মহামারী করোনাকে জয় করে আমরা আবারো গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো-এম এ কবীর
ঝিনাইদহের চোখঃ
নতুন বছর মানেই নতুন স্বপ্ন আর নতুন সম্ভাবনা। অথচ একবিংশ শতকের প্রথম মহামারীর ছোবলে সব স্বপ্ন আর সম্ভাবনা ফিকে হয়ে গেল। ফলে আজ কোথাও উৎসব হলো না, কোথাও শোনা গেল না সুখী কৃষকের গান। বরং পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে আজ চোখ রাঙিয়ে গেল এক অদৃশ্য শত্রæ।
প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ যে উৎসব আর উন্মাদনা নিয়ে আসে মানুষের জীবনে, এবার এর উল্টো চিত্র বাংলা ভাষাভাষী প্রতিটি জনপদে। এই বৈশাখের প্রথম দিনে পান্তা-ইলিশের উৎসব নেই, কোথাও বসেনি গ্রাম্য মেলা কিংবা পুতুল নাচের আসর। হয়নি বর্ষবরণ। আর এর মাঝে এলো করোনা সংক্রমণে ৭ জনের মৃত্যুর খবর। এমন বিষন্ন নববর্ষ কেউ কোনদিন ফেরত চাইবে না।
এক বছর আগেও বর্ষবরণের দিনে সারা দেশ সেজেছিল বর্ণিল সাজে। রঙিন বেলুন হাতে তরুণ-তরুণীরা ঘুরে বেড়িয়েছিল উদ্যানে আর পথে প্রান্তরে। পিতার আঙুল ধরে উৎসবের ভাষা চিনে নিয়েছিল সন্তান। রঙিন পোশাক পরে অবোধ কিশোর এসেছিল রাজপথে। যেখানে রোদের উত্তাপ থেকে প্রিয়তমকে বাঁচাতে আঁচলের ছায়া বিছিয়ে দিয়েছিল মায়াময়ী প্রেম।
একটি দিনের সঙ্গে আরেকটি দিনের যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে একটি বছরের সঙ্গে আরেকটি বছরের । এটি সময়ের বৈশিষ্ট্য। অনেকগুলো বছর বৈশাখে আমরা আনন্দ আর উৎসব করে কাটিয়েছি, কিন্তু এবার ঘরে থাকতে হয়েছে। এটা সময়ের প্রয়োজন। এই প্রয়োজন পূরণ করা না গেলে আমাদেরকে ভুগতে হবে।
এমন নববর্ষ আর যেন ফিরে না আসে। শোভাযাত্রা, রমনার গান আর মানুষের আনন্দবিহীন বৈশাখের প্রথম দিনকে মোটেও নববর্ষ মনে হয়নি।
আমরা এখন এক অদৃশ্য শত্রæর বিরুদ্ধে লড়ছি। এ লড়াইয়ে মানুষকে জিততে হবে। বর্ষবরণ করতে না পারার আক্ষেপ থেকে যাবে, তবে মানুষ জিতে গেলে আনন্দ পাব। এই মহামারী, এই ভয়াল করোনাকাল দ্রæত শেষ হয়ে যাক। আমরা আবারো গানে গানে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবো।
এই দুঃসহ সময় দ্রæত ফুরিয়ে যাক। আমরা আবার উৎসব করবো, আনন্দ করবো। আবারো কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত মিলিয়ে গাইবো বেঁচে থাকার গান।
সমতলের বাঙালিদের মত পাহাড়ের জনজাতি গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসবও একইরকম ফিকে হয়ে গেছে। প্রতি বছর এই সময় সবুজ পাহাড়ি জনপদ উৎসবে মুখর থাকলেও এবার মহামারীর প্রভাবে পাহাড়ে উৎসবের উৎসাহ থেমে গেছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বেশিরভাগ পরিবারই কাপ্তাই লেকের বদলে নিজেদের বাড়ির ছাদে পানি ছিটিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে।
আমরা বহুদিন মানুষে মানুষে শ্রেণীবিভাজন করেছি, কিন্তু করোনা এসে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে সব মানুষ সমান। এই মহামারী চলে যাওয়ার পর আমরাও যেন সমতা রক্ষা করে চলি। সম্পদের সুষম বন্টন করি। তাহলেই পরের বৈশাখ আরো বেশি বর্ণিল আর আনন্দময় হবে।