সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ
হতদরিদ্র ইমনের বাবা ভক্ত দাস সেলুনে কাজ করে সংসার চালান। সারাদিনের রোজগারে ঠিকমত সংসারই চলে না। ফলে অভাব তাদের নিত্য সঙ্গী। কিন্ত ছেলে ইমন দাস অদম্য মেধাবী। সে অনার্সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের মোট তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেও অভাবী পরিবারে ইমনের বাবার পক্ষে ভর্তির টাকা জোগাড় করা একেবারেই সম্ভব ছিল না। তার পারিবারিক দৈন্যতার কথা তুলে ধরে দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক, সমকাল, ভোরের কাগজ, মানবকণ্ঠ, যায়যায়দিন , জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল ডেইলি বাংলাদেশ, খবর কালীগঞ্জ, ক্রাইম ওয়াল্ড নিউজ, সবুজ দেশ, ঝিনাইদহের চোখ, গ্রামের কাগজ, স্পন্দন, দৈনিক নওয়াপাড়া, সময়ের খবর, দৈনিক কল্যান, দৈনিক যশোর, দৈনিক নবচিত্র, দৈনিক শিকলসহ বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ”টাকার অভাবে ইমনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত ” শিরোনামে গত ৭ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর তার ভর্তির ব্যাপারে মুঠোফোনে ইমনের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন বেশ কয়েকজন দানশীল ব্যক্তি। তারা ইমনের ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। সহযোগীতাকারীদের মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা, পৌর মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও ২ ব্যক্তি। তাদের দেয়া অর্থেই ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো কেমিষ্ট বিষয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছে ইমন। হতদরিদ্র মেধাবী ইমন দাসের বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌর এলাকার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে।
উল্লেখ্য, ইমন এ বছর শহরের সরকারী মাহতাব উদ্দীন ডির্গ্রী কলেজ থেকে এইচ এসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৫ পায়। এরপর সে অনার্সে ভর্তির জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করে। কিন্ত কোথা থেকে আসবে ভর্তির টাকা। আর কিভাবেই বা ঢাকার মত ব্যয়বহুল শহরে রেখে ছেলের লেখাপড়ার খরচ যোগাবে তার পরিবার সে চিন্তায় পড়ে। কথাটা এমন যে, স্বাদ আছে কিন্ত সাধ্য নেই।
আরও প্রকাশ থাকে যে, মাত্র ২ শতক জমির ওপরে বাঁশের চাটাই দিয়ে ঘেরা টিনের ছাউনির ঝুপড়ি ঘরে তাদের বসবাস। এখান থেকে লেখাপড়া করেই এ পর্যন্ত তার শিক্ষাজীবনের সবকটি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। (ইমনের দিদি মা) একজন ক্যনসারের রোগী। শত অভাবের মাঝেও ইমন আর শিমন দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখাচ্ছেন বাবা ভক্ত দাস। ছোট ছেলে শিমন এ বছরের এস,এসসি পরীক্ষার্থী। আর ইমন জেএসএসসি, এসএসসি ও এইচ এসসি সকল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। অনার্সের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়ো কেমিষ্ট বিষয়ে লেখাপড়ার সুযোগ পেয়েছে। পত্র পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর অনেকে তাদের দানের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের আর্থিক সহযোগীতায় ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাচ্ছে ইমন।
ইমনের বাবা ভক্ত দাস জানান, ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো আমার জন্য স্বপ্নের ব্যাপার। কথাটা এমন স্বাদ আছে সাধ্য নেই। তারপরও আজ যাদের সহযোগীতায় আমার ছেলে ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলো গনমাধ্যম ও দানশীল ব্যক্তিদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সাহা জানান, ইমন খুব ভদ্র ও হতদরিদ্র মেধাবী ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা জোগাড় করা পরিবারের জন্য কষ্টকর ব্যাপার। এ ধরনের মেধাবী একটা মুখের জন্য যারা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হয়।