ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ ৯ রোগ প্রতিরোধ করবে ওটস
#ঝিনাইদহের চোখঃ
ওটস হল গমের মতই এক প্রকার খাদ্যশস্য যেটি যা ইদানিং ডায়েট সচেতন মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যদিও এটি আগে পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হত।
ওটস এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা লো-ফ্যাট ও পুষ্টি মানের জন্য এটি স্বাস্থ্যের জন্যও যথেষ্ট উপকারী একটা শস্য। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
ওটস দিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্বুস্বাদু ও পুষ্টিকর বিস্কুট, ব্রেড এবং কেক তৈরি হয়। ওটস থেকে তৈরি ওটমিল (Oatmeal) সাধারণত দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয়।
গবেষনা থেকে দেখা গিয়েছে যে এতে রয়েছে অতি উচ্চ মাত্রায় সহজে দ্রবণীয় বেটা-গ্লুকান, যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে। এবং ধারনা করা হয় হৃদরোগ কমাতেও সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া ও আরো কিছু কিছু উপকারী উপাদান আছে যেমন আলফা-টোকোটেরিওনল এবং আলফা-টোকোফেরল, যে উপাদানগুলো এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এবং হৃদযন্ত্র কে সুস্থ রাখতে, আলজেইমার রোগ, গ্লোকোমা এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
ওটস একটি খুব উপকারী শস্য। ওটস এ প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বিদ্যমান থাকে। এই ফাইবার আমাদের শরীরে নানা উপকারে আসে। চলুন সংক্ষেপে ওটস আমাদের কি কি ক্ষেত্রে উপকারী শস্য হিসেবে কাজে দেখে নেওয়া যাক।
১। ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে:
টমিল কিছু কিছু হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে। যে সব হরমোনের অতিরিক্ত ক্ষরণে স্তন ক্যান্সার হতে পারে। ওটমিলের হোল গ্রেইন্স পোষ্ট-মেনোপজাল মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।ওটসে রয়েছে ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট উপাদান যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি কার্যকর ভাবে ব্রেস্ট ও অন্যান্য হরমোন সম্পৃক্ত ক্যান্সার কে ধ্বংস করতে পারে। প্রতিদিন এক বাটি ওটমিল মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ৪১% পর্যন্ত কমাতে পারে বলে জানা যায়।
২। ওজন কমায়:
যারা ওজন কমাতে ও শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাদের জন্য প্রতিদিন সকালে এক বাটি ওটস নাশতা হিসেবে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। ওটস প্রোটিন ও ফাইবারে সমৃদ্ধ ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে।
২০১৩ সালের Journal of the American College of Nutrition একটি জরিপে বলা হয়েছে অন্য যেকোনো খাদ্যশস্যের তুলনায় ওটমিল বেশিক্ষণ পেট ভরা রাখে । গবেষকরা আর বলেন যে, স্বাদবিহীন ইনস্ট্যান্ট ওটমিল ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের মধ্যে স্বাদবিহীন ওটস অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে। কারণ এতে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বেটা গ্লুকোন ও পেপটাইডের বন্ধন। এ উভয় উপাদানই হল ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন ।
৩। কোলেস্টেরল কমায়:
ওটস এ বিদ্যমান ফাইবার লিপিড বা চর্বি কমায়। ওটসে রয়েছে অতি উচ্চ মাত্রায় সহজে দ্রবণীয় বেটা-গ্লুকান যা শরীরের জন্যে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে বেশ সহায়ক ভুমিকা পালন করে। ওটসের ডায়েটারিফাইবার কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, খিদে কমায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে।
৪। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
ওটস এ উচ্চ মাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল ও প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। ওটস্ এর এন্টিঅক্সিডেন্ট খুবই অনন্য যাকে এভেনানথ্রামাইডস বলা হয়। এটি ফ্রি-রেডিকেল কর্তৃক এল ডি এল কোলষ্টেরল এর ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে ফলে হৃদ রোগ হবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। ওটের লিগ্নান্স হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় ও বেটা গ্লুকোন হার্টের সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে:
ওটসে আছে উচ্চ মাত্রার শর্করা। তাই সকালের বা বিকেলের নাশতা হিসেবে এটি শরীরে শক্তি যোগাতে কাজ করে। আবার এতে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার ফলে এটি ধীরে ধীর হজম হয় এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে সীমিত রাখে। ওটমিল খুব সহজেই টাইপ ২ ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমাতে পারে বলে জানা যায়।
৫। ত্বকের যত্নে ওটের ব্যবহারঃ
কলোইডাল ওট এক্সট্রাক্ট ত্বকের মসৃনতা বৃদ্ধিতে, ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রুক্ষতা দূরে করে এবং ত্বকের প্রদাহ দূর করতে সহায়তা করে। ওটমিল খাওয়ার সাথে সাথে আপনি এটি মুখে বা শরীরের ত্বকে লাগাতে পারেন। এটি ত্বককে আর্দ্রতা প্রদান করে ও ত্বককে করে তুলে নরম ও কোমল। ওট অনেক প্রসাধন সামগ্রিতে যেমনঃ ক্লিঞ্জার, মাস্ক, ফেসিয়াল ক্রিমে ব্যবহার করা হয়।
৬। উচ্চ রক্তচাপ নিরাময় করে:
উচ্চ রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওটসের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ওটমিল রাখলে এটি সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। ওটসে বিদ্যমান ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও রোগ ব্যাধির ফরমেশন কে স্থির রাখে।
৭। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
এটি খাবারটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । ওটসে রয়েছে শহক্তিশালী ফাইবার ।এ ফাইবার রোগ প্রতিরোধক কোষ সৃষ্টি করে ও শরীরকে আরো বেশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন করে তুলে । ওটের বেটা গ্লুকোনের অ্যান্টি মাইক্রোবাইয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে শরীরকে মুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
৮। কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়:
ওটসের উচ্চ মাত্রার ফাইবার কোলন ও ইন্টেস্টাইনালের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে। এটি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় ও কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম করে।
৯। চিন্তা দূর করে:
এটি মস্তিষ্কে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। সেরোটোনিন হল এমন একটি হরমোন যা ক্ষুধা, ঘুম ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। সেরোটোনিন থাকার ফলে ওটস চিন্তা বা দুঃখ দূর কমাতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়াম গভীর ঘুমের জন্য দায়ী। ওটসে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম তাই এটি মনকে শান্ত ও প্রফুল্ল রাখতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।