#মনিরুজ্জামান সুমন, ঝিনাইদহের চোখঃ
২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ৪২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের (নিড বেস) বরাদ্ধ এসেছে। এরমধ্যে ২২টি বিদ্যালয়ে ২ লাখ ও ২০টি বিদ্যালয়ে দেড়লাখ টাকা করে বরাদ্ধ এসেছে। সর্বমোট বরাদ্ধের পরিমান ৭৪ লাখ টাকা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশীরভাগ বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র চুনকাম করে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করা হয়েছে। অথচ শিক্ষা অফিসে ১০০% টাকার কাজ দেখিয়ে ভূয়া বিল ভাউচার জমা দিয়েছে প্রতিষ্ঠান প্রধানগণ।
বিদ্যালয়গুলোতে ক্ষুদ্র মেরামতের নামে এলজিইডি কর্তৃক যে ইস্টিমেট দেয়া হয়েছে তা টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যেই অতিরিক্ত ইস্টিমেট বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগ উঠেছে এলজিডি ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগসাজশেই বরাদ্ধকৃত অর্থের প্রায় ৬০% টাকা আত্মসাতের পায়তারা চালাচ্ছে পিআইসিগণ।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, বরাদ্ধকৃত ৪২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র কয়েকটি বিদ্যালয়ের কাজের মান মোটামুটি সন্তোষজনক হলেও বাকি সব বিদ্যালয়ে কোন রকমে চুনকাম ও দু’একটি চেয়ার টেবিল তৈরী করেই দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে শিক্ষা অফিসে লম্বা বিল ভাউচার জমা দেয়া হয়েছে।
অথচ প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের রেজুলেশনে যে পরিমান কাজ উল্লেখ রয়েছে, তার ছিটেফুটা কাজও চোখে পড়েনি। এসকল বিদ্যালয়ের ভবনগুলোতে লামছাম কাজ করে বাংলাদেশ পতাকা সম্বলিত রং করে কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষকই আক্ষেপ করে জানিয়েছেন, বরাদ্ধকৃত অর্থের ১০% ভ্যাট, ২% আইটি, ৫% এলজিইডি, ৫% শিক্ষা অফিসসহ শিক্ষক সমিতিকেও এ টাকার ভাগ দিতে হয়।
এতে করে যে বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে তা থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকাই যদি কর্তন হয়ে যায় তাহলে কাজের মান ভালো হওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। তার উপর আবার নিজেদের পকেটের টাকা দিয়ে কাজ সম্পন্ন করে ভ্যাট আইটিসহ অন্যান্য সকল গোপন খরচ করতে হয়। বিল ভাউচার জমা দেওয়ার অনেক পরে বিল পাশ হয়। যে কারনে এ প্রকল্পের কাজে পিআইসিদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
এদিকে সচেতন মহলের প্রশ্ন, বিদ্যালয়গুলোতে যেসকল অর্থ বরাদ্ধ আসে তা কোথায় যায়? সামান্য রং কাজ করতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সর্বোচ্চ খরচ হতে পারে। তাহলে কেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা ইস্টিমেট করা হয়েছে? এছাড়াও প্রতি বছর ¯িøপ, টিএলএম, রুটিন মেরামতসহ শ্রন্ত বিনোদন বাবদ যে সকল বরাদ্ধ আসে তারও কোন হদিস পাওয়া যায়না। তাহলে এসকল বরাদ্ধকৃত অর্থ যায় কোথায়?
উল্লেখ্য সারুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি টিনের ঘরের মেঝে পাকা করেই দুই লক্ষ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।
তামিনগর, পদমদি বারুইপাড়া, কাঁচেরকোল, দিগনগর, ভাটই, ত্রিপুরাকান্দী, নাকোইল, বাজুখালী, জাঙ্গালীয়া, গাড়াগঞ্জ, মথুরাপুর, শেখপাড়া, রজনগর, বালিয়াঘাটা, মনোহরপুর, মাজদিয়া, গোবিন্দপুর, বসন্তপুর, মীনগ্রাম, আলমডাঙ্গা, নাদপাড়া, বরিয়া, ধাওড়া, দামুকদিয়া, খয়েরতলা, বিএলকে, আবাইপুর, আগবোয়ালিয়া, মহিষগাড়ী ও সাতগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েসহ প্রায় সব কয়টি বিদ্যালয়ে সামান্য রং করেই কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন জানান, ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ সরকারী বরাদ্ধের অর্থ থেকে ভ্যাট ট্যাক্স ছাড়া অন্য কোন টাকা কর্তনের সুযোগ নেই। সকল অর্থ সঠিক ভাবে খরচ না করলে বিল পাশ করা হবে না।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি লিয়াকত আলী বলেন, সরকারী বরাদ্ধের কোন অর্থ শিক্ষক সমিতি কর্তন করে না। বরং কাজ ভালোভাবে হচ্ছে কিনা তা সমিতির মাধ্যমে তদারকী করা হয় ।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ উসমান গনি জানান, সরেজমিন পরিদর্শণ শেষে শতভাগ কাজ বুঝে নিয়েই বিল ছাড়া হবে।