জানা-অজানা

আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস

#ঝিনাইদহের চোখঃ

আজ ২৩ আগস্ট, আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বে এদিন দিবসটি পালিত হয়।

দাস প্রথাকে মানব ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় বলা যায়। এখন দাস প্রথাকে যত অদ্ভুতই মনে হোক না কেন, এক সময় এটিই ছিল স্বাভাবিক। বিত্তশালীদের আভিজাত্যের প্রতীক ছিল দাস। শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণির ঘরেও দাস থাকতো।

অবশ্য এখন সবাই দাস প্রথাকে অমানবিক মনে করেন। এই দাস প্রথাকে উচ্ছেদ করতে গিয়েই যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ বেধে গিয়েছিল। সে যুদ্ধে আব্রাহাম লিংকন জিতেছিলেন এবং দাস প্রথার বিলোপ ঘটাতে পেরেছিলেন।

দাস ছিল মুনিবের সম্পত্তি, বিনা পারিশ্রমিকে সে দাসকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারত। সে সময় অনেকেই ঋণের দায় থেকে বাঁচতে দাসত্বকে বরণ করে নিতে বাধ্য হত। দাসের সন্তানও দাস বলে গণ্য হত। যুদ্ধে পরাজিত হয়েও অনেকসময় দাসত্ব বরণ করতে হত। অমানবিকভাবে সারা জীবন খেটে মরতে হত তাদের। এ চক্র থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না, যদি না তাদের মুনিব তাদের মুক্তি দেয়।

কোম্পানিশাসিত বাংলাসহ সারা বিশ্বেই দাস কেনা বেচার জন্য বাজার গড়ে উঠেছিল। এ বাজারে আফ্রিকার নিগ্রোদের চাহিদাই বেশি ছিল। তাদের জোর করে ধরে আনা হত। আর বিক্রি করা হত ইউরোপের বাজারে।

কৃষিকাজ এবং গৃহস্থলির কাজে জন্য দাসদের ব্যবহার করা হত। এ ছাড়া উচ্চবিত্ত শ্রেণি লালসা মেটানোর জন্যও দাসীদের ব্যবহার করেছিল।

দাস প্রথা অনেক মর্মান্তিক ঘাটনারও জন্ম দেয়। আটলান্টিকের এপার-ওপারে যখন দাস পরিবহন ব্যবসা জমজমাট, তখন দাসের মর্যাদা সাধারণ পণ্যের চেয়ে কিছু বেশি ছিল না। কখনো জাহাজে কোন দাস অসুস্থ হয়ে পড়লে মহামারির ভয়ে দ্রুত তাকে সমুদ্রে ফেলে দেয়া হত।

১৭৯১ সালের ২২ ও ২৩ আগস্ট রাতে আজকের হাইতি এবং ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে যে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল তাই দাস প্রথা বিলুপ্তির পথে মানব সভ্যতাকে এগিয়ে দেয়।

১৮০৭ সালে বৃটেনে দাস প্রথা নিষিদ্ধ হয়, রাশিয়ায় হয় ১৮৬১ সালে; আর এর চার বছর পর রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রেও দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়।

অবশ্য দাস প্রথা বিলুপ্তির ফলে অনেক জায়গায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভ্রান্ত কৃষকশ্রেণি দাস প্রথার বিলুপ্তি কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি।

মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক ঘোষণা প্রত্যেক মানুষের সমঅধিকারের পক্ষে কথা বলে, মানুষের মুক্তি আর স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে; যা দাস প্রথার সঙ্গে বেমানান। আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবসে দাস বাণিজ্যের শিকার সেসব নিপীড়িতদের স্মরণ করা হয়।

দিবসটি সর্বপ্রথম উদযাপন করা হয় হাইতিতে, ১৯৯৮ সালে। তারপরের বছর এটি সেনেগালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাপন করা হয়। এখন এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালন করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button