ঝিনাইদহ-যশোরে তিন দিবসে ৬৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা
ঝিনাইদহের চোখঃ
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী। তার পরই রয়েছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা। ঝিকরগাছা ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে হরেক রকমের ফুল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়। দেশের অর্ধেকের বেশি ফুলের চাহিদা পূরণ করা হয় এ দুই জেলা থেকে। আসন্ন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ (পহেলা ফাল্গুন) ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গদখালী ও ঝিনাইদহের ফুলচাষীরা প্রায় ৬৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন। এর মধ্যে ঝিকরগাছার গদখালীর চাষীরাই ৬০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ফুলের আবাদ হয়েছিল ৬৩২ হেক্টর। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৬৩৩ হেক্টর ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আবাদ হয়েছিল ৬৩৬ হেক্টর জমিতে। চলতি বছরেও একই পরিমাণ জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। এর বিপরীতে ফুল উৎপাদন হয় গড়ে ৫৮ কোটি ৮৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৫৫ পিস। হেক্টরপ্রতি ফুল উৎপাদন ৯ লাখ ৩৫ হাজার ২৮ পিস।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের উপপরিচালক এমদাদ হোসেন জানান, জেলায় ৬৩২ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের আবাদ করা হয়েছে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। গদখালীর চাষীরা পলিহাউজে ফুলের আবাদ বাড়াচ্ছেন। এতে সঠিক মাত্রায় গোলাপ উৎপাদন হবে।
অন্যদিকে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার ছয় উপজেলায় ২০৮ হেক্টর জমিতে বিদেশী লিলিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন জাতের বিদেশী ফুলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু কালীগঞ্জ উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। কালীগঞ্জে চাষ হওয়া ফুলের মধ্যে লিলিয়াম, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ভুট্টাফুল, গাঁদা অন্যতম।
নীলকণ্ঠনগর গ্রামের চাষী কামারুল ইসলাম জানান, তিনি ৫০ শতক জমিতে পলিহাউজের মাধ্যমে গোলাপের আবাদ করছেন। এতে ফুলের রঙ ও উচ্চতা সঠিক মাপে হচ্ছে।
ফুলচাষী ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, ডাবল রজনীগন্ধা (ভুট্টা) ও হাইব্রিড রজনীগন্ধা (উজ্জ্বল), গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা ও গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। ইংরেজি নববর্ষে ব্যবসা ভালো হয়নি। কিন্তু বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস এবং মহান শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে পাঁচ লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি ও গদখালী ফুলচাষী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সারা দেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এ ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে কেবল যশোরেই পাঁচ-ছয় হাজার ফুলচাষী রয়েছেন। সারা বছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেরুয়ারির তিনটি দিবসকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষীরা ফুল চাষ করে থাকেন। এবার ফুলের দাম বাড়ার কারণে ৬০ কোটি টাকা বিক্রি ছাড়িয়ে যাবে।
কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় ফুলচাষী ত্রিলোচনপুর গ্রামের এসএম টিপু সুলতান। তিনি শেরেবাংলা নগর ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি। তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ফুলের ব্যবসা ভালো হয়। এ সময় ফুলের দামও ভালো পাওয়া যায়। তিনি পাইকারদের কাছে একটি লিলিয়াম ফুল ১০০ টাকা, জারবেরা ৬ থেকে ১৮, গ্লাডিওলাস ৭ থেকে ১৯, গোলাপ ২ থেকে ১০, চন্দ্রমল্লিকা ১ থেকে ৩, ভুট্টাফুল ৩ থেকে ৭ টাকা করে বিক্রি করেন। আগামী বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করবেন তিনি। এছাড়া গোটা জেলায় আড়াই থেকে ৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের ডুমুরতলা গ্রামের ফুলচাষী মিজানুর রহমান জানান, চলতি বছর তিনি পাঁচ কাঠা জমিতে গাঁদা ফুলের আবাদ করেছেন। দড়িতে ফুল গেঁথে ঝোপা তৈরি করা হয়। এক ঝোপায় ৬৫০ থেকে ৭০০ গাঁদা ফুল থাকে। দাম কম থাকলে প্রতি ঝোপা বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। দাম বাড়লে সর্বোচ্চ ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃপাংশু শেখর বিশ্বাস জানান, জেলায় চলতি বছর প্রায় ২০৮ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলায়ই ৯০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে। উৎপাদন ব্যয় কম, আবার লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে ফুলচাষীদের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।