দিনের বেলার একটু ঘুম যেভাবে আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে
ঝিনাইদহের চোখঃ
দিনের বেলার একুটখানি ঘুম দিতে পারে নতুন করে কাজের প্রাণশক্তি। গবেষণা বলছে নিয়মিত ২০ মিনিটের ন্যাপ ভবিষ্যতে আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দিতে পারে। গ্রীসের একটি হাসপাতালের গবেষণা অনুসারে হেড ডাউন করে অর্থাৎ মাথা ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারলে ব্লাড প্রেশার বা রক্তচাপ কমে। বিবিসি
য়স্ক মানুষদের কথা মাথায় রেখে এই গবেষণা চালানো হয়েছে, কিন্তু দিনের কোন একটি সময় চোখ বন্ধ করে ঝটিকা একটু ঘুমিয়ে নিতে পারলে উপকার পাবে যে কোন বয়সী মানুষ। যিনি এই গবেষণায় কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছেন সেই কার্ডিওলজিস্ট মানোলিস কালিস্ট্রাটোস বলেন, দিনের বেলার অল্প সময়ের ঘুম সহজেই নিয়ে নেয়া যায় এবং সাধারণত সেজন্য কিছু খরচ করতে হয় না।
আমাদের গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বলতে পারি, যদি কেউ দিনের বেলা ঘুমানোর বিলাসিতাটুকু নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে পারে তবে এটি উচ্চ রক্তচাপের জন্য উপকার করবে। তার এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনের বেলা ২০ মিনিটের ঘুম গড়ে যে পরিমাণ রক্তচাপ কমিয়ে দিতে পারে তা ঠিক যেভাবে স্বল্প মাত্রার ওষুধ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে থাকে।
সুতরাং আমোদের সবারই সম্ভবত দিনের বেলা কোন একসময় ভালোমতো একটু ঘুমিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কিন্তু কখন ঘুমাতে হবে?
দুপুরের পরপর যে একটা ঝিমুনি ভাব হয় সেটি মধ্যাহ্নভোজনে উদরপূর্তি খাবারের জন্য সেটাই নয়, এই অবস্থার নাম ‘আফটারনুন লুল’ যা আমাদের ডিএনএতে প্রবাহিত। দ্য স্লিপ স্কুলে ক্লিনিকাল ডিরেক্টর ডক্টর গাই মিডোস বলেন, এটি আসলে ঘটে কারণ, শরীরের যেখান থেকে সতর্ক সংকেত আসে সেখানে ছোট্ট একটা ডুব দিতে পারছেন, অভ্যন্তরীণ দেহ-ঘড়ি যা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে এবং জাগিয়ে তোলে সেখান থেকে আপনি ‘সতর্কতা সংকেত’ পান”।
তিনি বলেন, মানুষ হাজার হাজার বছর আগে মধ্য-দুপুরে বিশ্রাম নিত এবং সেই আচরণ আমাদের সারকাডিয়ান রিদম বা ছন্দে ফুটে ওঠে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত যেভাবে কাজ করে চলেছে মানুষের শরীর, শরীরের সেই নিয়মমাফিক চলাকেই সারকাডিয়ান রিদম বা স্পন্দন বলে যা মানবদেহের সুস্থতার চাবিকাঠি। তিনি বলেন, “আপনার সারকাডিয়ান রিদম হচ্ছে আপনার ২৪ ঘণ্টার দেহ-ঘড়ি। যখন আপনি কাজে থাকুন বা স্কুলে থাকুন সবসময়ই আপনার সুইচ চালু থাকে। কিন্তু যখনই আপনি ন্যাপ নিচ্ছেন তখন আপনি অন্যদিকে সুইচ চালু করলেন এবং সেটা বিশ্রাম ও পরিপাক মুডে চলে এলো। মিটার মিডোস বলেন, যদি আপনি বাড়ির ভেতর সারাদিন থাকেন তবে ঘুমিয়ে নেয়ার জন্য দারুণ ব্যাপার। কিন্তু যদি আপনি থাকেন সহকর্মীদের ভিড়ের মধ্যে তাহলে? নিশ্চিতভাবেই তখন বিষয়টি খুব সহজ নয়। কিন্তু এরই মাঝে একটু নিরিবিলি জায়গা খুঁজে বিশ্রাম নিতে পারলে সেটা যতটা শারীরিক সুফল এনে দেবে তা আপনার কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি।
চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকা সত্যিই উপকারী হতে পারে” বলছেন ডঃ গাই । তার বক্তব্য যেকোনভাবেই হোক দিনের বেলার এই ঘুম জরুরি। হয়তো আপনি একটি ছোট কক্ষে গিয়ে সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারেন কিংবা পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে অর্থাৎ সেরকম কোন কক্ষ না পাওয়া গেলে আপনি বাথরুমেই চলে যেতে পারেন এবং সেখানে গিরে বসে থাকতে পারেন ১০ মিনিটের জন্য।
গ্রীষ্মের সময় কাছাকাছি কোনও পার্কে গিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকা যেতে পারে। তবে হ্যাঁ একেবারে ঘুমিয়ে গেলে চলবে না। অবশ্যই অ্যালার্ম সেট করে রাখতে হবে যাতে করে আবার যথাসমযয়ে নিশ্চিন্তে কাজ-কর্মে ফেরা যায়। ঘুম থেকে জেগে উঠতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে যাতে তরতাজা মেজাজে আবার কাজে ফিরতে সুবিধে হয়। ড: গাই বলেন, আমরা যখন হালকা ঘুমে থাকি তখন আমরা বুঝতে পারিনা যে ঘুমিয়ে আছি না নেই। এটাকে বিশ্রামের একটা সুযোগ হিসেবে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি আপনি যদি না-ও ঘুমান তা-ও আপনি উপকৃত হবেন। কিন্তু ন্যাপ দীর্ঘ সময়ের জন্য নেয়া যাবে না। ন্যাপ লম্বা সময়ের জন্য নয়
এই গবেষক বলেন, বিকেলের দিকে ১০ থেকে ২০ মিনিটের পরিপূর্ণ ঘুম পরিমাণে যথেষ্ট। তিনি বলেন এটা নিভর্র করে কার জন্য কোনটি সঠিক সেটা খুঁজে দেখা এবং পরীক্ষা করা। তবে যতটুকু দরকার সেটুকু ঘুমাতে হবে যাতে মনমরা না হয়ে আরও তরতাজা প্রাণশক্তি নিয়ে আবারও কাজে মনোনিবেশ করা যায়। তবে ২০ মিনিটের বেশি ঘুম হলে সেটাকে মনে করা হবে আপনি গভীর ঘুমে চলে গেছেন, যার ফলে হয়তো জেগে উঠতে কষ্ট হবে। আর এটা আরও খারাপ ডরনের অনুভ‚তি দিতে পারে-সতর্ক করেন এই গবেষক। যারা নতুন নতুন ন্যাপ নিতে শুরু করেছেন তাদের মোবাইল ফোনে বা ঘড়িতে অ্যালার্ম সেট করে রাখতে হবে। কিন্তু কয়েক মাস পরে নিজেরাই নির্দিষ্ট এবং কাঙিক্ষত সময়ে ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারবেন । ডক্টর গাই বলেন, রাতে আট ঘণ্টা ঘুমানোর বহুল আলোচিত ধারনা অনুসারে ‘স্লিপ ড্রাইভ’ গড়ে তোলার জন্য আমাদের ১৬ ঘণ্টা জেগে থাকার প্রয়োজন হয়। যখন রাত ১০টা-১১টা বাজে আপনি ঘমঘুম অনুভব করবেন। এটা অনেকটা সম্মোহনী অনুভ‚তি। এর কারণ আপনার স্লিপ ড্রাইভ।
ঘুম ঘুম ভাব হলে অনেকেই তখন চা বা কফির দিকে হাত বাড়ান। ক্যাফেইন কাজ করে ভিন্ন উপায়ে। এটি আপনার মস্তিষ্কের কিছু অংশে যেখানে আপনার স্লিপ ড্রাইভের জন্য দায়ী রাসায়নিকগুলি থাকে সেখানে মস্তিষ্কের কিছু অংশের বন্ধন তৈরি করে বলেন গবেষক।
নিশ্চিতভাবে এটি সামযয়িক ভাবে কার্যকর কিন্তু মধ্যবেলায় পান করা এক কাপ কফির ক্যাফেইনের উপস্থিতি আপনার শরীরে বহাল থাকবে ১২ ঘণ্টা পরেও। তো সারাটি দিন কাজের ফাকে সুস্থ থাকতে একটুখানি ঘুমিয়ে নিন। ঝটিকা ঘুম কেবল একজন মানুষের মুড বা মেজাজকে চাঙ্গা করে তা-ই নয়, বরং তার চেয়েও আরও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখে। নতুন এক গবেষণা বলছে, এটি হয়তো আপনাকে আরও বেশি দিন বাঁচতে সাহায্য করবে।