কালীগঞ্জ

কালীগঞ্জ পৌর মেয়রের ব্যতিক্রমী বিভিন্ন উদ্যগ

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

দায়িত্ব গ্রহনের পর পরই কালীগঞ্জ পৌরসভার নতুন এ মেয়র একেরপর এক জনকল্যান এবং জন উন্নয়ন মূলক কাজে ইতিমধ্যে সাধারন মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে।

পৌর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রথম ধাপ হিসেবে অনেকগুলো উন্নয়ন কাজ করেছেন। শহরের নতুন ড্রেন এবং পুরাতন ড্রেন মেরামত, প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শহর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কাজ সম্পূর্ণ করা সহ সকল প্রকার কার্যক্রম বাস্তবায়নের নমুনা প্রদর্শন করেছেন।

জানাগেছে, পৌর পিতা হবার পর প্রথম সভাতেই তিনি যে সকল প্রতিশ্রæতি বাস্তবায়নের অঙ্গিকার মৌখিক ভাবে ব্যাক্ত করেছিলেন, সমসাময়িক উন্নয়ন ও কার্যক্রম তারই অংশ বিশেষ। অদূর ভবিষ্যৎতে স্মরণ কালের ব্যপক উন্নয়ন কর্মসূচী এবং শহরকে ঢেলে সাজানোর মহা পরিকল্পনা বিশেষ করে প্রয়াত মেয়র আলহাজ¦ মকছেদ আলী বিশ^াসের সময় প্রস্তাবিত মাষ্টার প্লানে যে সকল কর্মসূচি বা উন্নয়নের প্রস্তাব আকারে রাখা হয়েছিল সেগুলোতো বটেই তার সাথে সংযুক্তি মূলক আরো তিন গুন অতিরিক্ত কর্মকান্ড বাস্তবায়নের লক্ষ নিয়ে মেয়র আশরাফ সামনে এগোচ্ছে বলেও বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে।

তার পরিকল্পনায় উন্নয়ন কর্মকান্ডের মধ্যে রয়েছে, সরকারি খাস জমিতে আধুনিক স্থাপনা, অত্যাধুনিক বর্জ্য পরিশোধনাগার গড়ে তোলা ছাড়াও কালীগঞ্জ শহরের জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো সংস্করনের কারার কাজ রয়েছে তার পরিকল্পনায়। পাশাপাশি ঈদের পরে অবৈধ স্থাপনা, ফুটপাত দখল মুক্ত করার ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান থাকবে সমান তালে। শহরের অবৈধ দখলদারদের তিনি সতর্কও করেছেন। এতেকরে ইতিমধ্যেই পৌরবাসীকে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন মেয়র আশরাফ। অর্থ বরাদ্দ না থাকা সত্বেও শহরের উন্নয়ন মূলক সকল কাজ সম্পন্ন করার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

অপরদিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে বর্তমান মেয়রই সাবেক এবং বর্তমান মিলিয়ে ঝুলে থাকা সকল শাখার বকেয়া বেতন ভাতাদি পরিশোধে সচেষ্ট রয়েছেন।

এবিষয়ে পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে একান্ত আলাপকালে তারা সকলেই মেয়রের এসব কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এবং ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে মেয়রের প্রতি তাদের অঘাত আস্থা রয়েছে।

উল্লেখ্য গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মকছেদ আলী বিশ্বাসের মৃত্যুর পর এ পৌরসভার মেয়র পদটি শুন্য হলে আশরাফুল আলম আশরাফ ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এরপর এ বছরের ২৮ ফেব্রয়ারীতে পৌরসভার মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কার প্রার্থী হয়ে ১১,৫৭৭ ভোট নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু মোবাইল ফোন প্রতীকে পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৯৯৮ ভোট। একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বিজয় ছিনিয়ে আনে। বিজয়ী হওয়ার পর তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় আশরাফ বলেছিলেন, আমি পৌর নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিবো। আধুনিক পৌরসভা গঠনের জন্য চেষ্টা করবো বলে প্রতিজ্ঞা করেন। সে লক্ষ্যে নিয়েই একর পর এক জনকল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি কালীগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র থাকা অবস্থায় অনেগুলো প্রশংসনীয় ও মহতি উদ্যোগ গ্রহন করে ছিলেন এই মহতি উদ্যোগ হলো-১৮ বছরের নিচে তরুনদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি না করতে দোকানদার ও বিড়ি-সিগারেট বিক্রেতাদের অনুরোধ করেছিলেন। যে সকল দোকানে তামাকজাত দ্রব্য (বিড়ি, সিগারেট) বিক্রি করা হবে তার জন্য আগে থেকেই পৌরসভার কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। এছাড়া গত বছরের মে মাসের ২৭ তারিখ এদিন সকালে কালীগঞ্জ পৌরসভার নতুন বাজার এলাকার ব্রীকফিল্ডের পাশে অবস্থিত বেশ কয়েকটি মাদকের আখড়া ও বিক্রয়ের জন্য যে সমস্থ টিনের ও গোলপাতার ঘর ব্যবহার করতে সে ঘরগুলো ভেঙ্গে দেন মেয়র আশরাফ নিজে উপস্থিন থেকে।

তখন মেয়র সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে কালীগঞ্জ পৌর এলাকাকে মাদক মুক্ত করার লক্ষ্যে মাদকের এই সব আখড়াগুলো ভেঙ্গে দেওয়া হয়। সেখানে এলাকায় ২ জনচিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মাদকবিক্রি ও সেবন করতো। তারা এখনও পলাতক রয়েছে।
গত বছরের ১৫ জুলাই অসহায় প্রতিবন্ধী দীলিপ কুমার (৫৬) “প্রতিবন্ধী” ভাতার কার্ড দিয়েছিলেন মেয়র আশরাফ। ঐ সময় বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদপত্রে দীলিপ কুমারকে নিয়ে খবর প্রকাশ হয়েছিল সংবাদটি তার নজরে আসে। তারই চেষ্ঠায় উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জুলফিকার আলী দীলিপ কুমারকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিলীপ কুমারের হাতে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডটি তুলে দেন। এখন থেকে দীলিপ কুমার প্রতিমাসে ৭শ টাকা করে পান।

উল্লেখ্য, শারীরীক প্রতিবন্ধী দিলীপ কুমার শহরের নলডাঙ্গা রোডে বসে গজা, বাদান নিমকি ছোলাসহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করতো। সকালে স্ত্রী তাকে সেখানে দিয়ে যেতেন আর সন্ধ্যায় বাড়ি নিয়ে যেতেন।

তিনি পৌরসভার প্যানেল মেয়র থাকা অবস্থায় কালীগঞ্জে হাসপাতাল সাত দিন পানি ছাড়া চলছে, এই শিরনামে সংবাদটি বিভিন্ন জাতীয়, অঞ্চলিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে। সংবাদটি কালীগঞ্জের সর্ব মহলের মানুষের মাঝে ব্যপক প্রভাব ফেলে সংবাদটি কালীগঞ্জের মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ঝিনাইদহ-৪ আনোয়ারুল আজীম আনারের নজরে আসলে, তিনি পানি সমস্যা সমাধানে মেয়র আশরাফকে জরুরী ভাবে সরোজমিনে পরিদর্শনে পাঠান। মেয়র হাসপাতালে রোগীদের সাথে কথা বলে জানতে পারে হাসপাতালে আট দিন পানি নেই, এটা শুনে মেয়র নিজে হতবাক হয়ে যায়।

হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে করনীয় কি জানতে চান। তিনি তাতক্ষনিক হাসপাতারের রোগীদের কষ্টো নিরশনের জন্য তার ব্যক্তিগত টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি পানির পার্ম্প স্থাপন করে দেন।

গত বছরের ২৭ জুন মাসে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার কাশীপুর গ্রামে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ও তার সঙ্গীরা প্রতিবেশী রাজু আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা করে। মিজানুর মাদকদ্রব্য প্রতিবেশী রাজুর বাড়িতে রাখার প্রস্তাব দিলে রাজু এ প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সে ক্ষিপ্ত হয়ে রাজুর পরিবারের উপর এই নির্মম নির্যাতন চালায়। হামলায় রাজুসহ তার স্ত্রী মনোয়ার বেগম, শ্বশুর আব্দুল মালেক, শাশুড়ি আম্বিয়া বেগম, শ্যালিকা তহমিনাকে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে আহত করে।

আহতদের সবাইকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন মেয়র আশরাফ। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সবাই অসুস্থ্য তবে রাজুর বৃদ্ধ শশুর আঃ মালেকের অবস্থা মারাত্বক। চিকিৎসক আরো জানান, আঃ মালেকের মাথার আঘাত গুরুত্বর তার ব্রেনে রক্ত ক্ষরনের সম্ভাবনা বেশী। তাকে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে। রাজুর পরিবারের সবাই অসুস্থ্য এবং বাইরে নিয়ে চিকিৎসা করানোর মত সামর্থ্যও তাদের ছিলোনা।

এ খবর জানতে পেরে বৃদ্ধ আঃ মালেকের চিকিৎসার জন্য তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছিলেন মেয়র। তিনি অসহায়, সজ্ঞাহীন ও দরিদ্র বৃদ্ধ লোকটির চিকিৎসার সকল প্রকার দায়িত্ব নিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছিলেন। মেয়র আশরাফ নিজে এ্যাম্বুলেন্স ডেকে তাকে যশোরে পাঠিয়েছি কিন্তু তার অবস্থা এতটাই মারাত্বক যে, যশোরের চিকিৎকরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তখন বৃদ্ধ লোকটার চিকিৎসার জন্য ঢাকাতে পাঠিয়েছি চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করেছিলেন। বর্তমানে বৃদ্ধ লোকটি সু-চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ্য ভাবে জীবনযাপন করছেন।

২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শনিবার দুপুরে কালীগঞ্জ শহরে পোষ্ট অফিসের পেছনের ধানের জমিতে এক নবজাতক শিশুরমৃত দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয়রা।

সংবাদ পেয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এসময় সাথে ছিলেন মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ। তাৎক্ষনিকভাবে সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনার মেয়র আশরাফকে শিশুটি উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। মেয়র পৌরসভার কর্মীদের সহযোগিতায় নবজাতকের দাফনের সুব্যবস্থা করেন

চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক আরিফ মোল্লার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেখতে পান মেয়র সেখানে লেখা ছিল, কালীগঞ্জ কলেজ পাড়ার দরিদ্র ভ্যান চালক খোকন দাসের মেয়ে ১০ বছরের প্রতিবন্ধী মেয়ে মিথিলার একটি হুইল চেয়ারের প্রয়োজন। বিষয়টি মেয়রের দৃষ্টিগোচর হয়। তাৎক্ষনিকভাবে তিনি প্রতিবন্ধী মিথিলা দাসের একটি হুইল চেয়ারের দেন।

গত ১৬ মে পবিত্র রমজানের সময়ে প্রচন্ড গরমে নিজ উদ্যোগে মানুষের শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই ইফতারীতে স্যালাইন যোগ করতেই তিনি শহরের মেইন বাসষ্ট্যান্ডে সকাল থেকে নিজ হাতে প্রায় ৩ হাজার খাওয়ার স্যালাইন বিতরন করেছেন। রিকসা, ভ্যান, ইজিবাইক চালক, শহরে কর্মরত শ্রমিক শ্রেণীর মানুষসহ পথচারীদের হাতে স্যালাইন তুলে দেয়া হয়েছে।

পৌরসভার শেভা বর্ধনে শহরের বিভিন্ন লাইট পোষ্টে বিদ্যুতের খাম্বায় আধুনিক ডিজিটাল লাইট লাগিয়েছেন। এই লাইটগুলো রাতে উৎসব মূখর পরিবেশ তৈরী করে। এলাকার কোন ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে সেই পরিবারের পাশে দাড়িয়ে শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। স্থানীয় সাংবাদিকরা কোন অসহায়, অসুস্থ ও গরীব মানুষের সাহায্যার্থে সংবাদ প্রকাশ করলে সেই সংবাদ যদি মেয়র আশরাফের দৃষ্টি গোচর হয় তাদেরকে ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করেন। কালীগঞ্জ পৌরসভার খয়েরতলা থেকে আনন্দবাগের ১কিলোমিটার রাস্তা ৩৮ লক্ষ টাকা এবং ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বলিদাপাড়া গ্রামে ৩শত ফুট ড্রেন কাজ শত ব্যস্তার মধ্যেও নিয়মিত পরিদর্শন করতে দেখা যায়। পৌর এলাকাকে মাদক মুক্ত করতে অগ্রনী ভূমিকা পালন করছেন।

পবিত্র রমজান মাসে পৌরসভার কাউন্সিলরবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পৌরসভার সেবা নিতে আসা পৌর নাগরীকদের নামাজের জন্য স্থায়ী নামাজ ঘর করেছেন। এ সময় মেয়র আশরাফ বলেন, পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পৌরবাসী বিভিন্ন সময় পৌর সেবা নিতে পৌর দপ্তরে আসেন তাদের নামাজ আদায় করতে দূরে যেতে হয় এজন্য পৌর ভবনেই একটা সুন্দর পরিপাটি করে নামাজ পড়ার ঘরের পরিকল্পনা ছিল অনেক আগে থেকেই। এখন মাহে রমজান উপলক্ষে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করলাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button