ঝিনাইদহসহ ৫ জেলায় ৩৫০ কোটি টাকা লোকসান: তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ
ঝিনাইদহের চোখঃ
সরকারকে আর্থিক লোকসানের মুখে ফেলার দায়ে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সাবেক তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পেট্রোবাংলা। এই তিন কর্মকর্তা হলেন, তিতাস গ্যাস কোম্পানির সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক (অব.) কামাল উদ্দিন, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক কাজী আনোয়ারুল আজিম ও সাবেক সহকারী ব্যবস্থাপক (ক্রয় ) শেখ মো. এজাজ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি কর্মরত থাকার সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলে সোর্স পাইপ লাইনে গ্যাস না থাকার পরও ‘গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ প্রকল্প’ পাস করিয়ে নিয়েছেন। তবে, প্রকল্প পাস করিয়ে নিয়ে কেবল কেনাকাটাই ব্যস্ত ছিলেন, কিন্তু কোনো পাইপলাইনের বসানোর কাজ শুরু করেননি। এতে সরকারের ৩৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণের মালামাল কিনেছিলেন পেট্রোবাংলার এই কর্মকর্তারা। অভিযুক্তদের মধ্যে তিতাস গ্যাস কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক কামাল উদ্দিন অবসরে গেছেন। গ্যাসলাইন প্রকল্পের সময় তিনি ওই প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিতাসের উপ-মহাব্যবস্থাপক কাজী আনোয়ারুল আজিম গ্যাসলাইন তৈরির প্রকল্প প্রস্তাবের সময় সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি বর্তমানে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল)-এর এলএনজি সেলের উপ-মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আর তিতাসের সহকারী ব্যবস্থাপক (ক্রয়) শেখ মো. এজাজ ওই সময় ছিলেন সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক (ক্রয়)। বর্তমানে চাকরি ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, পেট্রোবাংলা তার অধীনস্থ কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ন্ত্রণ করে। সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিতে এই দুর্নীতির পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অন্য কোম্পনিতে বদলি করা হয়।
পেট্রোবাংলার উপ-মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শাহানা বেগম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক (২য় সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের বিষয়ে আইএমই বিভাগের পরিদর্শন প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী সোর্স পাইপলাইনে ক্যাপাসিটি ছিল না। এরপরও কোনও সার্ভে বা স্টাডি না করেও অবাস্তব পরিকল্পনা করে দায়িত্বহীন ও পরিকল্পনা-শৃঙ্খলার পরিপন্থী ডিপিপি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয় ও কমিশনকে ভুল বোঝানোর বিষয়টি তদন্ত করে সুপারিশ দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।
পেট্রোবাংলার পরিচালক পরিকল্পনা মো. আইয়ুব খান চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় তিন সদস্যর এই কমিটি। তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে পেট্রোবাংলায় একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পে সরকারের প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির জন্য তিতাসের (তৎকালীন সুন্দরবন) ওই তিন কর্মকর্তা দায়ী
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা বলেন, তিন জনের মধ্যে একজন ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন। একজন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন। আর তৃতীয় জন রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানিতে (আরপিজিসিএল) কর্মরত আছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি নিয়মিত মামলাও হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির কাজ ২০১৫ সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ছয় বছর ধরে কেবল প্রকল্পর লাইন পাইপ এবং অন্যান্য মালামাল কেনা হয়। প্রকল্পের কাজ সন্তোষজনক না হওয়ায় প্রকল্পটি অসম্পূর্ণ রেখেই সমাপ্ত করে দেওয়া হয়। এরপরই কেন প্রকল্পর কাজ শেষ হলো না তা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় পেট্রোবাংলাকে। তদন্তে করে দেখা গেছে ৬ বছর ধরে শুধু কেনাকাটার মধ্যেই ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বাস্তবে কোথাও এই পাইপ লাইন তারা বসাননি।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মে পেট্রোবাংলার এই নির্দেশনা দিলেও তা তিতাসে পৌঁছেছে গত সপ্তাহের শেষে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মূল সোর্স লাইনে গ্যাস না থাকার পরও বিতরণ নেটওয়ার্ক নির্মাণের নামে প্রকল্প তৈরি করে তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। জ্বালানি বিভাগ ও একনেকও ভুল বোঝান এই তিন কর্মকর্তা। খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ায় গ্যাস বিতরণ করার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল।