পশু জবাইয়ের সময় যে ভুল করলে কুরবানি হয় না
#ঝিনাইদহের চোখঃ
পশু কুরবানি করা মহান আল্লাহর হুকুম। যা সামর্থবানদের ওপর ওয়াজিব। অনেকেই পশু জবাইয়ের সময় সামান্য একটি ভুল করে থাকেন। যে ভুলের কারণে পশু কুরবানি না হয়ে তা হত্যায় পরিণত হয়। সব কুরবানি দাতাদের জন্য বিষয়টি জেনে নেয়া অত্যন্ত জরুরি। আর তাহলো-
পশু জবাইয়ের পর ১০/১৫ মিনিট সময় বাঁচাতে গিয়ে অনেকেই এ সামান্য ভুলটি করে থাকেন। সমাজে পশু জবাইয়ের একটি প্রচলিত বিষয় হলো- পশু জবাইয়ের পর ধারালো ছুড়ির আগা দিয়ে জবেহের স্থানে (মেরুদণ্ডে) আঘাত করা। এ কাজটি কোনোভাবেই ঠিক নয়।
কারণ, পশুর জবাইয়ের স্থানে আঘাত করলে সে পশু স্বাভাবিকভাবে মরে না বরং ওই আঘাতে গরু হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। যা পশু জবাইয়ের সঠিক পদ্ধতি নয়।
ওই আঘাতে যদি কোনো গরু হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়, তবে তা দিয়ে কুরবানি আদায় হবে না। এ ছোট্ট ভুলটির কারণে অনেক সময় মানুষের কুরবানি বরবাদ হয়ে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে এ কাজের ক্ষতি ও অপকারিতা
পশু জবেহের যে স্থানে তীক্ষ্ণ ছুড়ি ঢুকিয়ে দেয়া হয়, সেটি মূলতঃ ‘মেরুরজ্জু বা স্পাইনাল কর্ড’-এর অংশ। ছুড়ির আঘাতে পশুর স্পাইনাল কর্ড বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেই পশুর দেহ থেকে মস্তিষ্কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে পশুটি হার্ট অ্যাটাক করে এবং মারা যায়। তখন এটি জবাই সাব্যস্ত না হয়ে হত্যায় পরিগণিত হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও পশু জবাইয়ের এ পদ্ধতিটি অত্যন্ত গর্হিত এবং বিপদজনক কাজ। কেননা স্পাইনাল কর্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে সব রক্ত পশুর দেহ থেকে বের হতে পারে না। পশুর দেহের মাংশপেশিতেই রক্ত জমাট বেঁধে যায় এবং গোশত দূষিত হয়ে পরে।
কুরবানি করা পশুর এ দুষিত গোশত খেলে অনেক সময় ক্যান্সার, এইচবিএএসসহ অন্তত ১৮ ধরনের জটিল রোগের সৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। তাই সঠিক পদ্ধতিতে কুরবানি ও স্বাভাবিক জবাই সম্পন্ন করা জরুরি।
পশু জবাই করার সঠিক পদ্ধতি
কুরবানির পশুসহ যে কোনো পশু জবাই সম্পন্ন হওয়ার জন্য পশুর মূল ৩টি রগ কেটে দিতে হয়। ৩টি রগ কেটে দেয়া হলে পশুর দেহ থেকে সব রক্ত বের হয়ে যায়। রক্ত বের হয়ে যাওয়ার ফলে পশু স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় মারা যায়। আর এভাবে পশু জবাই করা উত্তম। যাতে কুরবানি বা জবাই বাতিল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
সুতরাং নিরাপদ ও বিশুদ্ধ কুরবানি আদায় করতে পশু কুরবানি বা স্বাভাবিক জবাইয়ের পর পশুর দেহ থেকে রক্ত বের হওয়া পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা জরুরি। তাতে কুরবানি হবে বিশুদ্ধ। আর কুরবানি পশুর গোশতও হবে খাওয়ার উপযুক্ত এবং ঝুঁকিমুক্ত।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সঠিক উপায়ে কুরবানি করার তাওফিক দান করুন। পশুকে অতিরিক্ত কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় ক্ষতি ও রোগ-বালাই থেকে হেফাজত করুন। আমিন।