অন্যান্য

চলে যাওয়ার দুই বছর

#ঝিনাইদহের চোখঃ

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট ভক্ত-দর্শকদের কাঁদিয়ে চিরবিদায় নেন। কিংবদন্তি এই অভিনেতার চলে যাওয়ার আজ দুই বছর।

নায়করাজের মৃত্যুবার্ষিকীতে আজকের আয়োজন প্রসঙ্গে রাজ্জাকের ছোট ছেলে নায়ক সম্রাট বলেন, বাবার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ জোহরের নামাজের পর পরিবারের সকলে মিলে আমাদের বাসাতেই দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের তিনশ ফিটের রাস্তা সংলগ্ন আমাদের এতিম খানায় এতিমদের নিয়ে কোরআন খতমসহ শিশুদের খাওয়ার আয়োজন করেছি।

এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, পরিচালক সমিতি, প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সদস্যরা নায়করাজ রাজ্জাকের স্মরণে দোয়া ও তার কবরস্থান জিয়ারত করবেন বলে জানা যায়।

বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের হিরো বলা হতো রাজ্জাককে। চিত্রালীর সম্পাদক প্রয়াত আহমদ জামান চৌধুরী নায়ক রাজ্জাককে ‘নায়করাজ’ উপাধি দিয়েছিলেন।

নায়করাজ রাজ্জাকের প্রকৃত নাম আব্দুর রাজ্জাক। তিনি ১৯৪২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই রাজ্জাক অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৬৪ সালে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। তখন রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় জহির রায়হান পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’।

পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের অভিনেতা হিসেবে রাজ্জাক অনেক ধরনের চরিত্রে প্রতিনিয়ত সাবলীল অভিনয় করতে পারতেন। শুধু রোমান্টিক নায়ক নয়, অ্যাকশন ও জীবনের গল্প পাওয়া যায় এমন প্রায় সব বাঙালি চরিত্রের সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে তাকে পাওয়া গেছে।

‘বেহুলা’ ছবি দিয়েই ঢাকাই চলচ্চিত্রে দীর্ঘ অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন রাজ্জাক । এরপর অসংখ্য হিট চলচ্চিত্রে উপহার দেন বাংলাদেশি সিনেমার দর্শকদের। ‘বেহুলা’ ছবির নায়কের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেন রাজ্জাক। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই মহানায়ককে। কয়েকদশকের অভিনয় জীবনে -‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘মধু মিলন’, ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘যে আগুনে পুড়ি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘কী যে করি’, ‘ আলোর মিছিল’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’, ‘নাচের পুতুল’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’, ‘অবুঝ মন’, ‘গাঁয়ের ছেলে’, ‘বেঈমান’, ‘আনারকলি’, ‘কালো গোলাপ’, ‘বদনাম’, ‘শুভদা’, ‘রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত’, ‘বড় ভাল লোক ছিল’, ‘বাবা কেন চাকর’ ইত্যাদি।

তার প্রথম নায়িকা ছিলেন সুচন্দা। তিনি সুচন্দার পর শবনম, কবরী, ববিতা, শাবানাসহ তখনকার প্রায় সব অভিনেত্রীকে নিয়ে একের পর এক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দেন।

রাজ্জাক প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। নায়করাজ শুধু নায়ক হিসেবেই নয়, প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবেও চলচ্চিত্রাঙ্গনে সফল ছিলেন। তার প্রযোজনা সংস্থার নাম রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। সর্বশেষ তিনি ‘আয়না কাহিনী’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন।

চলচ্চিত্রের বাইরে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও কাজ করেছেন নায়করাজ রাজ্জাক।

নায়ক রাজ্জাক প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন ‘কি যে করি’ সিনেমায় অভিনয় করে। এরপর আরও চারবার তিনি জাতীয় সম্মাননা লাভ করেন। ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননা দেওয়া হয় তাকে। এছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার পেয়েছেন বেশ কয়েকবার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button