ঝিনাইদহে মহাবিপাকে গো-খাদ্যের ব্যবসায়িরা (ভিডিও-সহ)
#মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহে অধিকাংশ গো খামারি ও মওসুমি গরু ব্যবসায়িরা কোরবানিতে গরু বিক্রিতে লোকসান গুনতে হয়েছে। আবার কেউবা গরু বিক্রি করতে না পেরে হতাশ। জেলায় কোরবানির হাটে বিক্রির গরুর সংখ্যা প্রায় ১৮’হাজার আর এসকল গরুর দাম প্রায় ১’শ কোটি টাকা।
জানা গেছে, গরুর দাম ভালো না পাওয়ায় ও টার্গেপ মোতাবেক বেশীরভাগ গরু বিক্রি করতে না পারায় গো খাদ্যের ব্যবসায়িরা তাদের পাওনা আদায়ে মহাবিপাকে পড়েছে।
ব্যবসায়িরা জানান, চাহিদার তুলনায় যোগান বেশি, অধিকাংশ হাট গুলোতে মাঝারি ও ছোট গরুর চাহিদা বেশি, প্রতিটি জেলায় গরুর খামার, বন্যা, স্থানীয় বাজার গুলোতে দরপতনের কারনে কম দামে গরু বিক্রি হওয়া সর্বপরি ঈদের দুই দিন আগে গরু বিক্রি শুরু হওয়ায় অনেক খামারি ও ব্যবসায়িরা কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হন। ফলে বেশি লোকসানের কারনে গরু বিকি না করে অনেকে ফেরত এনেছেন।
জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, এবছর কোরবানির পশু হাটগুলোতে বিক্রির জন্য জেলার ২৩৭টি খামারে ৫৫’হাজার ৮৯৬টি গরু মোটাতাজা করা হয়।
তবে বেসরকারি হিসাব মতে চাষিদের বাড়িতে পালন ও অনিবন্ধিত খামারের হিসাব মতে গরুর সংখ্যা আরো বেশি। এ সকল খামার গুলোতে দেশি জাতের পাশাপাশি ক্রস জাতের পাবনা ব্রিড, অস্টোলিয়ান ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্থানী শাহিয়াল ব্রিড গরু মোটাতাজা করা হয়। কোরবানির মাসখানেক আগে থেকে এসব গরু জেলার ২৭টি পশুহাটে বিক্রির জন্য উঠতে থাকে।
একাধিক গরু বিক্রেতা জানান, এবার শুরুতেই হাট গুলোতে ক্রেতা কম ছিল। কোরবানি সপ্তাহ খানেক আগে প্রচুর পরিমানে হাটগুলোতে গরু আসতে শুরু করে। দামও ছিল গত বছরের তুলনায় বেশ কম। বড় বড় সাইজের গরুর ক্রেতা স্থানীয় বাজারগুলোতে একেবারেই ছিল না বললেই চলে। হাটে ৩৫ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের গরুর চাহিদা বেশি ছিল। তাও আবার সব গরু বিক্রি হয়নি।
তার আরো জানায়, অনেক ব্যাপারী ও খামার মালিক হাট থেকে গরু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে নিয়ে যায়। সেখানেও আবার সব গরু গুলো বিক্রি হয়নি। এ সকল অবিক্রিত গরুর আনুমানিক মূল্য প্রায় ২’শ কোটি টাকার উপরে। আবার অবিক্রিত গরু গুলো পালন করতে মালিকদেরও বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে।
কোটচাঁদপুরের সাব্দারপুরের গরু ব্যবসায়ি ইসমাইল হোসেন জানান, তিনি ১৯টি গরু ঢাকাতে নিয়ে যান। ১৪টি গরু কম দামে বিক্রি করেছেন। বিক্রি না হওয়ায় পাঁচটি গরু ফেরত এনেছেন। গরুগুলোতে বিক্রিতে তার প্রায় ৩’লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গোপালপুরের গো খাদ্যের ব্যবসায়ি সাইফুল ইসলাম জানান, কোরবানির আগে গরু বিক্রি করে অনেকেই হিসাবের টাকা দিয়ে গেছে। কিন্তু ঈদের পর কোন গরুর মালিক খাদ্যও নিতে আসেনি টাকাও দেয়নি।
তিনি আরও জানান, আমি নিজেও একটি গরু ঈদের দেড় মাস আগে ৮০’হাজার টাকা দাম হয়। কিন্তু ঈদের কয়েকদিন আগে সেই গরুটি ৩৫’হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আমার মত অনেকেই এমন কম দামে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাফিজুর রহমান জানান, এবার ঝিনাইদহ জেলায় চাহিদার অতিরিক্ত গরু কোরবানির পশুহাটে বিক্রির জন্য মোটাতাজা করন করা হয়। কিন্তু এবছর ২৫ থেকে ৩০ ভাগ গরু বিক্রি না হওয়ায় তারা হতাশ হয়েছে। তাছাড়া গো খাদ্যের দামও বেশ চড়া। ফলে অবিক্রীত গরু নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছেন খামারিরা বলে জানান তিনি।