কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহে মহামারি আকারে ধারন করেছে মোবাইল ইন্টারনেট গেম

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

সারা দেশের ন্যায় ঝিনাইদহ জেলাতেও কিশোর-কিশোরীদের মোবাইলের ইন্টারনেট গেমে আসক্ত হওয়ার প্রবনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী সহ কর্মজীবি শিশু কিশোররাও এই মোবাইল ইন্টারনেটর নেটের গ্রæপ গেমে আসক্ত হতে দেখা যাচ্ছে।

এ জেলার প্রতিটা উপজেলার গ্রাম-গঞ্জেও এই মোবাইল ইন্টারনেট গ্রæপ গেম মহামারি আকার ধারন করেছে। প্রতিটি জিনিসের একদিকে যেমন সুবিধা আছে, আবার অনেক অসুবিধাও আছে, তেমনি ইন্টারনেট ও মোবাইল বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। অন্যদিকে এর অবাধ ব্যবহারে কিশোররা আজ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গেমসের নেশায় রাতে তাদের ঘুম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা অনেকে আজ পড়ার টেবিল ছেড়ে কখনো মোবাইল গেমস, কখনো ইন্টারনেটের খারাপ সাইটে বিভিন্ন ছবি দেখছে। তারা নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলছে। লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে তাদের ভবিষ্যৎ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে, অন্যদিকে অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে। তাই এই কিশোর-কিশোরীদের দিকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি রাখা দরকার। এ সব কিশোর-কিশোরীদের মা-বাবাসহ সমাজের সবারই খেয়াল রাখতে হবে, যেন তারা মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার না করে।

জাতির ভবিষ্যৎ এই কিশোর ছেলে-মেয়েরা যাতে অল্প বয়সেই ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহার না করতে পারে ও মোবাইল আসক্ত না হতে পারে, সেদিকে সবার দৃষ্টি দেওয়া আশু প্রয়োজন।

কিশোর-কিশোরী ইন্টারনেট গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে তারা সাধারণভাবে নিজেদের সব সময় লুকিয়ে রাখে। স্বাভাবিক আচরণ তাদের মধ্যে দেখা যায় না। দিনের বেশিরভাগ সময় তারা কাটিয়ে দেয় সোস্যাল মিডিয়ায়। থাকে চুপচাপ। কখনো আবার আলাপ জমায় অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে। গভীর রাত পর্যন্ত ছাদে ঘুরে বেড়ায় আবার একা একটা বন্ধ ঘরে থাকতে পছন্দ করে। বারবার ডাকাডাকি করেও তাদের সাড়া মেলেনা। আবার ফেসবুক ব্যবহার করে বিভিন্ন ছেলে-মেয়েরা ম্যাসেঞ্জারের চ্যাট বক্সের আলাপ চারিতায় প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। অথচ কেউ কাউকে সামনা সামনি কোনদিন দেখেনি। একটা সময়ের পর নিজের শরীরকে কেটে ক্ষত-বিক্ষত করে।

এই সব ক্ষতিকর মোবাইল ইন্টারনেট গেম থেকে এই সব কিশোর-কিশোরীকে বের করে আনতে হবে। খেয়াল রাখেতে হবে আমাদের সন্তান, ভাই-বোন বা নিকটজনকে মোবাইলে ও কম্পিউটারে অধিক সময়ে একাকী বসে থাকতে দেখলে সে কী করছে, তার খোঁজ-খবর নিতে হবে। সন্তানকে কখনও একাকী বেশি সময় থাকতে না দেয়া এবং এসব গেমের কুফল সম্পর্কে তাদের ধারনা দিতে হবে।

সন্তানদের মাঝে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মানসিকতা সৃষ্টি করা। যাতে তারা আত্মহত্যা করা বা নিজের শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করা অনেক বড় পাপ-এটা বুঝতে পারে। সন্তান ও পরিবারের অন্য কোনো সদস্য মানসিকভাবে বিপর্যস্ত কিনা-সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা। কেউ যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয় তাকে সঙ্গ দেওয়া।

কৌতূহলি মন নিয়ে কেউ যেন এই ধরনের গ্রæপ গেমটি খেলার চেষ্টা না করা। কৌতূহল থেকে এটি নেশাতে পরিণত হয়। আর নেশাই হয়তো ডেকে আনতে পারে আপনার বড় ধরনের অপুরনীয় ক্ষতি।

কথা হয় মোবাইল গ্রæপ গেমে আসক্ত এক অবিভাবকের সাথে তিনি জানান, তার সন্তান ছোট বেলা থেকেই পড়া শোনায় খুব ভালো ছিলো। কিন্ত বছর দুয়েক আগে যখন সে এন্ডুরয়েড মোবাইল ব্যবহার করতে লাগলো তারপর থেকেই সে পড়াশোনায় অমনোযোগী হতে লাগলো। এখন সে একেবারেই পড়াশোনা করতে চায় না। কিছু দিন আগে তার বাম হাতের নিচে বেøড দিয়ে কমপক্ষে ১৫/২০ জায়গায় কাটছে। তাহলে চিন্তা করতে হবে সে কি পরিমান আসক্ত হয়েছে। এখন সে ঘরে একা একা থাকে, কানে হেডফোন লাগিয়ে অন্যান্য বন্ধু বান্ধবের সাথে ভিডিও গ্রæপ গেম খেলে এবং কথা বলে। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না।

খাবার চাহিদা তার নেই বললে চলে। শরীর ভেঙে পড়ে বয়স্ক মানুষের মত চেহারা হয়ে গিয়াছে। অনেকবার ডাকার পরে একবার খুব রাগান্বিত হয়ে উত্তর দেয়। তিনি আরো জানান তার সন্তান এই মোবাইল ইন্টারনেটের ভিডিও গ্রæপ গেমে আসক্ত হয়ে তার ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে গিয়াছে। তাকে আর কোনদিন আগের অবস্থায় আনা সম্ভব হবে না। এটাকে তিনি মাদকদ্রব্যর নেশার চেয়ে ভয়ংকর বলে উল্লেখ করে বলেন, এই সমস্যা থেকে আমাদের সস্তান, ভাই-বোনদের বাচাঁতে হলে অবিভাবকদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহল, শিক্ষক-শিক্ষীকা, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button