ঝিনাইদহে ২০১৯ সালে ধর্ষণ মামলা ৩৯ ও নারী নির্যাতন মামলা ১৩৫ টি
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহে বিদায়ী বছরে বেড়েছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনা। তরুণী, শিশু, মধ্য বয়সী, প্রতিবন্ধী, গৃহবধূরা শিকার হয়েছে এ ধরনের ঘটনার। এদের মধ্যে তরুণীর সংখ্যা সব থেকে বেশি।
জেলা পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৬ সালে ধর্ষণ মামলা হয়েছে ১৮টি, নির্যাতন মামলা ৯০টি। ২০১৭ সালে ধর্ষণ মামলা ২৪টি, নির্যাতন মামলা ১১৬টি। ২০১৮ সালে ধর্ষণ মামলা ৩১টি, নির্যাতন মামলা ১০৪টি। ২০১৯ সালে ধর্ষণ মামলা ৩৯টি এবং নির্যাতন মামলা হয়েছে ১৩৫টি।
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৬ সালে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১১২টি, ২০১৭ সালে ১০৮টি, ২০১৮ সালে ৯৫টি এবং ২০১৯ সালে প্রায় ৭০টি।
অন্য দিকে সদর হাসপাতালের তথ্যে ধর্ষণের ঘটনায় ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে ২০১৬ সালে ৪৭টি, ২০১৭ সালে ৭৭টি, ২০১৮ সালে ৯৮টি এবং ২০১৯ সালে ১২৮টি।
জেলার বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরিবারের অগোচরে মেয়েরা নানাভাবে বখাটেদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। সাথে সহপাঠী কিংবা নানা বয়সী পুরুষের সাথে প্রেমের সম্পর্কের জেরেও পাশবিক ও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। কখনো কখনো খারাপ চরিত্রের বয়স্ক ব্যক্তিরাও জোরপূর্বক তাদের লালসা চরিতার্থ করছে নারীদের দ্বারা।
অন্যদিকে পারিবারিক কিংবা সামাজিক ভাবেও নির্যাতন করা হচ্ছে নারীদের। কখনো প্রভাবশালীরা একে অন্যকে ফাঁসাতে থানায় নির্যাতন মামলা করছে।
অনেক ঘটনায় গ্রাম্য প্রভাবশালীরা অর্থের বিনিময়ে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করছে ভুক্তভোগী পরিবারকে। এসব ঘটনায় কিছু আসামি গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মুল অপরাধীরা। অভিভাবকরাও অনেক ক্ষেত্রে খোঁজ রাখছেন না তাদের সন্তানেরা কোথায় যাচ্ছে কী করছে।
সরকারি নুরুন নাহার মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এন এম শাহজালাল জানান, শিশুদের মধ্যে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের একটা অভাব রয়ে যাচ্ছে পারিবারিকভাবে। যা একটি শিশুর বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, পরিবর্তন করে দিচ্ছে জীবনধারাকে। তাই অভিভাবকদের তাদের সন্তানের প্রতি বেশ যত্নবান হতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে সে কোথায় কী করছে। তাহলেই এ ধরনের অপরাধ অনেকাংশে কমে আসবে।
মানবাধিকার নেতা আমিনুর রহমান টুকু জানান, স্বামী-স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বন্ধনের অভাব, আর্থিক দৈন্যতা, সামাজিক-রাজনৈতিকসহ নানা কারণে ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো অহরহই ঘটছে।এক্ষেত্রে গ্রামে গ্রামে, শহরে, পাড়া মহল্লায় ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালাতে হবে। এক পর্যায়ে দেখা যাবে মানুষ সচেতন হতে থাকবে আর কমে যাবে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার শরীফা আক্তার বলেন, আমরা কম সংখ্যক জনবল নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি নারী নির্যাতন প্রতিরোধে। তবে পুলিশ কিংবা জেলা প্রশাসনের মতো আমাদের আইন প্রয়োগের ক্ষমতা না থাকায় সব ক্ষেত্রে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারি না।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জুনিয়র গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. মার্ফিয়া খাতুন জানান, সদর হাসপাতালে ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ে যে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয় সেক্ষেত্রে ৩০ ভাগ আলামত পাওয়া যায়। বাকি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ছেলে-মেয়ে নিজেদের পছন্দমতো বিয়ে করছে, এক সাথে থাকছে। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ষণ মামলা করা হচ্ছে। ফলে সেগুলোও ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। এক্ষেত্রে সেটাকে ধর্ষণ বলা যায় না।
ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুততার সাথে ভুক্তভোগী পরিবারের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। অভিযোগ পেলে বা থানায় মামলা হলে আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আর এ ধরনের অপরাধের গ্রাম্যভাবে মীমাংসা কোনো বিধান নেই।