অন্যান্য

৬০ কোটি টন বরফ চাঁদে টানছে মানুষকে

#ঝিনাইদহের চোখঃ

২০০৮ সালে ভারতের প্রথম চন্দ্রযান চাঁদে অনুসন্ধান চালায়। সেই যানের রাডার সেখানে উত্তর মেরুর ৪০টিরও বেশি গহ্বরে পানির বরফ আবিষ্কার করে। গবেষকরা জানিয়েছে, ৬০ কোটি টন বরফ চাঁদে টানছে মানুষকে। এ ছাড়া চাঁদের বুকে স্থায়ী বসতির জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালও রয়েছে।

চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জমাট পানি থাকতে পারে বলে অনেক দশক ধরে অনুমান করা হচ্ছিল। সেখানে এমন কিছু খাদ রয়েছে, যেগুলো কোটি কোটি বছর ধরে ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে। সেগুলোকে ‘কোল্ড ট্র্যাপ’ বা শীতল ফাঁদ বলা হয়। কারণ খাদের জমির তাপমাত্রা চাঁদের বাকি অংশের তুলনায় অনেক বেশি শীতল প্রায় মাইনাস ২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস!

ধুমকেতু ও গ্রহাণুর মাধ্যমে সেই পানি সম্ভবত চাঁদে এসেছিল। সূর্য প্রতিনিয়ত চাঁদের বুকে হাইড্রোজেন কণা আছড়ে ফেলেও এক্ষেত্রে অবদান রেখেছে। সেগুলো পাথরে জমির মধ্যে প্রবেশ করে অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয় এবং পানি সৃষ্টি করে। তারই কিছু অংশ দুই মেরু অঞ্চলের শীতল গহ্বরে জমা হয়।

নাসার লাডে নামের স্যাটেলাইট অসাধারণ এক আবিষ্কার করেছে। চাঁদের জমি থেকে প্রতিনিয়ত পানি বেরিয়ে আসছে। বিশেষ করে উল্কাবৃষ্টির সময় এমনটা বেশি দেখা যায়। পানিসমৃদ্ধ পাথরে জমির ওপর কয়েক সেন্টিমিটার পুরু ধুলার স্তর রয়েছে।

গত শতাব্দীতে চাঁদে মানুষ পাঠানোর পর পৃথিবীর উপগ্রহ সম্পর্কে আগ্রহ বেড়ে গেছে। আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, ভারত এসব দেশের একাধিক অভিযানে বরফ ও পানি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

চাঁদ সম্পর্কে আমাদের ধারণা বদলে গেছে। বিগত দশকে একঝাঁক স্যাটেলাইট চাঁদ সম্পর্কে গবেষণা চালিয়েছে। পৃথিবী ছাড়া সৌরজগতের অন্যকোনো মহাজাগতিক বস্তু নিয়ে এত গবেষণা হয়নি।

২০০৯ সালে এক মার্কিন গবেষণামূলক স্যাটেলাইট শেষ পর্যন্ত সেই গহ্বরের রহস্য উন্মোচন করে। এই প্রকল্পের আওতায় লুনার রিকনোসেন্স অর্বিটার নিম্ন কক্ষপথে চাঁদ প্রদক্ষিণ করে চলেছিল। সেইসঙ্গে নাসা রকেটের একটি অংশ সেই গহ্বরে আছড়ে ফেলে। ছোট একটি মহাকাশযান তখন সংঘাতের ফলে সৃষ্ট ধুলিকণা পরীক্ষা করে।

তারপর দ্বিতীয় একটি বস্তু গহ্বরের মধ্যে আছড়ে পড়ে। লুনার রিকনোসেন্স অর্বিটার একাধিক যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সেই জায়গাটি পরীক্ষা করে। ধুলিকণার মেঘের মধ্যে পানি শনাক্ত করা সম্ভব হয়।

আগামী কয়েক বছরে রোবটের মাধ্যমে চাঁদের বুকে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ নির্ণয় করার চেষ্টা চালানো হবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে চীন প্রথমবার চাঁদের দক্ষিণ মেরু এলাকায় একটি মহাকাশযান অবতরণে সক্ষম হয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সূর্যের হাইড্রোজেন কণা চাঁদের বুকে ঠিক কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সেই যানের মধ্য থেকে এক রোভার চাঁদের বুকে নেমে পরীক্ষা চালাচ্ছে।

ভারতও অদূর ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে একটি যান অবতরণ করাতে চলেছে। তার মধ্যে একটি রোভার গাড়িও থাকবে।

ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এক হাইটেক গবেষণাগার তৈরি করছে। রাশিয়ার এক রকেটের মাধ্যমে সেটিকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাঠানো হবে। সেটি মাটির এক মিটার গভীর পর্যন্ত স্তর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তার মধ্যে পানি ও অক্সিজেনের মাত্রা নির্ণয় করবে।

গবেষণার কাজে রোবট সবরকম বিশ্লেষণ করতে সক্ষম নয়। তাই দক্ষিণ মেরু থেকে কিছু নমুনা পৃথিবীতে নিয়ে আসা হবে। অত্যন্ত জটিল প্রযুক্তির মাধ্যমে মাটির নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠাতে হবে। চীনের মহাকাশ সংস্থা তার আগামী চন্দ্র অভিযানে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চায়।

তবে ২০৩০ সালের আগে চাঁদে আবার মানুষ পাঠানো কোনো পরিকল্পনা নেই।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button