করা হয়েছে ১০,৮৭,৫০০ টাকা। শিক্ষাবর্ষ প্রতি মোট অতিরিক্ত গ্রহণ ৬,৬৭,৫০০ টাকা। এছাড়াও প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে দুই মাসের খাওয়া বাবদ অগ্রিম ২৪০০ টাকা জমা দিতে হয় যা বৃত্তির অর্থ আসলে ফেরত দেওয়ার কথা থাকে কিন্তু এই ২৪০০ টাকা আর ফেরত দেয় না। ৭৫ জনের নিকট থেকে ফেরত যোগ্য দুই মাসের খাওয়া বাবদ অগ্রিম জমাকৃত মোট ১,৮০,০০০ টাকা, জন প্রতি ২ সেট পোষাক বাবদ ৩১০০ টাকা করে গ্রহণ করা হয় যার বাজার মূল্য (৩৫০+৫৫০) ৯০০ টাকা হয়।
সেখানে প্রতি ছাত্রীর নিকট থেকে অতিরিক্ত ২২ টাকা করে পোষাক বাবদ ১,৬৫,০০০ টাকা বেশী নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ প্রত্যেক শিক্ষাবর্ষে ৩ ভাবে মোট দূর্নীতির পরিমান ১০১২৫০০ টাকা। তাছাড়া অন্য এর আগে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের নিকট থেকে বিনা রশিদে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে যে ঝিনাইদহ শহরে এস আর গার্মেন্টস এর সাথে চুক্তি মোতাবেক ২ সেট পোশাকের মুল্য ৯ শত টাকা হলেও ছাত্রীদের নিকট থেকে ৩১ শত টাকা নিয়ে পরে বাকি টাকা অফিস সহকারী হুমায়নের মাধ্যমে আলেয়ার নিকট ফেরত পাঠান হয়।
উল্লেখ্য নার্সিং ইনিষ্টটিউট, ঝিনাইদহ প্রত্যেক বছর ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারিতে ২৫ জন এবং ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এন্ড মিডওয়াইফারিতে ৫০ জন মোট ৭৫ জনের ৩ বছর মেয়াদি কের্সে প্রশিক্ষনার্থী ভর্তি করে থাকে।
এই প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ক্যাশিয়ার তানিয়ার সাথে মোবাইলে কথা বললে সে জানায়, সে চিঠিতে যা উল্লেখ আছে তাই নিয়েছে। তবে কত টাকা নেওয়ার কথা আছে তা জানতে চাইলে সে কিছুই বলে না। যেহেতু রশিদ দেওয়ার নির্দেশ নেই তাই রশিদ দেই নি।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ নার্সিং ইনিষ্টটিউট এর বর্তমান ইনচার্জ বেলারাণী শাহা জানায়, আমি সবে মাত্র ১১/০৩/২০১৯ তারিখ থেকে দায়িত্ব নিয়েছি। এই সকল বিষয়ে আলেয়া আপা জানে আমি জানি না। তবে বেলা রানী সাহা জানায় যে ছাত্রীদের ২৪০০ টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ নার্সিং ইনিষ্টটিউটের সদ্য অবসর প্রাপ্ত ইনচার্জ মোছাঃ আলেয়া খাতুনের সাথে কথা বললে বলেন, আমারা ভর্তি হতে ৬৮১০ টাকা নিয়েছি। রশিদ দেওয়ার কোন নিয়ম চালু নেই তাই আমরা রশিদ দেইনি। আরও বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে যে আমি পরে আপনার সাথে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেন।
এই প্রসঙ্গে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডাঃ আযুব আলী বলেন, নার্সিং ইনিষ্টটিউটের সম্পর্কে কিছুই বলতে পারব না। তাদের সকল ব্যপার তারাই দেখাশোনা করে থাকে।
ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডাঃ সেলিনা বেগম বলে যে নার্সিং ইনিষ্টটিউটের কোন ব্যপারে আমার দেখার দায়িত্ব নেই। দায়িত্ব হাসপাতালের তত্ববধায়কের উপর। আমি কিছুই তাদের সম্পর্কে জানি না।