#আরিফ মোল্ল্যা, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহর সমাজের অসহায় নারীরা তৈরী করছেন স্যানেটারী ন্যাপকিন। মোট ১৭ জন নারী স্বাস্থসম্মত ন্যাপকিন তৈরী করছেন। এতে ফিরে এসেছে তাদের সাংসারিক স্বচ্ছলতা।
এ সমস্ত হতদরিদ্র মহিলাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে ওয়েল সার্জিক্যাল ইন্ডাসট্রিজ লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কালীগঞ্জের বাকুলিয়া গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ওয়েল সার্জিক্যাল এ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় কাজ করেন। তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বাস্থ্য সম্মতভাবে তৈরী করছেন সার্জিক্যাল চিকিৎসায় ব্যবহৃত কটন, গজ, ব্যানডেজ, প্যাড, সিজার বেল্ট, মাথা ব্যথায় ব্যবহৃত কোর সেট বেল্ট, গলার বেল্ট, আর্ম সেলিং ব্যান্ডেজসহ মানবদেহের বাহ্যিক চিকিৎসা সংক্রান্ত ১৪ প্রকার জিনিসপত্র।
অসহায় জীবনের গল্প শোনালেন রাজিয়া, রুনা আকতার, পলি, রোজিনা আকতার ,পলি বেগম, সাকিলা আকতার , ময়না খাতুন,পিংকি রানী দাস, সোনিয়া আকতার, মাছুদা খাতুন, লিপি খাতুন, রুমি খাতুন,স্বপ্না, বিজলীসহ জীবনযুদ্ধে শামিল হওয়া অসহায় ১৭ জন নারী। যারা এখন সকলেই সাংসারিকভাবে স্বাবলম্বি।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, মেয়েরা কেউ বিভিন্ন প্রকার বেল্টের কাপড় কাটছেন, কেউ সেলাই করছেন, কেউ তৈরীকৃত জিসিপত্রের প্যাকিং করছেন। অন্যদিকে কেউ ঘুরে ঘুরে কাজ তদারকি করছেন। আবার তৈরীকৃত মাল বাজারজাত করতে কার্টুন ভরে নিয়ে যাচ্ছেন মার্কেটিংয়ে নিয়োগ প্রাপ্তরা। ফলে সবাই যেন নিজ নিজ কাজে মহাব্যস্ত।
কথা হয় এখানে কর্মরত বিজলী খাতুনের সাথে তিনি জানান, বেশ কিছুদিন আগে তার স্বামী মারা গেছে। স্বামীর সংসারে তেমন কিছুই নেই। তার একটা ছেলে রয়েছে। এতোদিন ভ্যানচালক বাবার ঘাড়ে বোঝা হয়ে ছিলেন। এরপর এখানে কাজ পেয়ে যা বেতন পাচ্ছেন তা দিয়ে এখন চলতে পারছেন।
তিনি বলেন, এতোদিন হতাশার মধ্যে দিন কাটতো। এখন অন্তত দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে ছেলেটা মানুষ করার মত একটা পথ খুঁজে পেয়েছেন।
রোজিনা খাতুন জানান, সারাবছর সাংসারিক অভাব অনাটনের মধ্যদিয়ে জীবন চলতো। এখানে কাজ পেয়ে প্রতি মাসে সাড়ে ৪ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। যা দিয়ে তার সংসার চলছে। বাঁচতে পারছেন আত্ম সম্মান নিয়ে।
সাকিলা খাতুন জানান,এখানে যারা কাজ পেয়েছেন তারা সকলেই অসহায় হতদরিদ্র। আগে তাদের মত মহিলাদের কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকাসহ দেশের দুরদুরান্তের গামেণ্টসসহ বিভিন্ন কলকারখানায় যেতে হতো। কিন্ত এখন সংখ্যায় কম হলেও তারা বেশ কিছু মহিলা বাড়ি থেকে এসে এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারছেন।
তিনি জানান,এখানে যারা কাজ করেন তাদের কাজ খুব প্রয়োজন ছিল। তারা সকলেই মনে করেন কোম্পানী টিকে থাকলে তাদের কাজ থাকবে। ফলে তারা নিজেদের সংসারের কাজের মত যত্নশীলভাবে কাজ করেন।
আলেয়া বেগম জানান, সমাজে তার মত অসহায় মেয়েদের সংখ্যা কম নয়। কিন্ত শত অভাব অনাটনের মধ্যেও অনেকে কাজ করতে এলাকা ছেড়ে দুরে কোথাও যেতে পারেন না। যে কারনে সরকারী উদ্যোগে অথবা বিত্তবান লোকেরা যদি এমন মফস্বল পর্যায়ে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তাহলে অসহায় নারীদের কর্মসংস্থান হবে। তাদেরকে অন্যের ঘাড়ের বোঝা হতে হবে না।
এ প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার বাহারুল ইসলাম জানান, তাদের এখানে কাজ করা কয়েকজন ছাড়া অধিকাংশই সমাজের অসহায় নারী। এ সকল জিনিস তৈরীতে পূর্বে কোন অভিজ্ঞতা ছিল না। তাদের কে এ চিকিৎসা সামগ্রী তৈরীর জন্য ঢাকা থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু লাভবান হওয়ার চিন্তায় তাদের নেই। তাদের লক্ষ্য এ এলাকার অসহায় মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।