ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

দৌলতদিয়া-ফরিদপুর-মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর মংলা মহাসড়কের দীগরাজে লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন

#ঝিনাইদহের চোখঃ

মহাসড়কে ১৫ টন বহনের নির্দেশ থাকলেও প্রায় ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে ২০-৩০ টন পণ্য বহন করা হচ্ছে। এভাবে বেশি ওজন বহন করায় চৌচির হয়ে যাচ্ছে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহাসড়কগুলো। আয়ুষ্কালের আগেই যানবহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।

তাই সরকার দেরিতে হলেও ২১ জেলায় লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ‘গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন’ নামে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে সব প্রক্রিয়া শেষ করে সরকার গত মঙ্গলবার অনুমোদন দিয়েছে।

এতে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধ করা যাবে জাতীয় থেকে শুরু করে মহাসড়কে। ক্ষতির হাত থেকে রোধ করা যাবে সড়ক-মহাসড়ক। ২০২২ সালের জুনে এটি বাস্তবায়ন করা হবে। একাজে ব্যয় হবে এক হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। এরমধ্যে চলতি অর্থবছরেই বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, সড়ক বিভাগের ২১টি জেলায় এসব লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এরমধ্যে গাজীপুর সদরের মাস্টারবাড়ি, মুন্সিগঞ্জের কেরানীগঞ্জের রুহিতপুরে, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবড়া কুড়া, পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়ার ভজনপুরে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কয়লাবাড়ি, কুড়িগ্রাম জেলার রোমারী-তুরা জেলা সড়কে রৌমারীর তুরায়, কুমিল্লা-ব্রাক্ষণবাড়িয়া মহাসড়কে ময়নামতি, ঢাকা-মাওয়া-পটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কে ভাঙ্গা, ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম-টেকনাফ জাতীয় মহাসড়কে করা হবে তিনটি লোডকেন্দ্র। এগুলো হচ্ছে— সীতাকুন্ড, বন্দর সংযোগ সড়ক এবং কেরানীরহাট।

চুয়াডাঙ্গা-কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসকে দামুড়হুদার দর্শনায় করা হবে এ লোডকেন্দ্র। টাঙ্গাইলের জয়দেবপুর-টাঙ্গাইল-জামালপুর জাতীয় মহাসড়কে নালিতাবাড়ীর বড় ইছাপুর, সাতক্ষীরার আলীপুর-ভোমরা স্থলবন্দর জাতীয় মহাসড়কে নাওবাদকাঠী, বাগেরহাটের দৌলতদিয়া-ফরিদপুর-মাগুরা-ঝিনাইদহ-যশোর মংলা জাতীয় মহাসড়কের দীগরাজে করা হবে বেশি পণ্য না যাওয়ার জন্য লোডকেন্দ্র।

এছাড়া বেশি পণ্য বহন ঠেকাতে দিনাজপুরের হিলি, শেরপুরের শিমুলতলা, নীলফামারীর কাজীরবাজার, ফেনী জেলার বেলোনিয়া এবং সিলেটের শেওলা-সুতারকান্দি জেলা সড়কের সুতারকান্দিতে করা হবে নতুন করে লোডকেন্দ্র। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থে ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনে ওইসব এলাকায় করা হবে ২১টি লোডকেন্দ্র।

ওইসব লোডকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ৬৪ দশমিক ২১ হেক্টর। ওয়ে ইন মেশিন স্কেল স্থাপন ও কমিশনিং করা হবে ৯০ সেট এবং স্ট্যাটিক ওয়ে ব্রিজ স্কেল স্থাপন ও কমিশনিং ৩১টি। সড়ক বাঁধ নির্মাণ করা হবে ২ দশমিক ১৭ লাখ ঘন মিটার।

পার্কিং এরিয়া নির্মাণ হবে ১২ হাজার বর্গ মিটার, রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ ২ দশমিক ৬ লাখ বর্গ মিটার। ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে ৫ হাজার ৮২৫ বর্গ মিটার। রোড বেরিয়ার নির্মাণ ৩ হাজার ১০০ মিটার, মিডিয়ান নির্মাণ ২২ হাজার ২৫০ মিটার।

আরসিসি ড্রেন নির্মাণ ২৭ হাজার ৯০০ মিটার ও আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ (৫৫-৬০ মিটার প্রস্থ) সাড়ে ৪৩ মিটার। বিভিন্ন স্থানে ২তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করা হবে ৮ হাজার ৪০০ বর্গ মিটার, কন্ট্রোল রুম এক হাজার ৮ বর্গ মিটার, বুথ ৩৪৮ বর্গ মিটার, গণ শৌচাগার ৫০৪ বর্গ মিটার, ক্যাফেটেরিয়া ৪ হাজার ২০০ বর্গ মিটার, ওয়্যার হাউজ ৪ হাজার ২০০ বর্গ মিটার, সেপটিক ট্যাংক ২৮টি ও সোক পিট ২৮টি, ওয়ে ব্রিজের জন্য পূর্তকাজ ৩৯২ বর্গ মি: (প), বাউন্ডারি ওয়াল ২২,০৬০ মিটার ও রোড মার্কিং ১৩ হাজার ৩০০ বর্গ মিটার।

এছাড়া ট্রাফিক সাইন, সাইন পোস্টসহ অন্যান্য কাজও করা হবে। প্রকল্পটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সংগতিপূর্ণ। কারণ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধ্যায়-৬-এর উল্লেখ রয়েছে।

এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) শামীমা নার্গিস বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসমুখে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করে অনুমোদিত সীমার অতিরিক্ত পণ্য পরিবহন রোধ করা যাবে। ফলে সড়কের ক্ষতি রোধ করে টেকসই সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করতে বলেন। সে অনুযায়ী একটি কমিটি করে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর গাজিপুরের মাস্টারবাড়ি, টাঙ্গাইলের ইছাপুর ও মানিকগঞ্জের বাথুলী সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এরপর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সারা দেশে ২১টি প্রধান প্রধান এলাকায় করা হচ্ছে লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button