খাদ্য-নিরাপত্তা বাড়লেও অপুষ্টিতে ৬ জনে একজন
#ঝিনাইদহের চোখঃ
সময়ের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য নিরাপত্তা ধারণার পরিবর্তন হয়েছে, বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিসর অনেকটাই বিস্তৃত হয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে কয়েকটি ধাপে একগুচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যার মধ্যে রয়েছে খাদ্যের লভ্যতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যের ভৌত ও অর্থনৈতিক প্রাপ্যতা নিশ্চিত এবং খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা হ্রাস করা। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে বাংলাদেশে প্রতি ছয়জন মানুষের মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে।
জাতিসংঘ প্রকাশিত এক নতুন প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত এক দশকে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে ২ কোটি ৪২ লাখে পৌঁছেছে। অবশ্য ভয়াবহভাবে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকা মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থা (এফএও), শিশু তহবিল ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (আইএফএডি) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির উদ্যোগে ‘বিশ্বের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বাস্তবতা ২০১৯’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রচিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ৮২ কোটি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। এর মধ্যে ৫১ কোটি ৩৯ লাখ মানুষ এশিয়ার এবং ২৫ কোটি ৬১ লাখ মানুষ আফ্রিকার বাসিন্দা।
জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে ২০০৪-২০০৬ সালে যেখানে অপুষ্টির শিকার মানুষের সংখ্যা ২ কোটি ৩৮ লাখ ছিল, ২০১৮ সালে এসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৪২ লাখে। তবে খাদ্য নিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৪-২০১৬ সালে এ সংখ্যা ১ কোটি ৭৮ লাখ ছিল। তবে ২০১৬-২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৬৮ লাখে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে ২০১৫ সাল পর্যন্ত দশকের পর দশক ধরে অপুষ্টিজনিত পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত আছে। তখন থেকে বিশ্বে পুষ্টিহীনতার শিকার মানুষের হার ১১ শতাংশ। কৃষির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব পড়ছে এবং কৃষকের সংখ্যা কমে গেছে। আর এগুলো সব মিলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া, বিতরণ ও ভোগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবং নতুন খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যবিষয়ক চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে তীব্র খাদ্য অনিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির ব্যাপকতা কমলেও গত দুই বছরে তা বেড়েছে। অপুষ্টির ক্ষেত্রে অনাহারের দায় বেশি হলেও স্থূলতারও ভূমিকা রয়েছে। সব অঞ্চলেই স্থূলতাজনিত অপুষ্টির হার বেড়েছে। অবশ্য পুষ্টির মাত্রা নির্ধারণকারী অপর এক মানদণ্ড হলো বয়সের তুলনায় কম উচ্চতাসম্পন্ন ৫ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা। এই সমস্যার শিকার শিশুর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে।
২০১২ সালে বয়সের তুলনায় কম উচ্চতার সমস্যায় আক্রান্ত ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা যেখানে ৬৫ লাখ ছিল, ২০১৮ সালে এসে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫ লাখে। তবে প্রাপ্তবয়স্কদের স্থূলতা ও নারীদের রক্তশূন্যতা হওয়ার হার পূর্বের তুলনায় বেড়েছে। ২০১২ সালে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে স্থূলতার শিকার মানুষের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ। ১১ লাখ বেড়ে ২০১৬ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখে। একইভাবে ২০১২ সালে রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত নারীর সংখ্যা যেখানে ১ কোটি ৭৪ লাখ ছিল, ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮২ লাখে।
১৯৯০ থেকে ২০১৬ সাল— এ সময়ে দারিদ্র্যের হার ৬০ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২৪ শতাংশ হওয়ার ফলে মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেলেও এখনো দেশে প্রায় ৪ কোটি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বসবাস।