ব্র্যাক ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মানসুর
#ঝিনাইদহের চোখঃ
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক ও দেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মানসুর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন স্যার ফজলে হাসান আবেদ, কেসিএমজি এর স্থলাভিষিক্ত হবেন। স্যার ফজলে হাসান আবেদ ব্যাংকটির চেয়ারপারসন ও পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরিচালনা পর্ষদের এই পরিবর্তন আজ থেকে (২৬ আগস্ট) কার্যকর হবে।
ব্র্যাক ব্যাংকে যথাযোগ্য পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্যার ফজলে হাসান আবেদ এ সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন। তিনি ২০০১-২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে পুনরায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
স্যার ফজলে হাসান আবেদের নেতৃত্বে ব্র্যাক ব্যাংক ব্যাংক খাতে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ব্যাংকিংসেবার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক লক্ষণীয় অবদান রেখেছে। তিনি দ্রুত পরিবর্তনশীল ব্যাংক খাতে টিকে থাকতে ভবিষ্যৎমুখী পরিকল্পনার ওপর জোর দেন। তার নেতৃত্বে ব্র্যাক ব্যাংক সর্বাধুনিক, গ্রাহকবান্ধব ও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘অনেক বছর ধরে আমি ব্র্যাক ব্যাংকে আমার পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে অনেক ভেবেছি এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা এবং পর্যায়ক্রমে ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যোগ্য নেতৃত্বের কাছে হস্তান্তর করা এ প্রক্রিয়ার অংশ। এখন আমার বয়স ৮৩ বছর। আমি মনে করি, এখনই ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার উপযুক্ত সময়। ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে অভিজ্ঞ একজনকে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত।’
ড. আহসান এইচ মানসুর ২০১৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের লেকচারার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলে (আইএমএফ) দীর্ঘ কর্মজীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি আইএমএফ এ যোগ দেন। ১৯৮২ সালে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও থেকে অর্থনীতিতে (জেনারেল ইক্যুলিব্রিয়াম) পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তার বর্ণিল কর্মজীবনে তিনি আইএমএফ এর কর্মকর্তা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা ও সেন্ট্রাল আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ড. মানসুর ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে আইএমএফ এর রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর ফিসক্যাল (রাজস্ব) উপদেষ্টা ছিলেন।
নতুন পর্ষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পর্কে স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘মসিং মিডল’ জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অগ্রসরের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন প্রয়োজন। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ড. মানসুরের নেতৃত্বে ব্যাংকের ভিশনের আলোকে ব্র্যাক ব্যাংক এ সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি ও প্রসার অব্যাহত রাখবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ব্র্যাক ব্যাংকের জন্যও সুযোগ সৃষ্টি করতে বিশেষত, ব্র্যাক ব্যাংক এবং এর সাবসিডিয়ারি, বিকাশ লিমিটেড, তাদের নিজ নিজ সুবিধা একসঙ্গে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে ব্যবসার প্রসার অনেক ব্যাপক করতে পারে।’
নতুন পর্ষদ চেয়ারম্যানের দিকনির্দেশনায় ব্র্যাক ব্যাংক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন আরও বেগবানভাবে চালিয়ে যাবে এবং গ্রাহকদের সম্পূর্ণ ব্যাংকিং চাহিদা পূরণে উৎকর্ষসেবা চালু করা অব্যাহত রাখবে।
নতুন দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে ড. আহসান এইচ মানসুর বলেন, ‘স্যার ফজলে হাসান আবেদ দেশের একজন অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তার পদ গ্রহণ করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠান নির্মাণে তার রয়েছে অসাধারণ ও পরীক্ষিত দক্ষতা। আমার ওপর আস্থা রেখে আগামী দিনে ব্র্যাক ব্যাংককে সামনে এগিয়ে নেয়ার দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করায় আমি স্যার ফজলে হাসান আবেদ এবং পর্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি জানি ব্র্যাক ব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বাংলাদেশের সেরা ও আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। স্যার ফজলে হাসান আবেদের ভিশন অনুযায়ী ব্র্যাক ব্যাংক আগামী দিনেও এসএমই খাতে অগ্রাধিকার অব্যাহত রাখবে।’