উলঙ্গদ্বারা সভ্যতা প্রভাবিত–গুলজার হোসেন গরিব
ঝিনাইদহের চোখঃ
উলঙ্গ শব্দটি বেশিরভাগ মানুষ মূলত মন্দ অর্থে ব্যবহার
করে। কিন্তু উলঙ্গ শব্দের মৌলিকতা আসলে মন্দ নয়। এ
আমাদের ভাবনা আর দেখার ভুল। উলঙ্গ দারুণভাবে
আয়নার মতন কাজ করে। নিজেকে দেখায় আবার
অন্যকেও দেখতে সাহায্য করে।যে জন্য আমার এই লেখা।
উলঙ্গ করা। মানুষ প্রতিনিয়ত নিজকে উলঙ্গ করে। উলঙ্গ
হওয়াটা মানুষের সাধারণ প্রবৃত্তি। উলঙ্গ হওয়ার প্রচেষ্টা
মানুষ জন্ম থেকে মৃতু অব্দি অব্যাহত রাখে।পৃথিবীর সকল
মানুষই উলঙ্গ হয়।এই উলঙ্গতা পোশাক খুলে নেংটা হওয়া
নয়। এই উলঙ্গতা হলো আপনাকে মানুষের মাঝে প্রকাশ
করা। আপনি কে, কী, এবং কেমন মানুষ। মানুষ নিজেকে
উলঙ্গ না করলে, আজকের এই আধুনিক সভ্যতা, ভালো
মন্দ চেনা-জানা সম্ভব হতো না। মানুষ তার ভিতরের
মানুষকে উলঙ্গ করার কারণেই জানতে পারি, এই মানুষের
সুন্দর ও বিকৃত রূপ। জানি পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির
ভাষা ও সংস্কৃতি এবং তাঁদের বিচিত্রময়তা। জানতে পারি
মানুষের মধ্যে থাকা প্রতিহিংসা ও মানবিকতা। দেখি
বাস্তবতা, পরাবাস্তবতা ঘিরে ধর্মপালন,আচার-আচরণ
আত্মবিশ্বাস, বিশ্বাস, অবিশ্বাস, দুঃখ ও সুখের আবহ।
জানতে পারি ঘর পাড়া, গ্রাম, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব
পরিচালনার কলাকৌশল। আমরা জানি পৃথিবীর নানা
খনিজ সম্পদ ঢাকা ছিলো মাটির আবরণে,কিন্তু মানুষ এই
খনিজকে উলঙ্গ না করলে খনিজের কার্যকারিতা, ব্যবহার
করা বুঝতে পারতাম না। অনেক শস্য ও ফলকে মানুষেরা
উলঙ্গ না করলে আজো তার স্বাদ আস্বাদন অসম্ভব হয়ে
থাকতো। বিজ্ঞানীরা তাদের মেধাকে উলঙ্গ না করলে
আমরা বিজ্ঞানের নানান আশ্চর্য সৃষ্টি দেখতে ও উপভোগ
করতে পারতাম না। এভাবেই মানুষ একে অপরকে উলঙ্গ
করে এবং নিজেও উলঙ্গ হয়।
মানুষ তার পোশাক পরার মাধ্যমেও নিজেকে উলঙ্গ করে
থাকে। আমরা দেখতেও পাই পোশাকি উলঙ্গতা, বিভিন্ন
স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কলকারখানা,পেশাজীবী এবং
সরকারি প্রশাসনিক কর্মচারী ও ধর্ম পালনকারীদের
বিভিন্ন রং ও টাইপের মাধ্যমে। মানুষ তার আত্মস্থ বিশ্বাস,
জ্ঞান,জ্ঞানচর্চা, নীতিনৈতিকতা ও উদ্দেশ্য প্রকাশের মধ্য
দিয়েও নিজেকে উলঙ্গ করে। মানুষ তার খাদ্যাভাসের
মাধ্যমেও নিজেদেরকে উলঙ্গ করেন, কারণ খাদ্য বলতে
পৃথিবীর প্রায় সব উদ্ভিদ আর প্রাণীই মানুষের খাদ্য কিন্তু
সব মানুষ সব খায় না। খাওয়া এবং না খাওয়ার ব্যক্তি
মানসিকতা থেকেও আমরা উঙ্গতার নানান বৈশিষ্ট জানতে
পারি। পৃথিবীর অনেক মানুষ আছেন যাঁরা নিজেদেরকে
চমৎকারভাবে উলঙ্গ করেছেন, যে জন্য তাঁরা আজো এই
পৃথিবীতে বিশ্ববিখ্যাত হয়ে, মানুষের জীবনে অমর হয়ে
আছেন। এই মহামানবেরা নিজেদেরকে যুগপোযোগি এবং
ভবিষৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই সুন্দর ও বুদ্ধিদীপ্তভাবে
উলঙ্গ করেছেন। আর করেছেন বলেই পৃথিবীর মানুষ
তাঁদের স্মরণ করে চলে ভালো এবং মন্দতায়। আমরা এই
উলঙ্গ হওয়া মহামানবদের বিভিন্ন উপাধি দিয়ে সম্বোধন
করে থাকি, সেবক,চিন্তাবিদ, গবেষক, কবি, সাহিত্যিক,
উপন্যাসিক, গল্পকার, জনক, রূপকার, প্রবর্তক, বিজ্ঞানী
ও নানান আবিস্কারক ইত্যাদি। মানুষ নিজের স্বার্থোদ্ধার
জ্ঞান গরিমা প্রদর্শিত করার জন্যেও নিজেকে উলঙ্গ করে।
শুধু মানুষই নয়, নিজেকে উলঙ্গ করে এমন অনেক উদ্ভিদ
আর প্রাণীরাও আছে, যারা আজব দক্ষতা উপস্থাপণ করে
মানুষের মনে বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এবং
মানুষের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপণ করে বিরল দৃষ্টান্ত রূপান্তর
করেছে যা কল্পনাতীত হলেও সত্য বলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত।
আমরা আরো কয়েকটি মহাশক্তিরও উলঙ্গতা দেখি যেমন
আগুন, জল,বাতাস, মাটি ও আকাশের।বিশেষত এই পাচ
মহাশক্তি উলঙ্গ না হলে আজ এই পৃথিবীতে সুন্দরভাবে
আমাদের অস্তিত্বের বিকাশ ঘটতো না। শুধু এরাই উলঙ্গ
হয় বা মানুষ এদেরকে উলঙ্গ করেছে, ঠিক এখানেই মানুষ
ক্ষ্যান্ত নয়, মানুষ উলঙ্গ করেছে কণা অতি অনুকণাকেও।
মানুষ নিজে উলঙ্গ হয় ও অন্যকে উলঙ্গ করার মাধ্যমেই
জীব কুলে এই মানুষই আজ পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব
হিসেবে রূপান্তর হয়েছে। আমি আশাবাদী পাঠকগণ এই
লেখায় উলঙ্গ শব্দটি অশ্লীল অর্থে কেউ গ্রহণ করবেন না।
আমরা মানুষ ও জীবেরা এবং পদার্থের কণা-অনুকণা
সবাই উলঙ্গ হওয়ার কারণে আধুনিক সভ্যতায় জীবনকে
নিয়ে আসতে পেরেছি এবং উলঙ্গের নানান জ্ঞানদীপ্ততায়
অন্যকে প্রভাবিত করি এবং নিজেও প্রভাবিত হই।আমি
আবারো বলি এই উলঙ্গ পোশাক খুলে নেংটা হওয়া নয়,
এই উলঙ্গ হলো ব্যক্তির মেধা মনন,চিন্তা,স্বপ্ন,ইচ্ছা উদ্দেশ্য
বস্তুর কার্যকারীতা ও বাস্তবায়নের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।