ঝিনাইদহের শিশু আবির বিরল রোগে ধুঁকছে

আরিফ মোল্ল্যা, ঝিনাইদহের চোখঃ
মানুষ দেখলেই মুখের দিকে ফ্যালফেলিয়ে চেয়ে থাকে সাড়ে তিন বছরের শিশু আবির। এটা যেন তার বেঁচে থাকার আকুতি। অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে তার শরীর অস্থি চর্মিসার। দুর থেকে দেখে মনে হয় একটি কঙ্কাল।
কথা বলা তো দুরের কথা নিজের হাত-পা পর্যন্ত নাড়াতে পারে না সে। এমন অসুস্থ শিশুটিকে তার বাবা মা কোন খোঁজ খবর নেয় না। নানা -নানিই তার একমাত্র জায়গা। নানা লিয়াকত আলী পেশায় একজন দিনমজুর। ফলে সারাদিন নানি মঞ্জুরাকেই আবিরের দেখভালের দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিনি যখন কাজে থাকেন অসুস্থ আবিরকে যেভাবে শুইয়ে রাখা হয় বিছানায় সেভাবেই শুয়ে থাকে। কিছুক্ষন পর পর তাকে অন্য কাথি করে শুয়াতে হয়। এভাবে দারিদ্রতার কারনে এখন প্রায় বিনা চিকিৎসায় নানা বাড়িতে পড়ে আছে শিশু আবির। সে যশোরের সাতমাইল এলাকার বেলেডাঙ্গা গ্রামের আলামিন হোসেনের ছেলে। বাবা মা নিজ সন্তানের খোঁজ খবর না নেওয়ায় নানা বাড়ি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের পৌর এলাকার কাশিপুর গ্রামই তার এখন একমাত্র ঠিকানা।
আবিরের নানা লিয়াকত আলী জানান, তিনি অত্যন্ত গরীব মানুষ। বসতভিটের দেড় শতক ছাড়া নিজের কোন জায়গা জমি নেই। পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করে সংসার চালান। তার কোন ছেলে সন্তান নেই। ৪ টি মেয়ে রোজিনা, স্বপ্না , রতœা, রুনা সকলকে বিয়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে আবিরের মা রতœা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন যশোরের বেলেডাঙ্গা গ্রামের রাজমিস্ত্রি আলামিনের সাথে। বিয়ের ১ বছর পরে আবির জন্ম গ্রহন করে। তখন প্রায় সময়ই জামাই-মেয়ে তার বাড়িতে থাকতো। এ সময়ে নানা নানি ভেবেছিল নিজেদের ছেলে নেই তাই নাতিকে লালন পালন করতে পারলে সে বৃদ্ধ বয়সে তাদের দেখাশুনা করতে পারবে। তাই আবিরের জন্মের ৮ মাস পরেই তারা নিজের বাড়িতে সন্তানের মত লালন পালন শুরু করেন।
কিছুদিন পরে জামাই বাড়িতে নিয়ে তাকে টিকা দেয়া হলে প্রচন্ড জ্বরের সাথে খিঁচনী হয় তার। এক পর্যায়ে আবির প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে ডাক্তার দেখানো হলেও আর সুস্থ হয়নি। ক্রমেই সে দুর্বল হয়ে পড়ছে। বর্তমানে তার হাত পা গুলো সরু হতে হতে কঞ্চির মত হয়ে গেছে। একটু দুর থেকে তাকে দেখলে মনে হয় মানুষের কঙ্কাল পড়ে আছে। তিনি জানান পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করে যে পয়সা আয় হয় তা দিয়ে সংসারের খরচ মেটানোও কষ্ট হয়ে যায়। এরপরও নাতি আবিরের জন্য দুধ ও ঔষধ কিনতে হয়। অনেক সময় পয়সার অভাবে নিজেদের খাবার না কিনে আবিরের ব্যবস্থা করা লাগে।
আবিরের নানি মঞ্জুরা বেগম জানান, জন্মের আট মাসের পর আবিরকে জামাই বাড়িতে নিয়ে টিকা দেয়া হলে তার জ্বর হয়। এরপর সে অসুস্থ হয়ে গেলে ছোটবেলা থেকেই আবির এখানে থাকে। অসুস্থতায় সারাক্ষন তার পেছনে সময় দিতেই সময় চলে যায়। অভাবের সংসারে অসুস্থ নাতিকে দেখাশুনা চিকিৎসা করাতে গিয়ে তারা প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, আবিরের দেড় বছর বয়সী আপন নামের আরেকটি ভাই আছে। সে তার বাবা মায়ের আদরে মানুষ হচ্ছে। কিন্ত অসুস্থ আবিরের জন্য তার বাবা মা কিছুই করে না। কিন্ত মায়ার জালে আটকে আমরা আবিরকে ফেলে দিতে পারছিনা।
কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম হোসেন জানান, টানাটানির সংসারেও আবিরের চিকিৎসায় তার নানা নানি সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অসুস্থ শিশুটিকে মা-বাবা না দেখলেও তার নানা নানি যেভাবে কষ্ট করে যাচ্ছে এটা আসলেও বিরল ঘটনা। অসহায় এ শিশুটির জন্য তিনি সামর্থবান মানুষদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ডাঃ আলতাফ হোসেন (প্রাক্তন অধ্যক্ষ ম্যাটস বাগেরহাট) বলেন, শিশুদের টিকা দেয়া হয় বিভিন্ন রোগ প্রতিষেধকের জন্য। টিকা দেয়ার কারনে শিশু আবিরের এমন হয়েছে কথাটি অভিভাবকেরা ঠিক বলেনি। কারন টিকাগুলো অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত। তিনি বলেন, শিশুটির শরীরের পরিক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে কেন এমনটি হচ্ছে।