করোনা আক্রান্ত সরকারি চাকরিজীবীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন গ্রেড ভেদে
ঝিনাইদহের চোখঃ
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কর্তব্য পালন করতে গিয়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন তাদের কেউ আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ এ সংক্রান্ত সরকার ঘোষিত নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও প্রত্যক্ষভাবে নিয়োজিত প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য কর্মচারী দায়িত্ব পালনকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে ক্ষতিপূরণ বাবদ সরাসরি আর্থিক সুবিধা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এক্ষেত্রে কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হলে গ্রেড ভেদে পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পাবেন। আর সরকারি কোনো কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এর পাঁচগুণ আর্থিক সহায়তা পাবেন।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, ২০১৫ এর বেতনস্কেল অনুযায়ী ১৫-৩০তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে তিনি ক্ষতিপূরণ পাবেন পাঁচ লাখ টাকা, আর মারা গেলে পাবেন ২৫ লাখ টাকা। ১০-১৪ তম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন সাড়ে সাত লাখ টাকা, আর মারা গেলে পাবেন সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া , প্রথম-নবম গ্রেডের কেউ আক্রান্ত হলে পাবেন ১০ লাখ টাকা এবং মারা গেলে পাবেন ৫০ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের সবার জন্য স্বাস্থ্য বিমার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিমার ক্ষেত্রে সরকারকেই প্রিমিয়াম দিতে হবে। এছাড়া, বিমার টাকা পেতে আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে অনেক সময় লেগে যায়। তাই মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে সরাসরি আর্থিক সহায়তা দ্রিয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে সেগুলো হচ্ছে-করোনাভাইরাস পজেটিভের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মেডিকেল রিপোর্টসহ স্ব-স্ব নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে নির্দির্ষ্ট ফরমে ক্ষতিপূরণের দাবিনামা পেশ করতে হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ফরমে মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্ত্রী, স্বামী, সন্তান এবং অবিবাহিতদের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে ক্ষতিপূরণের দাবি সংবলিত আবেদন নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করতে হবে।
আবেদনকারীর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ আবেদনপত্রসমূহ যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠাবে। পরে অর্থ বিভাগ ক্ষতিপূরণের আবেদন প্রাপ্তির পর ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদানের সরকারি আদেশ জারি করবে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এ পরিপত্রের নির্দেশনা কার্যকর হবে।
এদিকে ইতোমধ্যে করোনাবিরোধী লড়াইয়ে গত ১৫ এপ্রিল মারা গেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। করোনায় মৃত্যুবরণকারী এই চিকিৎসক সাধারণ মানুষের কাছে মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এছাড়া বেশকিছু সংখ্যক ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যের করোনায় আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এরা সবাই এ সুবিধা পাবেন।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ৪ হাজার ১৮৬ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। ১০৮ জন সুস্থ হয়েছেন।