সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় সকল মাঠের আমন ক্ষেতে ইঁদুরের উপদ্রবে আমন ক্ষেত নষ্ট হচ্ছে। অন্য বছরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে ফসলী ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমন দেখা দিলেও এ বছর আক্রমনটা অপেক্ষাকৃত বেশি। কেননা ইঁদুর ছড়িয়ে গেছে সকল মাঠে। স্থানীয় কৃষি অফিস ও অফিসের মাঠ কর্মিরা ইঁদুর দমনে কৃষকদেরকে সচেতন করলেও অনেক মাঠে নিয়ন্ত্রনে আসছেনা।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, চলতি আমন মৌসুমে এ উপজেলায় আমন রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ হাজার হেক্টর জমিতে। কিন্ত রোপন হয়েছে ১৮ হাজার ৫’শ ৫০ হেক্টর জমিতে। যার অর্থ ধান রোপনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় অর্জিত হয়েছে।
গত শুক্র ও শনিবার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, আমন ক্ষেতের মাঝখানে আবার কোন ক্ষেতের আইলের পাশে ইঁদুর গর্তের বাসা করেছে। ভরা ক্ষেতের গর্তের পাশেই ধান গাছের কান্ড কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলে রেখেছে। ইদুরে কাটা এ ধানগাছগুলোর কোনটাব শিষ বের হয়েছে আবার কোনটার বের হয়নি। তবে জলাবদ্ধ ক্ষেতগুলো ইতর এ প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা পেলেও কিছু কিছু পানিশূন্য শুকনো ক্ষেতে আক্রমনটা বেশ ভয়াবহ। এমন অবস্থা দেখা গেছে উপজেলার খয়েরতলা, বাকুলিয়া, ভাটপাড়া, সুন্দরপুর, আলাইপুর, কমলাপুর, রঘুনাথপুর, বকেরগাছি, বারোবাজার, কোলা, কামালহাট, খড়িকাডাঙ্গা, খেদাপড়া, উল্ল্যা, সাইটবাড়িয়া, মনোহরপুর, পান্তাডাঙ্গা গ্রামের মাঠের আমন ক্ষেতে।
উপজেলার খয়েরতলা গ্রামের কৃষক মাছুদ রানা, মুনছুর আলী, মোদাচ্ছের হোসেন ও ভাটপাড়া গ্রামের সুনীল কুমার দাস জানান, ইঁদুর তাদের ধানের ক্ষেত গুলিতে গাছ কেটে নষ্ট করে দিচ্ছে। নিধনের জন্য বিষটোপ ব্যবহার করেও ঠেকাতে পারছেনা। তারা বলেন, একজন কৃষকের ভরা ক্ষেত নষ্ট হলে এর চেয়ে বড় ক্ষতি তাদের জন্য হতে পারে না।
ভুক্তভোগী কৃষকদের মধ্যে উপজেলার সাইটবাড়িয়া গ্রামের ইউ পি সদস্য কবিরুল হক নান্নু,রঘুনাথপুর গ্রামের অমেদুল হক ও বহিরগাছী গ্রামের আব্দুর করিম সকলের ভাষ্য একই। ইঁদুুরের উপদ্রব রোধ করতে না পারলে ফলন বিপর্যয় হয়ে চলতি আমন আবাদে কৃষক ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলে তাদের আশঙ্কা।
কৃষক আলাইপুর গ্রামের আলীনুর রহমান জানান, আমন ধান বর্ষা মৌসুমের ধান। ধান রোপনের পরে তেমন একটা বৃষ্টিপাত হয়নি। তারপরও ডিজেল চালিত গভীর নলকুপের পানি সেচের মাধ্যমে ক্ষেতের ধানগুলো বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
বড়ভাটপাড়া গ্রামের কৃষাণী সালেহা বেগম জানান, একটা ক্ষেতের এক তৃতীয়াংশ ইঁদুরে কেটে নষ্ট করে দিয়েছে তার। ইঁদুর দমনের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্ত নিয়ন্ত্রনে আসছে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান, চলতি আমন মৌসুমে ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমনের কথা কৃষকদের মুখে শুনেছেন। ইতোমধ্যে কয়েকটি মাঠের ক্ষেতও পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, বৃষ্টির পানি কম হওয়ায় মাঠে এ বছরের ইঁদুরের বংশবিস্তার ঘটেছে। তারা ইঁদুরের হাত থেকে ক্ষেত বাঁচাতে ইতোমধ্যে মাঠকর্মিদের মাধ্যমে কৃষক সচেতনমূলক সেমিনার শুরু করেছেন। ইঁদুরের উপদ্রব ঠেকাতে কৃষকদের মৌখিকভাবে অনুমোদিত মাত্রায় জিংক ফসফেইড প্রয়োগের পরামর্শ দিচ্ছেন।