কালীগঞ্জ

ঈদের আনন্দ নেই বারোবাজারের শিশু আবির ও শামিমদের বাড়িতে

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঈদ মানে আনন্দ! ঈদ মানে খুশি!! কিন্তু এবারের ঈদের আনন্দ নেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আছির উদ্দিনের বাড়িতে। নিহত আছির উদ্দিন ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার হাট বারোবাজার ইউনিয়নের সাদিকপুর (কাঁঠালতলা) গ্রামের ঈসমাইল হোসেনের ছেলে। নিহত আছির উদ্দিন পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ীদের কর্মচারী ছিলেন।

উল্লেখ্য-চলতি বছরের ১৪ মে সকাল দশটার সময় ঝিনাইদহ এলাকা থেকে মাছে ক্রয় করে করিমন যোগে বারোবাজার ফেরার পথে দুলাল মুন্দিয়া বাজার এলাকায় পৌছালে একটা ট্রাক পেছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। করিমন গাড়িতে আছির উদ্দিনসহ মোট ৫ জন লোক সবায় কমবেশী আহত হয়। কিন্তু আছির উদ্দিন ছিটকে যেয়ে একটি ট্রাকের সাথে ধাক্কা খায়। তার অবস্থা গুরুত্বর হওয়াই স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথম কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।

কর্তব্যরত ডাক্তারা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। সেখানে ভর্তি করার ১৫ মিনিট পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার রেখে যাওয়া স্ত্রী বিউটি বেগম (২৫), দুই পূত্র সন্তান আবির (২) ও শামিম (৬ মাস)। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিই তার স্বামী। স্বামীর মৃত্যুর পর সারা পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায় বিউটি বেগমের। দুই শিশু পূত্রকে নিয়ে বর্তমান মানবেতর জীবনযাপন করছে।

বিউটি বেগম জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি ব্রেন ষ্ট্রোক করেছিলাম আজ কয়েকদিন হলো এখন মোটামুটি সুস্থ্য হয়েছি। এখন অসহায় হয়ে পড়েছি জমা জমি বলতে ভিটে এবং ভাঙ্গাচোরা বাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। বর্তমানে ভাসুর এবং শশুরের সংসারে বোঝা হয়ে আছি। তারা একবারেই গরীব মানুষ আমাকে কতোদিন খাওয়া পরা দিবে। তাদেরই সংসার চলে না। আমার এই ছোট ছোট দুইটা ছেলে, বড় ছেলের বয়স ২ বছর, আর ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৬ মাস।

আমি কি করে কি করবো বুঝতে পারছি না। বাচ্চাদের সামলাবো না আমি অন্য কাজ করবো। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে আমি নিজেই অসূস্থ্য হয়ে পড়েছি।
ফলে ঈদে আনন্দ নেই আমার সংসারে। কোন দিন খেয়ে কোন দিন না খেয়ে চলছে আমার সংসার। আমার এতটুকু ছোট দুইটা বাচ্চা তারা যখন ক্ষুধার জ্বালায় আমার কাছে খাবার চাই তখন আমি তাদের মূখে কিছুই দিতে পারি না। পরের বাড়ি কাজে যেতে ভয় হয় না জানি কে কখন মিথ্যা বদনাম দেয়। বর্তমানে আমার শশুর-ভাসুরের সংসারে দুই বাচ্চা নিয়ে বেঁচে আছি কিন্তু এভাবে আর কতদিন? বিউটি বেগম কাঁদতে কাঁদতে জানায়, আমার স্বামীর অতি আদরের দুইটা ছেলে। সে মাছের কাজ করে বাড়িতে এসে আগে দুই ছেলের কোলে নিয়ে আদর করে মিষ্টি খাওয়ায়ে তারপর নিয়ে গোসর করে খেতে বসতো। এই ঈদে আমার বড় ছেলে পাড়ার ছেলেদের নতুন পোশাক দেখে আমার কাছে কান্না কাটি করে তার কান্না দেখে আমার নিজেরও কান্না এসে যায়। কান্না এখন আমার সারা জীবনের সঙ্গী। মাঝে মধ্যে মনে হয় আত্মহত্যা করি কিš‘ আমার সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে আর করতে পারি না।

আমাদের গ্রামের সবাই ইতোমধ্যে যার যার পরিবার ও নিজের জন্য সাধ্যমত ঈদের কেনাকাটা করছেন। কিন্তু এই ঈদে আমাদের নতুন জামা-কাপড় তো দূরের কথা ভালো রান্না করাও সম্ভব হবে না।

তিনি আরো জানায় স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার যারা সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কালকের দিন পর ঈদ। জামা কাপড় তো দূরের কথা ঈদের দিনে ভাল রান্না করার অবস্থাও নেই বলে জানান বিউটি বেগম। সে তার স্বামীর রেখে যাওয়া অবুঝ দুইটি শিশু সন্তানকে মানুষের মত মানুষ করার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা এবং সাহায্য কামনা করেছেন। তিনি তার এই দূরাবস্থা থেকে বাঁচার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র , জেলা পরিষদ সদস্য এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনের জননন্দিত ও জনপ্রিয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের সূ-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button