ছাঁটাই আতঙ্কে প্রবীণ ব্যাংকাররা
ঝিনাইদহের চোখঃ
কায়সার আহমেদ সহকারী শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা হিসেবে ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত একটি বেসরকারি ব্যাংকে। প্রায় ২৩ বছরের কর্মজীবনে কোনো সমস্যা না হলেও এখন ছাঁটাই আতঙ্কে ভুগছেন।
তিনি জাগো নিউজকে জানান, কর্মজীবনে দেশের অনেক জেলায় কাজ করেছি। শাখারও দায়িত্ব পালন করছি। কোনো সমস্যা হয়নি। এখন নতুন নতুন নেতৃত্ব আসছে। তাদের নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনা। ব্যাংকের শুরুতে আমরা ছিলাম ভরসা। এখন হয়ে গেছি বোঝা। প্রথমে বলা হলো পরীক্ষা দিতে হবে, পরীক্ষ দিলাম। এখন বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হচ্ছে। অস্থির পরিবেশে কাজ করা যায় না। তাই চলে যাব। কায়সারের মতো এ রকম শত শত প্রবীণ ব্যাংকার এখন ছাঁটাই আতঙ্কে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সব সময় বেশি আয়ের কৌশল খুঁজে। যে পন্থায় আয় বেশি হবে তা গ্রহণ করে। খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই একটি পুরনো কৌশল। অন্য প্রতিষ্ঠানের মতো বেসরকারি ব্যাংকও এখন এ নীতি অনুসরণ করছে।
তারা জানান, ব্যাংকগুলোতে এখন নতুন নেতৃত্ব আসছে। এর মধ্যে নতুন প্রজন্মের আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর জ্ঞান সম্পূর্ণ রয়েছেন অনেকে। তারা পরিবর্তন পছন্দ করেন। পুরনো লোকের বদলে প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পূর্ণ কর্মী নিচ্ছেন। এছাড়া সিনিয়র কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বেশি হওয়ায় তাদের বাদ দিয়ে খরচ কমানোর কৌশল খুঁজছে। পরীক্ষা কখনও বদলির কলা-কৌশলের আশ্রয় নেয় ব্যাংকের নেতৃত্বে থাকা লোকজন।
বেসরকারি একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যবসায় টিকে থাকলে ব্যাংকগুলোতে চলছে অস্বাভাবিক প্রতিযোগিতা। ব্যাংকগুলো এখন বিভিন্ন কৌশলে খরচ কমাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম কর্মী ছাঁটাই। আর এ ছাঁটাইয়ের তালিকায় বেশিরভাগই থাকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অর্থাৎ ১৫ থেকে ২০ বছর কাজ করলে একজন কর্মকর্তাকে লাখ টাকার উপরে বেতন দিতে হয়। খরচ কমাতে প্রথমে ছাঁটাইয়ে জন্য টার্গেট করে সিনিয়র কর্মকর্তাদের। এমন কৌশল অবলম্বন করছে এসসিসি, ব্র্যাক ব্যাংক, প্রিমিয়ার, ডাচ্-বাংলা, মার্কেন্টাইলসহ বেশকিছু ব্যাংক।
এদিকে কাজের অগ্রগতি কম। আধুনিক ব্যাংক ব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না তাদের ছাঁটাই করা হবে। এমনটাই জানিয়েছিলেন বেসরকারি ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের (এনসিসি ব্যাংক) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ। এরপরই ব্যাংকটির বেশ কিছু জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তাকে প্রধান কার্যালয়ে আনা হয়। নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে কাউকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করেছে আবার কাউকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে এমন অভিযোগও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিসির এমডি মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বলেছিলাম ছাঁটাই করব। কিন্তু কাউকে চাকরিচ্যুত করা হয়নি। যে সব কর্মীর সমস্যা ছিল তাদের বিআইবিএমে ট্রেনিং দিয়েছি। এর মধ্যে যারা ভালো করেছে তাদের প্রমোশন দেয়া হয়েছে। আর পারফরম্যান্সের কারণে কারও চাকরি যাবে না বলেও জানান তিনি।
ব্যাংকের চাপে অনেকে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে- এমন অভিযোগের জবাবে এনসিসির এমডি বলেন, যারা চাকরি ছেড়েছে তারা ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইমের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়নি নিজেরাই সসম্মানে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, যে কোনো কর্মীর জন্য চাকরির নিরাপত্তা জরুরি। প্রতিটি ব্যাংকে কর্মী নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ে একটি নিয়মনীতি আছে। কোনো ব্যাংক যদি নিয়ম-বর্হিভূতভাবে কর্মী ছাঁটাই করে। তা ঠিক হবে না। এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। এছাড়া কোনো ব্যাংককার যদি অভিযোগ করে আমরা ব্যবস্থা নিব।