জানা-অজানা

আরও একটি মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আবিষ্কার!

#ঝিনাইদহের চোখঃ

গত কয়েক বছরে মহাকাশে দারুণ কিছু আবিষ্কার হয়েছে। মঙ্গল গ্রহে তরল পানির সন্ধান বা মহাকর্ষীয় তরঙ্গ এদের মধ্যে অন্যতম। তবে বলাই যায়, চির রহস্যের মহাকাশের নগন্য অংশ আবিষ্কৃত হয়েছে।এবার এই মহাবিশ্বের মতোই আরেকটি মহাবিশ্বের অস্তিত্ব আঁচ করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৯ সালে সেই গুপ্ত ছায়া মহাবিশ্ব আবিষ্কারের জন্য প্রথম পদক্ষেপ নেবে তারা।

পূর্বাঞ্চলীয় টেনেসির ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির গবেষকরা এ সংক্রান্ত পরীক্ষা চালাতে যন্ত্রপাতি নির্মাণের কাজও শেষ করেছেন। পরীক্ষাটি সফল হলে দেখা মিলতে পারে ছায়া কণা, ছায়া গ্রহ এমনকি ছায়া প্রাণেরও। এ প্রকল্পের নেপথ্যের পদার্থবিদ লিয়াহ ব্রুসার্ড এমনটাই দাবি করছেন।

গুপ্ত ছায়াবিশ্ব আবিষ্কারের বিষয়টি ‘স্ট্রেঞ্জার থিংগস’ সিরিজের সায়েন্স ফিকশনের মতো মনে হতে পারে। পদার্থ বিজ্ঞানীরা তাদের এ সংক্রান্ত গবেষণায় বারবার সামঞ্জস্যহীন ফলাফল পেয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এর বাস্তব প্রমাণ শনাক্ত করা যায়নি। তবে ৯০ দশকের দুইটি সামঞ্জস্যহীন ফলাফলই ছায়া মহাবিশ্ব সংক্রান্ত গবেষণার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ওই গবেষণায় পদার্থবিদরা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা নিউট্রন কণা নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছিন্ন হবার পর তা ভেঙে প্রোটনে পরিণত হতে কত সময় লাগে তা পরিমাপ করছিলেন।

দুইটি ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষায় তারা দেখেছেন, ধারণা অনুযায়ী নিউট্রনগুলো একেবারে একই হারে ক্ষয় হয়ে প্রোটনে পরিণত হচ্ছে না, ভিন্ন দুই হারে ভাঙছে। দুইটি পরীক্ষার একটিতে দেখা গেছে মুক্ত নিউট্রনগুলো চৌম্বক ক্ষেত্রে আটকে পড়ছে এবং পরীক্ষাগারের বোতলের ট্র্যাপস-এ দলবদ্ধ হয়ে আছে। আরেক পরীক্ষায় পারমাণবিক চুল্লি প্রবাহ থেকে প্রোটন কণার উত্তরকালীন উপস্থিতির মধ্য দিয়ে নিউট্রনগুলো শনাক্ত করা হয়েছে। চুল্লি প্রবাহে বিস্ফোরিত এসব কণা গড়ে ১৪ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড করে সচল ছিল। যা বোতল ট্র্যাপস-এ থাকা নিউট্রন কণার সচলাবস্থার চেয়ে ৯ সেকেন্ড বেশি। এক্ষেত্রে তারতম্য খুব সামান্য মনে হলেও তা বিজ্ঞানীদেরকে সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। তা সত্ত্বেও ছায়া মহাবিশ্বের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার পেছনে বিশ্বাসযোগ্য ব্যাখ্যা রয়েছে।

বস্তুত নিউট্রনের আলাদা দুইটি জীবনকাল রয়েছে এবং হতে পারে ১ শতাংশ নিউট্রন ( শনাক্তযোগ্য প্রোটন নির্গত করার আগে) আমাদের বাস্তব ও ছায়া মহাবিশ্বের বিভাজন রেখা পার হয় এবং ফেরত আসে। বিজ্ঞানীরা তাই পরীক্ষার অংশ হিসেবে একটি অভেদ্য দেয়ালে একটি নিউট্রন প্রবাহ বিস্ফোরণ ঘটাতে চাইছেন। দেয়ালের অপর পাশে স্থাপন করা হবে একটি নিউট্রন ডিটেক্টর, সাধারণত যা কোনও কিছুকেই শনাক্ত করবে বলে প্রত্যাশা করা হয় না। তবে ডিটেক্টর যদি নিউট্রনের উপস্থিতি পরিমাপ করতে পারে, তার মানে দাঁড়াবে-নিউট্রনগুলো ‘দোলনের’ মধ্য দিয়ে দেয়াল পাড়ি দিয়ে ছায়া নিউট্রন হিসেবে ছায়া বিশ্বে পৌঁছাতে পেরেছে। এরপর তা দোলনের মধ্য দিয়ে (এই বিশ্বে জগতে) টেনেসির পরীক্ষাগারে ফিরে এসেছে এবং সংবেদনশীল যন্ত্রপাতিতে আঘাত করেছে।

জুনে নিউ সায়েন্টিস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রুসার্ড বলেন, শুধু যে নিউট্রনগুলোর দোলন আছে এবং মহাবিশ্বে ফিরে আসে, কেবল সেগুলোই শনাক্ত করা যায়। এছাড়া বিজ্ঞানীর দলটি দেয়ালের অপর (উভয়) পাশে চৌম্বক ক্ষেত্র স্থাপন করবে। সেখানে তারা ক্ষেত্রের শক্তি-শ্রাবল্য বদলাতে পারে। আশা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট শক্তি নিউট্রন কণার দোলনে সহায়তা করতে পারবে।পরিপাটি এ তত্ত্ব সত্ত্বেও গবেষক দল বাস্তব বিশ্বের যমজ ছায়াবিশ্ব খুঁজে পাওয়ার সুযোগ কম বলেই মনে করছেন। প্রাথমিক পরীক্ষার ব্যাপারে ব্রুসার্ড বলেন, এর ফলাফল শূন্য হবে বলেই তার ধারণা। তবে বিজ্ঞানীরা যদি দেয়ালের অপর পাশে একটি নিউট্রন শনাক্ত করতে পারে, তবে এর অনেক গুরুত্ব থাকবে। এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রুসার্ড বলেন, আপনি যদি এমন নতুন কিছু আবিষ্কার করতে পারেন, তবে খেলা পুরোপুরি পাল্টে যায়।

ছায়া বিশ্বের অস্তিত্ব আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে আমাদের মহাবিশ্বের আইসোটোপ লিথিয়াম ৭-এর ঘাটতিকেও ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। পদার্থবিদদের বিশ্বাস, আইসোটোপ লিথিয়াম ৭ এর যে পরিমাণ উপস্থিতি রয়েছে তা বিগ ব্যাং এ সৃষ্ট পরিমাণের সঙ্গে মেলে না। ‘আমাদের ছায়াপথকে অতিক্রম করে আসা উচ্চ শক্তিসম্পন্ন মহাজাগতিক রশ্মি শনাক্ত করার’ ঘটনাকে ‘ব্যাখ্যা করা যেতে পারে ছায়া বিশ্বের অস্তিত্ব’ দিয়ে । শুধু দৃশ্যমান মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে সফর করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী এগুলো নয়। কিন্তু যদি তাদের দোলন হয় এবং তারা ছায়া-বিশ্বে ঢুকে আবারও ফিরে আসে, তবে এগুলো কিভাবে আসছে তার ব্যাখ্যা করা সম্ভব।

মহাকাশ এক মহাবিস্ময়। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণায় অনেক নতুন তথ্য বেরিয়ে আসছে। কোথা থেকে কীভাবে এর উদ্ভব? রাতের আকাশে কীভাবে উল্কাবৃষ্টি হয়, কেন হ্যালির ধূমকেতু প্রতি ৭৬ বছর পর একবার করে সূর্যকে ঘুরে যায়। সুপারনোভার মধ্যে লুকিয়ে আছে কত অজানা রহস্য।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button