ঝিনাইদহে আদম ব্যাপারীর খপ্পরে সর্বশান্ত কয়েকটি পরিবার, মামলা দায়ের
ওমর ফারুক, ঝিনাইদহের চোখঃ
দালাল বা আদম ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত সর্বশান্ত হচ্ছে শহর- গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার সাধারণ বেকার যুবক।প্রতারক দালালদের কাছে এ যেন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে।
ঠিক তেমনি করেই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আদম ব্যবসায়ী প্রতারক বদর উদ্দীনের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে বিদেশে মিলবে ভালো বেতন ও ভালো চাকরী। এই রকম প্রলোভন দেখিয়ে উপজেলার বহু দুস্থ পরিবারের বেকার যুবকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অভিযুক্ত আদম ব্যবসায়ী বদর উদ্দীনের বিরুদ্ধে।
ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে মালয়েশিয়া পাঠিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের, মহারাজপুর উত্তরপাড়া গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে বদর উদ্দীন নামে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী পরিবার সুত্রে জানা গেছে, গত ১৯/০৪/২০১৬ সালে মহারাজপুর উত্তর পাড়া গ্রামের মৃত আলী আকবর সরকারের ছেলে জয়নুদ্দীন সরকারকে মালয়েশিয়া ভালো কাজ দেওয়ার নাম করে তার নিকট থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় বদর উদ্দীন । পরবর্তীতে তাকে মালয়েশিয়া পাঠানো হলেও ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় তাকে কয়েক মাস কোন কাজকর্ম না দিয়ে এক স্থানে আটকে রাখা হয়।
পরবর্তীতে তাকে একটি দালাল মারফৎ কাজ প্রদান করে বদর উদ্দীনের সেদেশের সহযোগীরা। সেখানে কাজ করা অবস্থায় মানব পাচারকারী দালাল বদর উদ্দীনের খপ্পরে পড়া সহজ সরল জয়নুদ্দীন ভুয়া ওয়ার্ক পারমিটে কাজ করার অপরাধে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটক করে। পরে সেই দেশের আইন অনুযায়ী তিন মাসের সাজা ভোগ করেছে জয়নুদ্দীন সরকার।
এদিকে ভুক্তভোগী জয়নুউদ্দীন সরকার বাদি হয়ে,
(১)বদর উদ্দীন পিতা আব্দুল মান্নান মিয়া
(২)আঃ মান্নান মিয়া পিতা মৃত করিম হাজী
(৩)ইউসুফ মাস্টার পিতা মান্নান মিয়া, সাং মহারাজ পুর,পোস্ট খড়িখালী,সদর ঝিনাইদহ এই ৩ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬/৭/৮/ (১) /৮(২)/৯ ধারা ২০/০৯/২০১৯ তারিখ মোতাবেক রোজ শুক্রবার সময় অনুমানিক ১০.০০ ঘটিকায় ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করে, যার মামলা নং-৩৪।
জয়নুউদ্দীন সরকার অভিযোগ করে বলেন, আমাকে মালয়েশিয়ায় ভালো কাজ আর মোটা অংকের বেতন দেওয়ার কথা বলে আমার নিকট থেকে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা নেয়। আমার শেষ সম্বলটুকু নষ্ট করে বদর উদ্দীনের কাছে টাকা দিয়েছি। কিন্তু সে আমাকে পাঠালেও কোন কাজ দেয়নি বরং আমাকে কয়েক মাস যাবৎ একটি স্থানে আটকে রাখে। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া একটি কাজের ব্যাবস্থা করে দালালের মাধ্যমে।
অবৈধ ভাবে কাজ করার অপরাধে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন পুলিশ আটক করে আমাকে। তখন আমার পরিবারের লোকজন আমাকে এবং টাকা ফেরৎ চাইলে প্রথমে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সমঝোতা করলেও তার কথিত কিছু লোকের কথায় বিভিন্ন ভাবে আমার পরিবারের লোকজনের হুমকি ধামকি দেয়। বর্তমানে আমরা সঙ্কায় দিন কাটাচ্ছি।
সরেজমিনে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা গেলে, তাদের দেখে, এরোকম প্রতারণার শিকার ৮ জন এগিয়ে আসেন এবং তারা অভিযোগ করেন যে, বদর উদ্দীন তাদের কাছ থেকেও একই ভাবে কারও কাছে সাড়ে ৩ লক্ষ কারও কাছে ৪ লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন এবং তার শশুড় বাড়ী এলাকা থেকেও অনেক মানুষের টাকা নিয়েছেন বলেও তারা জানায়। বদর উদ্দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ব্যাক্তিরা হলেন, উপজেলার মহারাজ পুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে রমজান। কাশেম সরকারের ছেলে শরিফুল ইসলাম। জুব্বার মণ্ডলের ছেলে ওসমান। আঃ রব মিয়ার ছেলে নাছির উদ্দীন। রকমত আলীর ছেলে আসমত। আলী আকবরের ছেলে ইউনুছ আলী এবং মিলন সহ ওয়ার্ড মেম্বার এবং বদর উদ্দীনের আপন চাচাসহ এলাকাবাসী।
জানা গেছে, বদর উদ্দিন, তার ভাই ইউসুফ মাস্টারসহ তার বাবা আঃ মান্নান মিয়া নিজ এলাকাসহ বদর উদ্দীনের শশুর বাড়ির গ্রামেরও বেশ কিছু বেকার যুবককে বিদেশে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজে আলিশান বাড়ি এবং উন্নত জীবন-যাপন করলেও, মানবতা ও হতাশার মধ্যে জীবন-যাপন করছেন বেকার যুবকরা।
এমন কি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগী অসহায় পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া সুত্র জানায়, বদর উদ্দীন মালয়েশিয়া থেকে এক ব্যাবসায়ীর বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নিয়ে দেশে চলে এসেছে।
জয়নুউদ্দীন সরকারের মতোই আটক হয়ে সাজা খেটে দেশে ফিরে আসা আনসার মিয়া বলেন, মালয়েশিয়া অবৈধ ভাবে কাজ করার অপরাধে আমাদেরকে আটক করা হয়। আমিও সাজা খেটেছি। সেদেশের আইন অনুযায়ী জয়নুউদ্দীনও সাজা খেটেছেন।
আনসার মিয়া আরও বলেন, বদর উদ্দীন সাড়ে ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমাদের মালয়েশিয়া নিয়ে যায়। আমাদের যে ভিসা দেয়, পরে আমরা জানতে পেরেছি সেই ভিসায় মালয়েশিয়া কাজ করার কোনো বৈধতা নেই। তাছাড়া মালয়েশিয়া আমাদের যে ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হয়েছে সেটাও ভুয়া। আমরা ভুক্তভোগী সবাই বদর উদ্দীনসহ তাদের ৩ জন আসামীকে খুব দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করছি।
ভুক্তভোগী জয়নুউদ্দীন সরকার সাংবাদিকদের জানান, মানব পাচারকারী বদর উদ্দীন,তার ভাই ইউসুফ মাস্টারসহ তার বাবার বিরুদ্ধে আমি ঝিনাইদহ সদর থানায় মামলা করেছি।
মহারাজ পুর ইউপি ৪ নং ওয়ার্ড মেম্বার সানোয়ারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বদর উদ্দীনের বিরুদ্ধে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে টাকা আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বিচারের দিন এলেই সে এলাকা থেকে পালিয়ে যায়। তা ছাড়া সে বেশ কিছু ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছে। তবে এর মধ্যে কিছু ছেলে বাড়িতে চলে এসেছে আর কিছু ছেলে নাকি আটক হয়েছে।
মামলা সম্পর্কে ঝিনাইদহের সহকারী পুলিশ সুপার, কনক কুমার দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্ত চলছে এ মুহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন।