ঝিনাইদহে রমজানের শেষ দিকে জায়নামাজ বিক্রি বেড়েছে
মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ
সংযম ও সিয়াম সাধনার মাস রমজান। পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে ঝিনাইদহ জেলায় সুগন্ধি দোকানগুলোতে মুসল্লিদের সমাগম বেড়েছে। মুসলমানদের সাধনার মাস রমজান। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা তাদের ইবাদতের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন- আতর, টুপি ও জায়নামাজ কিনতে মাসের শুরু থেকেই ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। এই কেনাকাটা চলবে ঈদের দিন নামাজের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলবে বলে ব্যবসায়িরা আশা করছেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই মাথায় টুপি দিয়ে গায়ে সুগন্ধি মেখে নামাজ পড়তে পছন্দ করেন। সে কারণে রোজার শুরু থেকেই ক্রেতারা আতর, সুরমার দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। তারা শুধু আতর, টুপি, তসবিহ ও মেসওয়াক সুরমাই নয়, রমজানের শেষ দিকে এসে বিক্রি হচ্ছে জায়নামাজ ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, টুপি, তসবিহ ও আতরের চাহিদা বেশি। তবে রমাজানের শেষে এসে জায়নামাজের চাহিদা বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ফুলের সুগন্ধের আতরগুলো বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসব আতরের তোলা হিসেবে কিনলে অনেক টাকা দাম পড়ে। তাই ছোট শিশিতে ক্রেতার চাহিদা মত আতর বিক্রি করা হচ্ছে। ব্যবসায়িরা জানান, প্রতি আতর ২০ টাকা থেকে ৫’ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। এই আতরগুলো পাকিস্তান, ভারত ও দুবাই থেকে আসে। এবার তুলনামূলক হারে টুপির দাম বেড়েছে। প্রতিটি টুপি ১০ টাকা থেকে হাজার ১২’শ টাকা পর্যন্ত দোকানে আগে বললে পাওয়া যাবে। তসবি ২০ টাকা থেকে ১’হাজার টাকা এবং জায়নামাজ ১০০ টাকা থেকে ৩’ হাজার টাকা। এছাড়া পাকিস্তান থেকে আসা প্রতিটি মেসওয়াকের মূল্য ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা।
মেসওয়াকের মধ্যে রয়েছে জয়তুন যা শুকনো, আর তিলো শুকনো ও কাঁচা হয়। আর বাহারি ডিজাইনের টুপিগুলো বাংলাদেশসহ সৌদিআরব, চীন, গুজরাট, মালেয়শিয়ান, পাকিস্তান, ওমান, নেপাল ও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আসে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সুগন্ধি আতর বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে।
দোকানের সহযোগি বিক্রেতা মাসুম বিল্লাহ জানান, আতর যত পুরনো হয়, দাম তত বেশি হয়। দুবাই, ফ্রান্স, সৌদি আরব, কম্বোডিয়া, ভারত, বুলগেরিয়া থেকে বেশি আতর আসে। এছাড়া দেশি আল মীম, সুলতান, কেপিপি, স্কয়ার, আলিফ নামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেশি আতরও বিক্রি হচ্ছে। আতর ছাড়াও বাহারি ডিজাইনের আতরের দানি (বোতল) কাচ ছাড়াও বিভিন্ন ধাতু মিশ্রণে তৈরি এসব আতরদানি বিক্রি হয় ৫০ টাকা থেকে ২’ হাজার টাকা পর্যন্ত।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে জনৈক ব্যবসায়ি জানান, বিভিন্ন ভাবে আতর প্রস্তুত করা পাওয়া যায়। এর মধ্যে রাসায়নিক ভাবে তৈরি আতরের দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়। ১০০ মিলিলিটারের বোতলে ম্যাডার রোজ আতর দেড় হাজার টাকা, লর্ড ১’ হাজার টাকা, সিলভার ১’ হাজার ৭’শ টাকা, ইগুবস দেড় হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। কম্বোডিয়ান আগর আতর তোলা প্রতি (এক তোলায় ১১.৬৬ গ্রাম) ৬৪’ হাজার টাকা, ভারতের চন্দনকাঠের তৈরি আতর তোলা প্রতি ৪’ হাজার টাকা, গোলাপের আতর তোলা প্রতি ৬’ হাজার টাকা পর্যন্ত আমরা কিনতে পারি। আর দেশিয় আতর পাওয়া যাচ্ছে ৫০ থেকে ১’হাজার টাকার মধ্যে। সিলেটের আগর গাছ থেকে তৈরি আতর বিক্রি হয় তোলাপ্রতি ৩ থেকে ৭ হাজার টাকায়।
এ দিকে ক্রেতাদের অভিযোগ, জিনিসের দাম খুবই চড়া। একই সাথে জিনিসের মান নিয়ে সংশয় রয়েছে। পবিত্র রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে সবাই আতর, টুপি, তসবিহ কেনেন, যার কারণে দোকানিরা দাম কিছুটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। শহরে কয়েকটি আতর, সুরমা, টুপির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বাজারে এগুলোর বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুণ।
জেলার কোটচাঁদপুর শহরের হাটের রাস্তায় ব্যবসায়ী আব্দুল আজিজ জানান, বছর সাতেক ধরে এই ভ্রাম্যমাণ আতর, সুরমা ও টুপির ব্যবসা করে আসছেন। প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকেই ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি আরও জানান, ঈদ যত এগিয়ে আসে তার বিক্রিও তত বেড়ে যায়।
ঝিনাইদহ জেলা শহরের থানা রোডের ইবাদতের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির সুন্নাহ কালেকশ’র দোকান মালিক মুন্সি হুসাম উদ্দিন জামি বলেন, এখানে বছর চারেক ব্যবসা করছি। সারা বছরই কম বেশি বেচাকেনা হয়। তবে সারা বছর যে পরিমানে বেচাকেনা হয়, শুধু মাত্র রমজান মাসে সেই পরিমানে বেচাকেনা হয়। আশাকরি অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারের বেচাকেনা আরও ভালো হবে।