পাঠকের কথা

বিপর্যয়, টিকে থাকা ও জয়–গুলজার হোসেন গরিব

ঝিনাইদহের চোখঃ

আপনারা সবাই জানেন বর্তমান করোনাভাইরাস সম্পর্কে।
অনেকে করোনাভাইরাসের ভয়ালতাও জানেন। আপনারা
এও জানেন, আজো মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশ কীভাবে
টিকে আছে। জানেন মানবসভ্যতার ইতিহাস পড়ে ইতিহাস
ঘেটে। আপনারা নিশ্চই জানেন,এর আগেও এই পৃথিবীতে
মানবসভ্যতা বিলুপ্তিকারী এমন মহামারি প্রাকৃতিক দুর্যোগ
এসেছে এবং মানুষই এই বিপর্যয়ের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী
হয়েছে বারবার। এবারো নিশ্চয়ই এর বিরূপ ঘটবে না।
পৃথিবীর সব যুদ্ধেই মানুষ প্রাণ হারায়। পিতামাতা হারায়
স্নেহের সন্তান। সন্তান হারায় ঈশ্বরতুল্য পিতামাতা। স্বামী
হারায় তার স্ত্রী। স্ত্রী হারায় তার স্বামী। স্বজন হারায় তার
প্রিয়জন। শিশু হারায় তার ভবিষ্যৎ সুন্দর জীবন। দেশ
হারায় মহাসম্পদ। জাতি হারায় সভ্যতা, সংস্কৃতি। কান্নার
জলে হয় বঙ্গোপসাগর। হাহাকার, আত্মচিৎকারে সুনীল
আকাশ হয় বিবর্ণ। তবুও মানুষ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে,জয়ী
হয়। আবার উঠে দাঁড়ায়, সকল দুঃখ ভুলে মানবসভ্যতাকে
আবার বিকশিত করে। দেখে বাঁচার নতুন স্বপ্ন।

পৃথিবী শাসন করার আশায় অনেক ক্ষমতাধর মানুষের
আবির্ভাব দেখা গেছে। আলেকজান্ডার, চেঙ্গিস খান,
তৈমুর লঙ এমনো অনেকে। দখলও করেছে প্রায় পৃথিবীর
একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত। তাদের ক্ষমতা দেখাতে
গিয়ে কেউ করেছে লাশের পাহাড়, কেউ লাশকে নদী,
সাগরের জলে ভাসিয়ে জলকে করেছেন বিষাক্ত
দুর্গন্ধময়। কেউ ভাগাড়ে ফেলে শেয়াল, শকুনের খাদ্য।
কেউ পুড়িয়ে বাতাসকে করেছে ভারি। সত্যি বলতে
নিজেকে ক্ষমতাবান হিসেবে জাহির করতে গেলে এমন
জঘন্য হত্যাকাণ্ড করতেই হয়। হত্যাকাণ্ড না ঘটালে কেউই
ভয় পায় না, আতঙ্কিত হয় না। হত্যা, ভয়, আতঙ্ক
সৃষ্টি করতে না পারলে কেউই তাকে ভয়ানক শ্রেষ্ঠ হিসেবে
স্বীকার করে না। তাই তো তাদের তলোয়ার বা অস্ত্রের
ক্রোধাঘাতে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত অনেকেই অকালে লাশ
হয়েছেন। লাশ হয়েছেন জ্ঞানী, গুনী,সেবক,বিজ্ঞানী,শিল্পী,
গবেষক কত সাহিত্যিক ইত্যাদি। লাশের মিছিলে উত্তলোন
করেছেন তাদের বিজয়ী পতাকা। পৃথিবী জয়ের নেশায়
এই উন্মাদ গুলো আজ বেঁচে আছেন? আছে কি তাদের
গ্রাস করা রাজরাজ্য? না তারা কেউই নেই, ইতিহাসের
পাতা ছাড়া। কিন্তু আজো তাদের সেই গ্রাস করা এলাকায়
টিকে আছে সেই নিপীড়িত মানুষেরই বংশধর।

কালে কালে কাল হয়ে আলেকজান্ডারদের চেয়েও অনেক
শক্তিশালী, অচেনা,অজানা, ভয়ংকর শক্তি নিয়ে এসেছে
বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, ভাইরাস-মহামারি ইত্যাদি।
যাদেরকে আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে অবহিত করি।
এরা একেকবার একেক রকমে এসে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে
লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি নিরীহ মানুষের।পৃথিবীতে সবচেয়ে
বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ক্ষুদ্রানুক্ষুদ্রা দানব ভাইরাসেরা।
এদের চিনে উঠতে উঠতেই লাশের পাহাড়, লাশের ভাগাড়,
গড়ে তোলে যেখানে-সেখানে। সামনে যাকে পায় তাকেই
মারে ইচ্ছামতো। ছোট বড় কাউকেই রেহাই দেয়নি বা দেয়
না। না শিশু, না যোয়ান, না বৃদ্ধ। ডাক্তার, বিজ্ঞানী
গবেষকও বাদ পড়ে নি তাদের ভয়াল থাবা থেকে।এমনকি
ধনী, রাজা, বাদশা, এমপি, মন্ত্রী কাউকেই ছাড়েনি তাদের
আক্রোশ আক্রমণ থেকে। এত মৃত্যুর পরও মানুষ আজো
টিকে আছে। মানুষ আধুনিক মানুষ হওয়ার জন্য এই
প্রকৃতিকেই আঘাত করেছে,শত্রু বানিয়েছে।প্রকৃতির সাথে
মানুষের যুদ্ধও তখন থেকে। তখন থেকেই কখনো প্রকৃতি
মানুষকে শাসন করে, কখনো মানুষ প্রকৃতিকে। একমাত্র
মানুষই প্রকৃতির সাথে যুদ্ধে বেশি জয়ী ও বেশি শাসন করে
আসছে। প্রকৃতিকে শাসন করার দক্ষতা অর্জনের জন্যই
মানুষই আজ শ্রেষ্ঠ। মানুষ যদিও প্রকৃতির বাইরে নয়।

পূর্বের ভাইরাসদের মতন বা তার চেয়ে বেশি মানুষ মারার
ক্ষমতা যতই থাক করোনাভাইরাসের, আমরা নিশ্চিত
এই ভাইরাসকে পরাজিত করবো এবং আমরাই ফের
এযুদ্ধে জয়ী হবো। এ আমার আত্মবিশ্বাস নয়, দৃঢ় বিশ্বাস।
ঐক্য ও জনবল হলো যুদ্ধ জয়ের বিরল শক্তি। আমরা
দেখতেও পাচ্ছি সারাপৃথিবীর মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। ঐক্য
হয়েই যুদ্ধ করতে হয় জয়ের জন্য। কোনো যুদ্ধ ঘরের
বাইরে গিয়ে করতে হয়, কোনো যুদ্ধ ঘরে বসেই। আমরা
জানি এবারের যুদ্ধ ঘরে বসে ঘর বন্দি হয়ে। তার প্রমাণ
বিশ্বব্যাপী লকডাউন। আমাদের প্রধান কাজ হবে এই যুদ্ধে
লকডাউন মেনে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
আমরা জানি আমাদের এই মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখার
জন্য আজীবনই কিছু সুদক্ষ জ্ঞানী মানুষ আপ্রাণ চেষ্টা
করেছেন এবং এখনো করেন। এবারো এমন সুদক্ষ মহা
মানুষ সচেষ্ট আছেন এবং করোনাভাইরাসকে প্রতিহত
করতে মেধা শানিত অস্ত্র চালাচ্ছেন। আমাদরেকে জয়ী
করতে, মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখতে। আমাদেরও দায়িত্ব
আর কর্তব্য হবে, ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, আদেশ,
অনুরোধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা, তাহলেই আমরা
এই যুদ্ধে জয়ী হবো সুনিশ্চিত। একটা কথা মনে রাখা
দরকার আজকের এই অত্যাধুনিক মানবসভ্যতার
সৌন্দর্যশৈলী বিশেষত বিশেষজ্ঞ মানুষগুলো উপহার
দিয়েছেন। আর প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করেই আবিষ্কার
করেছেন আমাদের সুস্থ ও সুন্দর জীবন। আমাদের সুস্থ
আর সুন্দর জীবনের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে
নেয়াই হবে অত্যন্ত বুদ্ধিমানের কাজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button