কালীগঞ্জক্যাম্পাস

কালীগঞ্জের মোচিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিলনমেলা

সাবজাল হোসেন, ঝিনাইদহের চোখঃ

এক সাথে লেখাপড়া, খেলাধুলা কত না হাসি কান্নার স্মৃতি। কিন্ত মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে লেখাপড়ার প্রয়োজনে সব আজ ছিন্নভিন্ন। সহপাঠিদের সাথে দেখা তো দুরের কথা, কে কোথায় কিভাবে আছেন তা অনেকেই জানেন না। কবির ভাষায় ”খেলার সাথীরা কোথায় তারা ভুলিয়া গিয়াছি নাম”। এক সময়ের প্রিয় বন্ধুটির সাথে দেখা যোগাযোগ না হলেও সকলেরই স্মৃতিপটে ভাসে কত কথা, কত না স্মৃতি। অথচ বিদ্যালয়টি থেকে প্রতি বছর এস,এস,সি পাশের পর মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে অনেকে হয়েছেন বড় চিকিৎসক, আইনজীবি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, মেধার বিকাশ ঘটিয়ে কেউ পালন করছেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব, কেউ হয়েছেন ছোট বড় ব্যবসায়ী, অনেকে নানা কারনে ঝরে গিয়ে আজ রয়েছেন অভিশপ্ত বেকার জীবনে। কিন্ত বন্ধুত্বের পরিচয় ছোট আর বড় দিয়ে নয়। বন্ধু সে তো বন্ধুই। সকল বন্ধু ও কৈশরের স্কুলকে মনে রাখতে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মোচিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছেন ২ দিন ব্যাপি প্রাক্তনদের নিয়ে মিলন মেলার।

সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াশার চাদরে ঘেরা কাকডাকা ভোরেই একে একে সপরিবারে হাজির হচ্ছেন নানা বয়সের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। তাদের উপস্থিতিতে সকাল ৯ টার মধ্যেই কানায় কানায় ভরা স্কুল মাঠ। সেখানে অনেক দিন পর বাল্যকালের সহপাঠিদের কাছে পেয়ে একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরছেন। অনেকে কৈশরের বন্ধুদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত। আবার কিছুক্ষন পরেই সেই কৈশরের দুষ্টমিতে মেতে উঠছেন। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের কুর্ণিশ করে আশির্বাদ নিতেও ভুল করছেন না অনেকে। এমন দৃশ্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মোবারকগঞ্জ চিনিকল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা ঘিরে। শুক্রবার সকাল ১০ টায় আকাশে রঙিন বেলুন উড়িয়ে ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দুই দিন ব্যাপি এ মিলন মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনার, মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী প্রেসক্লাব সভাপতি জামির হোসেন প্রমূখ।

আয়োজকদের একজন ১৯৯৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী স্থানীয় সাংবাদিক শাহজাহান আলী বিপাশ জানান, বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত শিক্ষার্থী প্রাক্তন হয়েছেন তাদের প্রত্যেকটি ব্যাচের দুইজনকে আগেই প্রধান করা হয়েছে। তারা তাদের সহপাঠিদের সম্ভাব্য উপস্থিতির তালিকা রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত করেছেন। এ দুই দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত মিলন মেলায় রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত সকল সদস্যের প্রতিবারে খাবারের জন্য আগে থেকে টোকেন দেয়া হয়েছে। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে নানা কর্মসূচীর মধ্যে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি র‌্যালী বের করা হয়। যেখানে সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পাশের সন লেখা পৃথক পৃথক নামের ব্যানার নিয়ে অংশ গ্রহন করেন। র‌্যালিতে প্রায় দেড় হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহন করেন। তাদের জন্য ২ দিন ব্যাপি অনুষ্ঠিত এ মিলন মেলায় প্রতিবারের জন্য খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। খাওয়ার সময় হলেই টোকেন জমা দিয়ে প্রতিটি ব্যাচ রেজিষ্ট্রেশন অনুযায়ী খাবার পেয়ে যাচ্ছেন। অনুষ্ঠানের ২ দিনের জন্যই রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিচয়পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। পরে প্রত্যেক ব্যাচের কৃতি শিক্ষার্থীদের সম্বর্ধনাও প্রদান করা হবে।

এ বিদ্যালয়ের মাসুদুর রহমান নামের এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, আমি ১৯৮২ সালে এ বিদ্যালয় থেকে এস.এসসি পাশের পর শিক্ষাজীবন শেষ করে এখন চাকুরীর সুবাদে বাইরে থাকেন। কিন্ত বাল্যকালের স্কুলের কথা বন্ধুদের কথা সব সময় মনে পড়ে। তাই পূর্ণর্মিলনীতে পরিবারের সকলকে নিয়ে এসেছেন। কৈশরের বেশিরভাগ সময় যেখানে কাটিয়েছি। আমার সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দেখার জন্য আমার ছেলে মেয়েরা খুব আগ্রহী ছিল। তারাও আমার সাথে এসেছে। আজ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এখানে এসে বাল্যকালের বন্ধুদের পেয়ে খুব ভালো লাগছে। আমি যেন সেই বাল্যকালে ফিরে গেছি।

বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে বিদ্যালয়ের আঙিনা আজ ভরে গেছে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কলকাকলিতে। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। এরপর থেকে যত শিক্ষার্থী প্রাক্তন হয়েছে তাদের মধ্যে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। বিভিন্ন বয়সী প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি এবং তাদের আচরনসহ শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ আমাকে মুগ্ধ করেছে।

বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল হাই, জালাল উদ্দীন জানান প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের দাওয়াতপত্রে আমরা কয়েকজন প্রাক্তন শিক্ষক সকাল থেকেই বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম। নানা বয়সী শিক্ষার্থীরা যখন এসে আমাদেরকে সন্তানের মত করে জড়িয়ে ধরে দোয়া নিয়েছে তখন আর চোখের পানি ধরে রাখতে পানিনি। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আচরনে আজ মনে হয়েছে সারাজীবন শিক্ষকতা করে অন্যদের মত আর্থিক স্বচ্ছলতা আসেনি ঠিকই আমরা যা অর্জন করেছি অন্যরা তা পারেননি। আমি আজ এটা মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করছি। আর গর্বে নিজের বুক ভরে উঠছে। অনুষ্ঠানে কালীগঞ্জের জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button