ঝিনাইদহে এক স্কুলে ব্যতিক্রমী পন্থায় ধর্মীয় শিক্ষা
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের কারীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের ক্লাসে পড়ানোর পাশাপাশি লাইনে দাড়িয়ে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে নামাজ শেখানো হয়।
জোহরের ওয়াক্তে বাচ্চাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন শিক্ষকরা। হাতে-কলমে এই শিক্ষা দেওয়ায় খুশি স্থানিয়রা ও বিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত অভিভাবকরা।
শিক্ষকরা বলছেন যে বাচ্চারা পড়তে না চান তাদের বাধ্য করেন না। যারা শিখতে চান তাদের নিয়েই এই নামাজ আদায় করা হয়। নামাজের পাশাপাশি তারা নৈতিক শিক্ষাও দিয়ে থাকেন ক্লাসের আলোচনায়।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় বাচ্চারা লাইদে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, ১৯৪৪ সালে ৯৯ শতক জমির উপর নলভাঙ্গা বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৭৩ সালে সরকারি হয়। সেই থেকে বিদ্যালয়টি শিশুদের পাঠদার করে যাচ্ছেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফিজুর রহমান জানান, তাদের বিদ্যালয়ে বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন। যার মধ্যে একজন প্রশিক্ষনে আছেন। তারা চারজন নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। যার মধ্যে দুইজন পুরুষ ও দুইজন নারী। তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৭৩ জন ছেলে মেয়ে পড়ালেখা করছে। তবে তাদের বিদ্যালয়ে ক্লাস রুমের সংখ্যা খুবই কম। মাত্র তিনটি শ্রেণী কক্ষের আর একটি ছোট অফিস কক্ষ নিয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন। অনেক বার চেষ্টা করেছেন নতুন ভবনের, কিন্তু মেলেনি। তাদের প্রতিষ্ঠানে একটি নতুন ভবনের পাশাপাশি সীমানা প্রাচীর প্রয়োজন বলে জানান শিক্ষকরা।
প্রধান শিক্ষক জানান, তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ইসলাম শিক্ষা একটি বিষয় রয়েছে। সেখানে নামাজ শিক্ষা বলে একটি অধ্যায় আছে। এই অধ্যায় পড়ানোর সময় তাদের মনে হয়েছিল বাচ্চাদের পাঠদানের পাশাপাশি নামাজ কিভাবে পড়তে হয় সেটা বাস্তবে শেখাতে পারলে তারা বড় হয়ে ভালোভাবে নামাজ আদায় করতে পারবে। সেই কথা চিন্তা করে ৩ বছর পূর্বে থেকে এই শিক্ষা দেওয়া হয়। সেখানে মাঝে মধ্যে শিক্ষকরা জোহরের নামাজের সময় বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে নামাজ আদায় করেন। এভাবে কিছুদিন শেখানোর পর তারা বিষয়গুলি শিখে নেয়। এভাবে মাঝে মধ্যে এটা করানো হয়। বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকার পর গত সপ্তাহ থেকে আবার শুরু করেছেন। তারা স্কুল মাঠে ত্রিপল বিছিয়ে এই নামাজ শিক্ষা দেন।
নামাজ আদায় করছিল পঞ্চম শ্রেণীর এমন এক শিক্ষার্থী জানায়, শিক্ষকরা তাদের স্কুলে নামাজ শিখিয়ে থাকেন। এতে তারা খুবই খুশি। এখন মাঝে মধ্যে বাড়িতে গিয়েও তারা নামাজ পড়ছে। এ বিষয়ে শুকুর আলী নামের এক অভিভাবক জানান, নামাজ শেখা খুবই ভালো কাজ। অনেক সময় আমরা ছোট বেলায় নামাজ শিখি না। পরবর্তীতে বড় হয়ে নামাজ আদায় করতে গিয়ে ভুল ভাবে আদায় করে থাকি। এ জন্য শিক্ষকরা বাচ্চাদের এই শিক্ষা দিচ্ছে এটা অবশ্যই ভালো কাজ।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল মোতালিব জানান, স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে বাচ্চারা নামাজ পড়ে এতে তারা খুশি। স্কুল থেকে মসজিদ দুরে থাকায় শিক্ষকরা স্কুলেই নামাজ আদায় করেন। এ সময় বাচ্চাদের শিক্ষা দিতে তাদের নিয়ে নামাজ আদায় করেন। এটা ভালো কাজ বলে তিনি মনে করেন।