ঝিনাইদহ-সহ যশোর অঞ্চলে শ্রাবণেও বৃষ্টির জন্য হাহাকার
#ঝিনাইদহের চোখঃ
দেশের উত্তরাঞ্চলে যখন বন্যার পানিতে ভাসছে, সেই সময় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চাষীরা আমন আবাদ করার জন্য গভীর নলকুপের পানি ব্যবহার করছেন।
এই শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির অভাবে চলতি আমন ধান রোপন মৌসুমে যশোর কৃষি অঞ্চলের ৬ জেলার কৃষক নাজেহাল হয়ে পড়ছেন।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির পরিবর্তে প্রচন্ড রোদ আর খরায় ধানের চারা রোপন করতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়ে স্যালোমেশিন থেকে ঘন্টা চুক্তি পানি নিয়ে ধান রোপন করছেন তারা।
যশোর কৃষি অঞ্চলের ৬ জেলায় এবার আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫৬ হাজার ১শ’ ২২ হেক্টর জমিতে। এই জেলা গুলো হলো যশোর, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। কিন্তু আমন চাষের এই ভর মৌসুমে বৃষ্টির দেখা নেই এই অঞ্চলে। ফলে কৃষকদের স্যালোমেশিনে পানি তুলে জমিতে দিতে হচ্ছে। যশোর কৃষি অঞ্চলের মধ্যে শুধু যশোরে গভীর নলকূপের সংখ্যা ১ হাজার ৬০২। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক নলকূপ ১ হাজার ৪৮৬ ও ডিজেলচালিত ১১৬টি। অন্যদিকে স্যালো টিউবওয়েল রয়েছে ৬৩ হাজার ৮৯৯টি। এর মধ্যে বৈদ্যুতিক ৬ হাজার ৭৮৪ ও ডিজেলচালিত ৫৭ হাজার ১১৫টি। কৃষি বিভাগ বলছে, বর্ষা মৌসুমে গভীর এবং অগভীর নলকুপের সব গুলোই চলছে এখন।
কৃষি বিভাগ বলছে, বৃষ্টি কম হওয়ায় এই অঞ্চলের চাষীরা স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে জমি পাকানোর কাজ করছে। তবে এখনও আমন মৌসুমের সময় আছে। আগামীতে বৃষ্টি হলে নেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
যশোরের ঝিকরগাছার নিশ্চিন্তপুর, কানাইরালী, সাদিপুর, দিঘড়ী, সোনাকুড়, হাজিরবাগ, শিত্তরদাহ, বল্লা গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠে ধান রোপণের জন্য পর্যাপ্ত পানি নেই। পানির জন্য স্যালোমেশিন চালিয়ে পানি তুলতে হচ্ছে। স্যালোমেশিন মালিকদের নিকট থেকে ১২০-১৬০ টাকা ঘন্টা চুক্তিতে পানি ক্রয় করতে হচ্ছে চাষীদের। ফলে কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এক দিকে কৃষি পণ্যের দাম কম, তারপরও যদি শুরুতেই পানি ক্রয় করে ধান রোপন করতে হয় তাহলে কৃষকের লোকসানের পরিমাণটা অনেক গুন বৃদ্ধি পাবে বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন কয়েকজন কৃষক।
কথা হয় নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক শিমুল কবির সাহাঙ্গীরের সঙ্গে। তিনি জানান, কৃষক ধান চাষের মৌসুম পায় তিনটি। বোরো, আউস ও আমন। বোরো ধান চাষ করতে হয় শীতের সময়। তাই বোরো চাষ করতে হয় স্যালোম্যাশিনের পানি দিয়ে। ফলে খরচ হয় অনেক বেশি। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আউস চাষ এখন আর হয় না। তাই লাভের আশা করতে হয় আমন চাষে। কিন্তু চলতি বছরে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও কোনো বৃষ্টি নেই। ফলে ধান রোপণে খুব বিপদে আছি।
একই গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম, ফজর আলী, মন্টু মিয়া, ইব্রাহিম হোসেন ও বাবুল আক্তার জানান, কৃষি পণ্যের দাম কম, বিশেষ করে ধানের। তারপরও যদি পানি কিনে ধান রোপন করতে হয়, তাহলে কৃষকের লোকসানের পরিমাণ অনেক বেশি হবে। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি অফিসার দিপঙ্কর দাশ বলেন, আকাশের পানি আর স্যালোমেশিনের পানির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। তবে স্যালোমেশিনের পানি দিয়ে আমনের আবাদ করলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে।