কালীগঞ্জক্যাম্পাস

মোটরচালিত হুইলচেয়ারে আটকে ঝিনাইদহের প্রীতিলতার স্বপ্ন

#ঝিনাইদহের চোখঃ

প্রীতিলতা সাহা জন্মগতভাবেই প্রতিবন্ধী। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া সে হাঁটতে পারে না। নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রীতিলতার স্বপ্ন উচ্চশিক্ষিত হওয়ার। তার স্বপ্ন পূরণে অন্তরায় মোটরচালিত হুইলচেয়ার। এটি হলেই সে তার স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে পারবে।

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের সুজাতা সাহার মেয়ে প্রীতিলতা। সে মস্তবাপুর সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাড়ি থেকে তার স্কুলের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। স্কুলে যাওয়া-আসা করতে একটি মোটরচালিত হুইল চেয়ারের দরকার প্রীতিলতার। কিন্তু চেয়ার কিনের দেওয়ার সামর্থ্য নেই তার মা সুজাতার।

২০০৯ সালে প্রীতিলতার বাবা প্রশান্ত সাহা মারা যান। এরপর থেকে অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী। মা সুজাতা ২০১১ সালে যশোর সদর উপজেলার সাতমাইল সামনগর গ্রামে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি কালীগঞ্জে চলে আসেন। প্রীতিলতার নানার তেমন জমাজমি নেই। তাই এক চাচাতো ভাইয়ের জমিতে ঝুপড়িঘর তৈরি করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেন সুজাতা। অর্ধাহারে, অনাহারে চলে তাদের সংসার। শত কষ্টের মাঝেও থেমে নেই প্রীতিলতার লেখাপড়া। সে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির পর তার নানা বাইসাইকেলে করে স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজ করতো। নানা শয্যাশায়ী হওয়ার পর প্রীতিলতাকে পড়তে হয় মহাবিপদে। সে সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রীতিলতাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর দু’টি হুইলচেয়ার ও জেলা পরিষদ থেকে একটি ব্যাটারিচালিত গাড়ি পায়। হুইলচেয়ার দু’টি এখন প্রায় অকেজো এবং ব্যাটারিচালিত গাড়িটি স্থানীয় ইউপি সদস্য মহিব হোসেন নিয়ে অন্য আরেক প্রতিবন্ধীকে দেয় বলে প্রীতিলতার পরিবার জানায়।

মা সুজাতা বলেন, ‘গাড়িটি থাকলে আজ মেয়েকে এত কষ্ট করে স্কুলে যেতে হতো না।’

প্রীতিলতার বান্ধবী ইভা, জয়া, রুনা, সাদিয়াসহ অনেকে জানায়, হুইলচেয়ার নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাকে ওই চেয়ারে করে স্কুলে আনা-নেওয়া করতে তাদের বেশ কষ্ট হয়। তারা প্রীতিলতার জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে একটি হুইলচেয়ার কিনে দেওয়ার আবেদন জানিয়েছে।

প্রীতিলতা বলে, ‘বান্ধবীদের সহয়তায় স্কুলে যাই। হুইলচেয়ারটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বান্ধবীদের বেশ কষ্ট হয়। তারপরও ওরা কষ্ট করে আমাকে স্কুলে নিয়ে আসে। আমি ওদের প্রতি কৃতজ্ঞ। উচ্চশিক্ষা শেষ করে স্বাবলম্বী হতে চাই।’

প্রীতিলতার মা জানান, বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। অভাবের সংসারে ছোট মেয়েকে নিয়েই তার স্বপ্ন। প্রীতিলতা পড়াশোনায় অনেক ভালো। স্কুলের স্যাররা তাকে সহযোগিতা করেন। স্কুলে যাওয়া আসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের কাছে একটি মোটরচালিত হুইলচেয়ারের দেওয়ার অনুরোধ জানাই। সহযোগিতা পেলে আমার মেয়ে অনেক ভালো কিছু করতে পারবে।’

সারা জীবন যেন মানুষের করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকতে না হয় সেজন্য সবার সহযোগিতা চায় প্রীতিলতা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button