কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহে বন্ধুহাটে দেয়াল তুলে শত্রুতা

#ঝিনাইদহের চোখঃ

কুল্লাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত ‘বন্ধুহাট’ দিয়ে বাড়ানো হয়েছে শত্রতা। হাটের শ্রীবৃদ্ধি বাড়ানোর অজুহাতে দুই ব্যবসায়ীর দোকানের সামনে তুলে দেওয়া হয়েছে সিমানা প্রাচীর। আটকে দেওয়া হয়েছে তারে ৬টি দোকান। বাজারে কোথাও সিমানা প্রাচীর না থাকলেও শুধুমাত্র ওই দোকানগুলোর সামনে এই প্রচীর দিয়েছেন বন্ধুহাটের প্রতিষ্ঠাতারা।

ব্যবসায়ীদের একজন আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেছেন তাদের সঙ্গে কেন এই শত্রতা করা হলো তা তারা নিশ্চিত নন। তবে ইতিপূর্বে বাজারের জায়গা দখল করে সেখানে ঘর নির্মান করতে গিয়েছিলেন স্থানিয় এক প্রভাবশালী। এতে বাঁধা পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে শত্রæতা বাড়াতে প্রশাসনকে দিয়ে তিনিই এই কাজটি করিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, এই প্রাচীর দেওয়ার কারনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে তিনি পাশ^বর্তী আরেকটি বাজারে রাস্তার ধারে ফলের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে সৃষ্টিশীল প্রকল্প উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠিত এই বন্ধুহাটটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কুল্লাপাড়ায় অবস্থিত। সরেজমিনে হাটটি ঘুরে স্থানিয়দের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, কুল্লাপাড়া বাজারটি রাখালগাছি ইউনিয়নের একটি ছোট্ট বাজার। এই বাজারে প্রায় অর্ধশত স্থায়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার এখানে খোলা বাজার বসেন। যেখানে সবজি-মাছ সহ নানা পন্য কেনাবেচা হয়। বাকি ৫ দিন স্থায়ি দোকানগুলো খোলা থাকে। বাজারে তিনটি চাঁদনি রয়েছে। যা সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার হয়। বাজারের সঙ্গেই রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাজারটি ঘিরে বাসাবাড়িও নির্মান শুরু হয়েছে। বাজারের দক্ষিণে ব্যক্তি মালিকানার জায়গায় থাকা ৬ টি বন্ধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যার সামনে রয়েছে দোকান সমান উচু প্রাচীর।

আমিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি জানান, ২০১৬ সালে কালীগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন নির্বাহী কর্মকর্তা মানোয়ার হোসেন মোল্লা এই বাজারে আসেন। তিনি সৃষ্টিশীল কাজের অংশ হিসেবে কুল্লাপাড়া বাজারটিকে ‘বন্ধুহাট’ নামকরণ করে এখানে কিছু উন্নয়নের ঘোষনা দেন। এলাকার লোকজনও সেটাকে সাদরে গ্রহন করেন। পরে বাজারের শ্রীবৃদ্ধির কথা বলে একটি সিমানা প্রাচীর ও একটি টয়লেট নির্মানের উদ্যোগ নেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তর সুত্রে জানাযায়, এই সৃষ্টিশীল কাজে বাজার উন্নয়নে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। স্থানিয় রাখালগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলাম প্রকল্প সভাপতি হয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেন।

ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, বন্ধুহাট শ্রীবৃদ্ধির নামে প্রথমেই শুরু হয় শত্রæতা। তারা বাজারের দক্ষিণ পাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে প্রাচীর নির্মান শুরু করেন। দোকানীরা বাঁধা দিতে গেলেও কোনো কাজ হয়নি। দুই মালিকের থাকা ৬ টি দোকানের সামনে দোকান সমান উচু করে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। বাজারের সব অংশ খোলা থাকলেও শুধু ওই দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আটকে দেওয়া হয়েছে এই প্রাচীর দিয়ে। আর পশ্চিম পাশে নির্মান করা হয়েছে টয়লেট। সেখানে স্থাপন করা হয়েছে একটি টিউবওয়েল।

কুল্লাপাড়ার পাশ^বর্তী এনায়েতপুর গ্রামের আব্দুল গনির পুত্র আব্দুস সাত্তার জানান, ২০১৩ সালে তিনি অনেক কষ্ট করে বাজারের সঙ্গে ২৩ শতক জমি ক্রয় করেন। এই জমি বাজারের পাশের অংশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

সেখানে দুইটি দোকান নির্মান করে মুদিখানার মালামাল তুলে ব্যবসা করছিলেন। কিন্তু বন্ধুহাটের নামে তার ও জমির পূর্বের মালিক কুল্লাপাড়া গ্রামের আজিজুল ইসলামের দোকানের সামনে প্রাচীর তুলে দেওয়ায় তারা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন তিনি রঘুনাথপুর বাসষ্টান্ডে রাস্তার ধারে ফলের ব্যবসা করছেন। আর আজিজুল ইসলাম মাঠে কৃষি কাজ করেন। আব্দুস সাত্তার আরো বলেন, ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিন ছেলে-মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে খুবই কষ্টে কাটছে তার দিনগুলো। তিনি বলেন বন্ধুহাটের নাম করে তাদের সঙ্গে শত্রতা করা হয়েছে।

কেন এই শত্রতা জানতে চাইলে আব্দুস সাত্তার জানান, ২০১৬ সালের শুরুর দিকে হাটের সরকারি জায়গায় পাঁকাঘর নির্মান করছিলেন কুল্লাপাড়া গ্রামের এক ব্যাক্তি। যা নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্মান কাজ ভেঙ্গে দেওয়া হয়। এতে ওই ব্যক্তি ক্ষুব্ধ হন। বাজারের কিছু ব্যবসায়ীকে তিনি সাংবাদিকদের তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করেন। এরপর বন্ধুহাট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে সেই ব্যক্তি ক্ষমতার জোরে শত্রæতা সৃষ্টি করতে প্রশাসনকে বুঝিয়ে এই প্রাচীর নির্মান করিয়েছেন।

এ ব্যাপারে স্থানিয় রাখালগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বন্ধুহাট প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রকল্পের সভাপতি মহিদুল ইসলাম জানান, বাজারের দক্ষিণ প্রান্তে জমি দখলের চেষ্টা চলছিল। যে কারনে দক্ষিনে প্রথমে প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্ধ সাপেক্ষে অন্যদিকেও করা হবে। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রাচীর সম্পর্কে জানান, ওই ভবনটি আসলে বাড়ি তৈরীর জন্য শুরু করেছিল, পরে তারা দোকান বানিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রাণী সাহা জানান, এই হাটটি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাছাড়া এ ধরণের ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগও করেনি। তবে অভিযোগ করলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button