ধর্ম ও জীবন

Your photo is uploading

ঝিনাইদহের চোখঃ

নীল পাড়ের নতুন শাড়িটা কিনেছিলাম, কাভার পিকচার দিব বলে, মেকাপ টিউটোরিয়াল দেখে সাজতে সাজতে এখন এক্সপার্ট হয়ে গেছি, বেশি সাজলামও না, একটু ইফেক্ট দেয়াতেই ছবিটা এট্রাক্টিভ হয়ে গেল… Your photo is uploading হ্যা, ফেসবুকে ছবিটা আপলোড হওয়ার পরই মা খেতে ডাকলো.. ওয়াশরুমে গেলাম মেকাপ তুলতে। ক্লিঞ্জারটা বিউটি স্পঞ্জে লাগানোর সময়ই মৃত্যুর ফেরেশতার সাথে আমার সাক্ষাত হয়ে গেল ! সে আমাকে একটা মিনিটও টাইম দিলো না সবকিছুর জন্য তওবা করার ! একটু আগে সেলফিটা আপলোড করে আসলাম না? আল্লাহ !! এখন কে করবে আমার ওই ছবি গুলো ডিলেট? আশ্চর্য! আমাকে ৪জন ফেরেশতা মারছে কেন?

আমার মুখে আঘাত করছে, পিছনেও আঘাত করছে!! ফেইল করলেও তো আমার বাবা মা কোনদিন আমাকে মারে নি? আর আমি তো ছোটবেলা থেকে ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়েছিলাম, প্রেম করিনি, কই ২-১ জন ছাড়া ছেলে ফ্রেন্ডও ছিল না, ভার্সিটিতে প্রায়ই হিজাব পরে যেতাম, রমজানে রোজাও রাখতাম! আমি একটা ভদ্র মেয়ে ছিলাম আমার ক্যাম্পাসের!! ওহ মনে পড়েছে মাঝে মাঝে ঘুরত্ব গেলে একটু ছবি আপলোড করে ফলোয়ার বানিয়ে রাখা ছেলেদের চোখকে শান্তি দিতাম। এজন্য এসব হবে? আমাকে কেন বলছে এই ফেরেশতা? ‘হে খবিশ দেহের মধ্যে থাকা খবিশ রুহ, বের হও, তৈরি হয়ে যাও ভয়ানক শাস্তির জন্য, উত্তপ্ত পানির জন্য, কাটাযুক্ত বিষাক্ত বস্তুর জন্য, সব ভয়ানক শাস্তির জন্য ‘ আমাকে এটা কেন বলা হলো? আমি বলছি তো, আমাকে একটু সময় দিন, আমি ঠিক হয়ে যাব, এবার আমি প্রকৃত মুমিন বান্দার মত আচরণ করব!

আমার আত্মাটা বের হতে চাচ্ছে না। কারণ আমি মরতে একদমই প্রস্তুত নই, আমি ভয় পাচ্ছি.. আমার ফেরেশতারা আমার রুহটা টেনে নিচ্ছে , প্রত্যেকটি রগে যেন আমার রুহ আটকে আছে, প্রত্যেকটি রগ, মাংস কেটে কেটে রুহটাকে বের করে ফেলছে তারা.. আমি আর সহ্য করতে পারলাম না, বাঁচতে পারলাম না আমার পুরো অস্তিত্ব ভেঙ্গে গেল। এই কষ্ট সারা দুনিয়ার সব কষ্টের থেকে বড় ছিল, অথচ আমি ভয় পাইনি এই কষ্টকে, একে ভোগ করার আগে। আমার রুহ বের করে ফেলেছে, আমাকে নিয়ে আসমানে চলা শুরু করেছে – আসমানের দরজার ওপাশের ফেরেশতারা জিজ্ঞেস করলো – “এটা কে?” তারা উত্তর দেয় – “এ হচ্ছে এর সন্তান” তখন আসমানের দরজা খোলা হলো না, আসমানের ফেরশতারা বললো – “এটা তো সেই খবিশ রুহ যেটা খবিশ দেহের মধ্যে ছিল।

এটা তো ওই হতভাগ্য রুহ, যেটা হতভাগ্য দেহের মধ্যে ছিল। এর জন্য আসমানের দরজা খোলা যাবে না একে ফেরত পাঠাও” আমার জন্যে আসমানের দরজা খোলা হলো না, জান্নাতের দরজা খোলা হলো না, আমাকে নিয়ে তারা এখন সেখান থেকে আল্লাহর তৈরি কারাগার ‘সিজ্জিনে’ নিয়ে আসলো! এখানেই আমার রুহকে বন্দী রাখা হবে যতক্ষণ না কিয়ামত কায়েম হবে আমাকে ততদিন আযাব দেয়া হবে! আমার কোন জ্ঞান ছিল না এই কারাগারের আযাব সম্পর্কে!! আমার এত সুন্দর পোজ মেরে তোলা পিক আমাকে কবরেও জাহান্নামের আগুন আর শাস্তি দিবে! কেউ যদি আমার আইডিটা নষ্ট করে দিত আল্লাহ! আমি তো যত গা শুনেছিলাম, তার সাক্ষীও স্ট্যাটাস দিয়ে রেখে এসেছি…! আমার শেয়ার দেখে তনু না সেদিন ওই নতুন গানটা নামালো?

আমি তো সুবাহ’কে আমার মৃত্যুর ৩দিন আগেও মুভি দিয়ে এসেছিলাম, ও কি আরো অনেককে মুভিটা দিলো? আমার আযাব থামছে না কেন? আমার তুলে দেয়া গ্রুপ পিক সবাই ফেসবুকে আপলোড করেছে, এজন্যও আমারও আযাব হবে? ইশ আমি তো পিকটায় ছিলাম ও না.. শখ করে নবীনবরণ প্রোগ্রামে গান গেয়েছিলাম ওটাও তো ইউটিউবে আপলোড করেছে বড় ভাইয়ারা, সব ছেলেগুলো রেকর্ড করেছিল আমার আযাব কি থামবে না ওদের জন্য? দোষ তো আমারই, আমিই গুনাহে জারিয়া রেখে আজ কবরে আসলাম। বেশিরভাগ ফ্রেন্ডই তো আমাকে সাহায্য করেছে আজকে সাপের কামড়গুলো খাওয়ার জন্য.. মারইয়াম ছাড়া তো কেউ বলেনি দোস্ত, ভালো করে হিজাব কর, এভাবে সেজে গুজে বেড়াস না, এই সৌন্দর্য আল্লাহর দেয়া গিফট, তোর কাছে এটা আমানত।

অপাত্রে খরচ করিস না দোস্ত.. আমি না বায়ো দিয়ে রেখেছিলাম- ‘আই এম প্রাউড টু বি আ মুসলিম’ আমি জানতাম না মুসলিম মানে আত্মসমর্পণকারী! মুসলিম শব্দের অর্থ তো আমি বুঝিনি কখনোই সেই হলো মুসলিম যে তার রূপকে বেগানা ছেলেদের সামনে দেখানোর মেয়েলি স্বভাবজাত ইচ্ছাটাকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে! এখন আমার কবরে এমন সব ফেরেশতারা আমার মাথায় বাড়ি দিতে থাকবে, সারা শরীরে মারতে থাকবে যারা বধির ও অন্ধ! আমি এত চিল্লাচ্ছি, এরা কেউ আমার চিৎকার শুনছে না, কোন মানুষ ও শুনছে না, জ্বীনও শুনছে না! শুধু সমগ্রজগতের জীবেরা শুনবে আমার চিৎকার আর আল্লাহর আযাবের ভয়ে কাঁপতে থাকবে.. কি লাভ? যাদের শোনা এখন উচিত ছিল তাদের কারো কানে যাবে না এই চিৎকার, কেউই শুধরাবে না।

শুধু প্ল্যান করবে আমারই মত “আমি একদিজ ঠিকই ভালো হয়ে যাব” মারইয়াম যেদিন বলেছিল ফেসবুক থেকে পিকগুলো ডিলেট করতে, সত্যিইই আমি ওয়াদা করেছিলাম আমি কিছুদিন পরই পর্দা করব, আমি আর কিছুদিন সময় পেলেই ভালো হয়ে যেতাম, আমি সময় পেলাম না! সত্যিই কি সময় পাইনি? নাকি আল্লাহর কাছে ফিরে আসা, তওবা করাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আরো কিছুদিন পাপের মধ্যে ডুবে থাকার দুঃসাহস করেছি! কেন আমি সেদিন আল্লাহর অবাধ্যতা করতে করতেই আরেকটা দিন ‘বেশি’ বাঁচার মত রিস্ক নিয়েছিলাম? কেন?? হাদিসে ছিল, তোমরা যদি মৃতের কবরের আযাবের চিৎকার শুনতে তোমরা কোনদিন কাউকে দাফন দিতে না লাশ ফেলে পালাতে আফসোস আমি জানতাম না আমি মুসলিম হয়েও কবরে শান্তি পেলাম না! আমার ছবিগুলো আমাকে শান্তি দিলো না! সত্যি আমি পাল্টাতে চেয়েছিলাম, আমি সত্যি বলছি, তোমরা থামো, আমি সত্যিই পাল্টামতাম। ______

প্রত্যেকটা দিন তোমার জন্য নতুন একটা সুযোগ, তওবার দরজা খোলা আছে ২৪ঘণ্টা.. আল্লাহর ওয়াস্তে কবিরা গুনাহ গুলো ধুয়ে আসো এক মিনিটের তওবাতে.. প্রতিজ্ঞা করে আসো আর বেপর্দা হবে না, প্রোফাইল পিকচার, আর কাভার পিকচার দেয়ার জন্য এই সৌন্দর্য না। রাস্তার হাজারটা লোককে দেখিয়ে বেড়ানোর জন্য এই সৌন্দর্য না। আল্লাহকে সিজদা করার জন্য এই সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্য তোমার স্বামীর জন্য। তুমি যেভাবে সৌন্দর্য প্রকাশ করে সুখ খুঁজছো তা আল্লাহর অবাধ্যতা, এতে কোন উপকার নেই, ছিলও না আল্লাহ জানতেন এটা আরও কত মেয়ের স্বামীকে নষ্ট করত.. কত ফিতনা হত দুনিয়ার জমিনে। আমার মত হয়ো না বোন….

কাল সকালটা হয়ত তোমার নাও দেখা হতে পারে। cltd # কি বলো এবার?পিক সরিয়ে দিবে তো? এই পোস্টে যদি কোনো বোনের জীবন পালটে গিয়ে দ্বীনের সুন্দর সুগন্ধে ভরে যায় তাতেই সার্থকতা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button