সন্তানের জন্য ঝিনাইদহে এক মায়ের ৪৪ বছর রোজা

মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর গ্রামের সখিরন নেছা ওরফে ভেজা (৭৫) দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর রোজা রাখছেন। শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মের বিধান মতে বছরে কয়েকটি রোজা ছাড়া দীর্ঘ দিন রোজা রেখে চলেছে। বড় ছেলে ্শহিদুল ইসলাম হারিয়ে যাবার পর, খোঁজাখুজির প্রায় দেড় মাস পর তিনি নিয়ত করেন ছেলেকে ফিরে পেলে, যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিনই রোজ রাখবেন। সেই থেকে অদ্যবদি রোজা রেখে চলেছেন। তবে এখন বয়স বেড়েছে, জটিল এবং কঠিন রোগের কারনে আর কতটা দিন রোজা রাখতে পারবেন ভাবিয়ে তুলছেন তাকে।

গ্রামবাসি জানান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের বাজার গোপালপুর গ্রামের মৃত আবুল খায়েরের স্ত্রী সখিরন নেছা ওরফে ভেজা। তার ৩ ছেলে এবং ৩ মেয়ে। তারা হল- আবেদা খাতুন, শহিদুল ইসলাম, আরজিনা খাতুন, কদবানু খাতুন, মাসুদ রানা এবং শশিয়ার রহমান। ছেলে মেয়ের বিবাহিত। প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা সংসার ছেলে মেয়ে রয়েছে। শহিদুল ইসলাম ছেলেদের মধ্যে বড়।
সখিরন নেছা জানান, ১৯৭৫ সাল তখন বড় ছেলে শহিদুল ইসলামে বয়স ১১/ ১২ বছর হবে। শহিদ একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর নিয়েও পাওয়া যায়নি। তাকে না পেয়ে পরবর্তিতে বিভিন্ন গ্রামের মসজিদ এবং দরগায় খানা করা হয়। এমনি ভাবে ১৩/১৪ টি স্থানে খানা করা হয়। তখন মানুষের খুব অভাব চলছিল, ধারনা করা হচ্ছিল হয়তো কোন জায়গায় খাবার না পেয়ে মসজিদ বা দরগায় খানা খেতে আসবে। কিন্ত কোন লাভ হল না। এক পর্যায়ে পরিবারের লোকজন তাকে জীবিত পাবার আশা ছেড়েই দিয়ে ছিল।
তিনি আরো জানান, পরিবারের লোক জনের ছাড়াই আমি একাএকা ছেলেকে খুঁজে বেড়াতাম। প্রায় দেড় মাস পর, রমজান মাস আসলো। রোজা থাকা অবস্থায় একদিন সন্ধার পূর্বে গ্রামের কাজী পাড়া জামে মসজিদের নিকট ছেলেকে খুঁজতে গেলাম। না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়িতে ফির ছিলাম। মসজিদের নিকট আসতেই, মসজিদে হাত দিয়ে, মসজিদকে স্বাক্ষী রেখে ছেলেকে ফিরে পেলে যতদিন জীবিত থাকবো রোজা বাখবো বলে ওয়াদা করি। বাড়িতে ফিরে দেখতে পাই ছেলে শহিদ বাড়িতে ফিরে এসেছে। প্রতিবেশি এবং পরিবারের লোকজন আমকে ছেলে ফিরে এসেছে খবর দিতে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেই থেকে দীর্ঘদিন রোজা রেখা। রোজা রাখতে কোন কষ্ঠ নেই তার। তবে এখন বয়স বেড়েছে, জটিল এবং কঠিন রোগের কারনে আর কতটা দিন রোজা রাখতে পারবেন ভাবিয়ে তুলছেন তাকে।
বাজার গোপালপুর গ্রামের মাসুম শেখ জানান, আমার বুদ্ধি জ্ঞান হবার পর থেকেই দেখছি সখিরন নেছা ওরফে ভোজা (বুবু) রোজা রাখছেন। শত অভাব অনটনের মধ্যে, পরের বাড়িতে কাজকর্ম করে ছেলে মেয়েদের বড় করেছে। দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর মুসলামান ধর্মের বিধান মেনে, বড় ছেলে শহিদুল হারিয়ে যাবার পর ফিরে পেয়ে রোজা রাখছেন।
তিনি আরো বলেন, মা তো মা-ই। মায়ের তো কারো সাথে তুলনা হয়না। তবে ভেজা ছেলের জন্য যে এত বড় সিন্ধান্ত নিয়েছে, তা একমাত্র মা বলেই সম্ভব হচ্ছে। তার মত আর মা আছে বলে আমার জানা নেই।
সখিরন নেছার ছেলে শহদিুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক মা’ই তার সন্তানদের ভালো বাসেন। তবে আমার মা আমার জন্য সারা জীরন রোজা রাখবেন বলে যে সিন্ধান্ত নিয়ে পালন করছেন পৃথিবীতে এমন মা আছে বলে আমার জানা নেই। আমি মনে করি আমার মা’ই শ্রেষ্ঠ।
এ বিষয়ে মধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জুয়েল জানান, আমার ইউনিয়নের এক মা তার সন্তানের জন্য সারা জীবন রোজা রাখান যে সিন্ধান্ত নিয়েছে তা বিরল। তিনি দীর্ঘ প্রায় ৪৪ বছর রোজা রেখে চলেছেন। প্রত্যেক মা’ই তার সন্তানকে ভালো বাসেন। তবে সখিরন নেছার মত এমন মা আছে বলে আমার জানা নেই।
তিনি আরো জানান, এই দরিদ্র্য মায়ের জন্য আমি তেমন কিছুই করতে পারেনি। আমার পরিষদের পক্ষ থেকে একটি বয়স্ক ভাতা’র কার্ডসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা ছাড়াও তিনি আমার কাছে কোন সমস্য নিয়ে আসলে গুরুত্বসহ দেখি এবং ব্যাক্তিগত ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।