ঝিনাইদহে কমেছে আবাদযোগ্য জমি, হুমকিতে কৃষি উৎপাদন
ঝিনাইদহের চোখঃ
কৃষি নির্ভর জেলা হিসেবে পরিচিত ঝিনাইদহ। ধান, ফুল, সবজি উৎপাদনের রেকর্ড রয়েছে এই জেলায়। ফুল ও সবজি সরবরাহের শীর্ষে রয়েছে জেলাটি। তবে গত এক যুগে এই জেলায় আবাদি জমি কমছে ৫২৯ হেক্টর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বসতবাড়ি, শিল্প কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইটভাটা, স্থাপনা ও পুকুর তৈরি করায় আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। এতে বাস্তুভিটা বাড়লেও ঝুঁকিতে চাষাবাদের জমি। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পরিকল্পিতভাবে জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, নদীনালা, খাল-বিল ভরাট ও নদী অঞ্চলে নতুন চর জেগে উঠায় দেশের অন্যান্য কৃষি অঞ্চলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমছে। সেই হিসেবে যশোর কৃষি অঞ্চলের ছয় জেলায় গড়ে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ঝিনাইদহে কমেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর সূত্রে জানা যায়, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে যশোর কৃষি অঞ্চলের ৬ জেলায় মোট আবাদযোগ্য জমি ছিল ছয় লাখ ৮৮ হাজার ৯৩২ হেক্টর। এক যুগ পর ২০১৭-১৮ সালে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ছয় লাখ ৯৪ হাজার ৬৫৩ হেক্টর হয়েছে। ৬ জেলায় গড় হিসেবে আবাদি জমি ৫ হাজার ৭২১ হেক্টর বেড়েছে। কিন্তু যশোর ও ঝিনাইদহ জেলায় তিন হাজার ৬৯ হেক্টর আবাদি জমি কমেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ঝিনাইদহ জেলায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫ হাজার ৭৬৯ হেক্টর। এক যুগ পর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক লাখ ৫ হাজার ২৪০ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। কমেছে ৫২৯ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি।
জানতে চাইলে মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউট যশোরের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আবাদি জমি কমে যাওয়ার মূল কারণ বসতি স্থাপন। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, স্কুল কলেজ, কলকারখানা ও আবাদি জমিতে পুকুর, ঘের তৈরি। ফলে আবাদযোগ্য জমি উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।
সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে, গত ত্রিশ বছরে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ১৩০ শতাংশ পর্যন্ত বসতি স্থাপন বেড়েছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্লা বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে অবকাঠামো নির্মাণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কৃষি জমিতেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে কলকারখানা, বাড়িঘর, ইটভাটাসহ বিভিন্ন ধরণে স্থাপনা। এতে আবাদযোগ্য কৃষি জমি কমে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আবাদযোগ জমি রক্ষা করতে হলে আইন মেনে স্থাপনা তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ জমি থাকলে নিজেই ভবন তৈরি করা যায় না, সেই বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। সরকার নির্ধারণ করবে কোন জমিতে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না। পরিকল্পিতভাবে স্থাপনা তৈরি নিশ্চিত করতে পারলে কৃষি জমির সুরক্ষা সম্ভব হবে।