সমাজকে আর বদলে দেওয়া হলো না ঝিনাইদহের সুরাইয়া’র
#ঝিনাইদহের চোখঃ
হঠাৎ করেই চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেল প্রতিবন্ধী কিশোরী সুরাইয়া পারভিন। সকলের কাছে প্রিয় এই কিশোরী হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতেন, এভাবেই স্কুল-কলেজ করেছেন।
এবার এইচ.এস.সি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৫০ পেয়েছিল। তার ইচ্ছা ছিল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন, পড়ালেখা শিখে নিজেই কিছু করবেন। সমাজ যেন তাকে বোঝা মনে না করে সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলছিলেন সুরাইয়া।
কিন্তু শনিবার ভোরে হঠাৎ করেই মারা যান কিশোরীটি। বৃহস্পতিবার থেকে অসুস্থ হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়। চিকিৎসক জানান, তার দুইটি কিডনী নষ্ট হয়ে গেছে। ঔষধ দেন আর ভালো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। শনিবার সকালে তাকে নিয়ে যশোর যাবার কথা ছিল, তার পূবেই ভোরে মারা যান সুরাইয়া।
সুরাইয়া পারভিন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বলিদাপাড়া গ্রামের ইসমাইল হোসেনের একমাত্র কন্যা। সাইফুল ইসলাম ও শাকিল হোসেন নামে তার আরো দুইটি ভাই রয়েছে। সুরাইয়ার চাচা তোফাজ্জেল হোসেন জানান, ৭ বছর বয়স পর্যন্ত সে ভালো ছিল। এ সময় দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ালেখা করতো। হঠাৎ একদিন বাথরুমে গিয়ে আর দাড়াতে পারেনি। ভেতর থেকেই মা বলে ডাক দেন। মা সালেহা বেগম, এগিয়ে গিয়ে দেখেন মেয়ে দাড়াতে পারছেন না। সেই থেকে সুরাইয়ার শরীরের নিচের অংশ অচল ছিল। সোজা হয়ে দাড়াতে পারতো না, নিচের অংশে কোনো অনুভুতি ছিল না। পাঁয়ে আঘাত দিলেও কিছুই বুঝতে পারতো না।
তোফাজ্জেল হোসেন আরো জানান, এই ঘটনার পর সুরাইয়াকে অনেক জায়গায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেছেন। কিন্তু কোনো ভাবেই ভালো করা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসকেরাও ঠিকমতো বলতে পারেনি সে কখনও সোজা হয়ে দাড়াতে পারবে কি না।
তবে তারা আশা হারাননি, মাঝে মধ্যেই চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতেন।
তোফাজ্জেল হোসেন জানান, সুরাইয়া ছোট থেকেই পড়ালেখার প্রতি খুবই আগ্রহী ছিল। শরীর পঙ্গু হলেও স্কুলে যাওয়া ছাড়েনি।
২০১৭ সালে মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪ পেয়েছিল। এবার ২০১৯ সালে মহিলা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৪-৫০ পেয়েছে। তার আশা ছিল বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, ভালো করে পড়ালেখা করে চাকুরী করবে। কিন্তু তার সেই আশা পুরনের আগেই হঠাৎ করেই মারা গেল।
তিনি আরো জানান, এই দীর্ঘ পড়ালেখার সময় সে হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতো। তার এই হুইল চেয়ারে বসে স্কুল-কলেজে যেতে দেখে এলাকার মানুষও তাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু হুইল চেয়ারে বসে থেকে থেকে তার শরীরের পেছনের অংশে ক্ষত দেখা দিয়েছিল। অনুভুতি না থাকায় প্রথমে সে নিজেও বুঝতে পারেনি। পরে সেটা বেশ খারাপ হয়ে যায়, যা চিকিৎসার পর অনেকটা ভালো হয়েছিল।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সুরাইয়া পারভিন অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানিয় কালীগঞ্জ শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক দেখানোর পর তারা নানা পরীক্ষা করে জানান, তার কিডনীর সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেটা দুইটি কিডনীতেই এই সমস্যা। তারা কিছু ঔষধ দেন আর ভালো হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবারের পক্ষ থেকে শনিবার যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ভোর রাতে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। তখন সকলে মিলে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করা অবস্থায় ভোর ৫ টার দিকে মারা যান। এভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী তবে উদ্যোমী এবং পরিশ্রমি এক কিশোরীর জীবনের সমাপ্তি হয়েছে বলতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।