ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

ডাকাতমুক্ত করতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে পুলিশের কৌশল পরিবর্তন

#ঝিনাইদহের চোখঃ

আগে রাত ২টার পর্যন্ত টহল চললেও এখন সকাল পর্যন্ত টহল বাধ্যতামূলক। ৬ মাসে ২ ডাকাতির ঘটনায় ১০জন ডাকাত গ্রেফতার। আগে কিছুদিন পরপরই কুষ্টিয়ার ৪টি মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্টে ডাকাতি হতো।

মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে অস্ত্র ঠেকিয়ে যাত্রীদের সব কিছু লুটে নেয়া হতো। তবে ডাকাত নির্মূল ও ডাকাতি বন্ধে রাতের টহলে কিছু পরিবর্তন আনে পুলিশ। আগে রাত ২টার পরে সড়কে থানা পুলিশের টহল থাকতো না। এর এ সুযোগটা নিত ডাকাত দলের সদস্যরা।

ফজরের নামাজের আগ দিয়ে তারা ডাকাতি করে দ্রুত সটকে পড়তো। তবে এবার পুলিশ সুপারের নির্দেশে ফজরের নামাজের পরেও টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে জেলায় ডাকাতি প্রায় শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তারপরও বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতরা তৎপর রয়েছে বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া-আলমডাঙ্গা সড়কের পাটিকাবাড়ি এলাকায়, কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের মহিষডাঙ্গা ও শান্তিডাঙ্গায়, কুষ্টিয়া মেহেরপুর সড়কের মশান ও কাতলাগাড়ি, কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের ভেড়ামারার বারমাইল ও লালন শাহ সেতু পয়েন্ট বেশ কিছুদিন আগেও নিয়মিত ডাকাতি হতো।

পুলিশের সাথে ডাকাতদের সখ্যতার অভিযোগ ওঠে। ঘনঘন ডাকাতি হওয়ার এইসব সড়কে যাতায়াতকারি যানবাহন চালক ও যাত্রীরা আতঙ্কে থাকতো। এতে জেলা পুলিশের দায়িত্ব নিয়ে আইন শৃংখলা কমিটির সভায় নানা প্রশ্ন উঠে। তবে সেই দৃশ্যপট অনেকটা বদলে গেছে। এসব সড়ক যানবাহন চালক ও যাত্রীদের জন্য নিরাপদ করতে পুলিশ তাদের নিত্যদিনের টহলে কিছু পরিবর্তন আনে।

বিশেষ করে যাতে রাতের বেলার বাইরের কোন জেলা থেকে ডাকাত এ জেলায় প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য মধ্যরাত থেকে শুরু করে ফজরের নামাজ না হওয়া পর্যন্ত সড়কে চেক পোষ্ট বসিয়ে তল্লাসী শুরু করা হয়।

এছাড়া বিশেষ টহল বসানো হয় সড়কে। ফোর্সরা যাতে ফাঁকি না দেয় সে জন্য পুলিশ সুপার নিজে মনিটরিং করেন নিয়মিত।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আগে বাইরের জেলা থেকে ডাকাত জেলায় ঢুকে ডাকাতি করে চলে যেত। স্থাণীয় ডাকাতরা তাদের সহযোগিতা দিয়ে আসতো। বিষয়টি জানার পর প্রবেশ পথগুলোতে টহল জোরদার করা হয়। আগে পেট্রল টিম রাত ২টার পর ঘুমিয়ে পড়তো, এখন সারারাত জেগে পাহারা দেয়া লাগে। কারণ ডাকাতি হয় নামাজের আগে। পুলিশ টহল এ সময়টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে সুফল পাওয়া যা”েচ্ছ। সড়কে ডাকাতি প্রায় শুণ্যের কোঠায় নেমে এসেছে।’

কুষ্টিয়ার মিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম বলেন, মিরপুর-মেহেরপুর রুটের কয়েকটি স্থান রয়েছে সেখানে আগে ডাকাতি হতো। লোকজন রাতে ভয়ে এ সড়কে চলাচল করতে ভয় পেত। এখন টহলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বর্তমান এসপি স্যার রাত ২টার নিয়ম ভেঙ্গে সারারাত পাহারার ব্যবস্থা করেছে। এতে ডাকাতি প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।

এছাড়া গত এক বছরে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ডাকাতদের অনেকে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। ভয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর মাঝে ঈদের আগে ভেড়ামারা থানার লালন শাহ সেতু সংলগ্ন এলাকায় গরু বিক্রি করে আসার সময় ব্যাপারিদের গাড়িতে ডাকাতি হয়। পুলিশ এক সপ্তাহের মধ্যেই ডাকাতদের গ্রেফতার করে। এরা সবাই নতুন ডাকাত বলে পুলিশ জানিয়েছে। এক গরু ব্যাপারীর সাথে আঁতাত করে তারা এ কাজ করে।

এছাড়া মিরপুরে আরেকটি ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ ৪জনকে গ্রেফতার করে। এসব ঘটনায় খোয়া অর্থ উদ্ধার করে পুলিশ।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে থানার ওসিরা ডাকাতদের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়ায় আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেত। এতে তারা আবার একই কাজে জড়িয়ে পড়ত। তবে এখন ডাকাতদের বিরুদ্ধে শক্ত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ডাকাতরা সাধারন সড়কে ডাকাতি করে ভোরের দিকে। তাই পুলিশের টহল ও চেক পোষ্টে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার কারনে ডাকাতরা সুবিধা করতে পারছে না। জেলাকে ডাকাতমুক্ত করতে কৌশলে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কৌশলে পরিবর্তণ আনায় সফল হচ্ছে পুলিশ। আর সারারাত সড়ক নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারছে যানবাহন চালক ও যাত্রীরা।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button