জানা-অজানা

চশমা, মোবাইল, আংটি, পরিষ্কার না করলে থাকে সংক্রমণের আশঙ্কা

ঝিনাইদহের চোখঃ

মহামারি করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় সারা বিশ্বে চলছে লকডাউন। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সম্ভবত লকডাউন চলবে আরও বেশ কিছু দিন। কিন্তু তারই মধ্যে আমাদের দোকান, বাজার করতে বাড়ি থেকে বেরতেই হচ্ছে। প্রয়োজনে যেতে হচ্ছে ডাক্তারের চেম্বারে বা ওষুধের দোকানেও। বেরলেই হাতে ঘড়ি পড়া আর পকেটে মোবাইল ফোন সঙ্গে রাখাটা আমাদের বহু দিনের অভ্যাস হয়ে গেছে। হাতে আংটি না পরলেও আমাদের চলে না! আর যাঁদের চশমা না পড়লে এক মুহূর্তও চলে না, তাঁদের তো চশমা বাড়িতে খুলে রেখে বাড়ির বাইরে পা ফেলার উপায়ই নেই। অনেকে আবার চশমা না পড়ে খাপে নিয়ে বেরন। কারও সঙ্গে কথা বলতে হলে বা কিছু পড়তে গেলে খাপ খুলে চশমা বের করে নেন।

চিকিৎসকেরা বলছেন, ঘড়ির ব্যান্ড, মানিব্যাগ, মোবাইল ফোনের কভার, চশমা বা চশমা রাখার খাপ, হাতের আংটির মাধ্যমেও বাড়িতে ব্যাকটেরিয়া, করোনা-সহ নানা ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের জোরালো আশঙ্কা রয়েছে। তাই বাড়িতে ফিরেই এই সব খুব ভাল ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে আমাদের খুব সতর্ক হতে হবে। এই লকডাউনের সময় তো বটেই।

আমাদের কী কী করণীয়?

চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরে দু’টি হাত খুব ভাল ভাবে ধুয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চশমা, মোবাইল ফোনও খুব ভাল ভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। জল ও লোশন দিয়ে। একই ভাবে স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে চশমার খাপ, মানিব্যাগ, বেল্টও। ভাল স্যানিটাইজারে বা হাতশুদ্ধিতে থাকে ইথাইল অ্যালকোহল। শুকনো কাপড়ে স্যানিটাইজার লাগিয়ে সেই কাপড় দিয়ে চশমার ডাঁটি, ফ্রেম, চশমার খাপ, মোবাইল ফোন, তার কভার, মানিব্যাগ, বেল্ট খুব ভাল ভাবে মুছে নিতে হবে। না হলে, এদের মাধ্যমে নিজেদের তো বটেই, বাড়ির লোকজনেরও সংক্রমণ ঘটতে পারে।

অরিন্দমের কথায়, চশমা হলে প্রথমে বেসিনের কল থেকে বেরনো জলে তার দু’টি কাচ ও ফ্রেম ভাল ভাবে ধুয়ে নিয়ে হবে। তার পর চশমা পরিষ্কার করার জন্য যে বিশেষ লোশন আছে, তা দিয়ে খুব ভাল ভাবে মুছে নিতে হবে চশমার দু’টি কাচ ও ফ্রেম। আর সেটা যে কোনও কাপড় দিয়ে মুছলে হবে না। চশমার খাপে যে কাপড় দেওয়া থাকে, তা দিয়েই মুছতে হবে।’

সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, কাফ এটিকেট, মাস্ক, গ্লাভস নিয়ে আমারা যথেষ্ট সতর্ক হলেও মোবাইল থেকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের ব্যাপারে কোনও সতর্কতাই সে ভাবে নেওয়া হচ্ছে না। অথচ এ কথা অজানা নয় যে, আমাদের নাক-মুখ আর চোখ দিয়ে বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের জীবাণু শরীরে সেঁধিয়ে যায়। অথচ যেখানে-সেখানে মোবাইল ফোন কানে চেপে ধরতে একটুও দ্বিধা হয় না। কান থেকে চোখ, নাক, মুখের দুরত্ব যৎসামান্য। তাই সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে রেডিয়েশনের জন্য এবং ভুল ভঙ্গির কারণে ঘাড়, হাত ও আঙুলে ব্যথার ঝুঁকি বাড়ে। তবে সব থেকে বেশি ঝুঁকি করোনাভাইরাস সংক্রমণের।

ভাইরোলজিস্টদের মতে, মোবাইল হল ‘হাই টাচ সারফেস’-এর অন্যতম উদাহরণ। ঠিক ভাবে পরিষ্কার করা না হলে মোবাইল থেকেও সার্স কোভ-২ করোনাভাইরাসের কমিউনিটি ট্র্যান্সমিশনের ঝুঁকি খুব বেশি। এই ব্যাপারে সকলের সচেতন হওয়া উচিত। বাজার দোকান অথবা কাজের শেষে বাড়ি ফিরে সোজা বাথরুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে হাত-মুখ সাবান দিয়ে পরিষ্কার তো করতে হবেই। তা ছাড়া ফোন বন্ধ করে নরম কাপড়ে হাতশুদ্ধি বা কীটনাশক লোশন ভিজিয়ে তা দিয়ে ফোন পরিষ্কার করে নিতে হবে। স্যানিটাইজার দিয়ে মোবাইলের আগাপাশতলা মুছে নিয়ে অল্প সময় রোদে রেখে আসতে পারেন।

এই লকডাউনের সময় যখন বাড়ি ও নিজেদের সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে আমরা সতর্ক হচ্ছি, তখন হাতের আংটি, কানের দুল, বালা, গলার হার বা চেন, নাকছাবি, নথ, এই সবের ব্যবহার নিয়েও আমাদের খুব সাবধান হতে হবে।এমনটাই বলছেন চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের কথায়, এই সময় অলঙ্কার না পরাই সবচেয়ে ভাল। তবে যদি পরতেই হয়, বাইরে থেকে এলে দু’টি হাত খুব ভাল ভাবে ধোওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতের আংটি, কানের দুল, গলার হার বা চেন, নাকছাবি, নথও খুব ভাল ভাবে ধুয়ে ও মুছে নিতে হবে। তার আগে ব্রাশ দিয়ে অলঙ্কারের খাঁজগুলি পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারণ, ধাতব অলঙ্কারের খাঁজে খাঁজে, বিভিন্ন কোণায় নানা ধরনের ব্যাক্টিরিয়া ও ভাইরাস আটকে থাকতে পারে। দু’টি হাত ভাল ভাবে ধুয়ে, মুছে স্নান করার পর সেই অলঙ্কার আবার পরলে ফের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাবে। তাতে নিজেদের বিপদ যেমন বাড়বে, তেমনই বাড়বে আমাদের থেকে বাড়ির অন্যদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কাও। তাই হাতের আংটি, কানের দুল, গলার হার বা চেন, নাকছাবি, নথও খুব ভাল ভাবে ধুয়ে ও মুছে নিতে হবে।

ধাতব অলঙ্কারে জল থেকে গেলে সেগুলিতে মরচে পড়তে পারে। তাতেও জন্মাতে পারে নানা ধরনের ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া। যেগুলি থেকে সংক্রমণ হতে পারে। যে স্যানিটাইজারে এই সব অলঙ্কার ধুতে হবে, দেখতে হবে তাতে যেন ইথাইল অ্যালকোহল থাকে। এমন অনেক স্যানিটাইজার এখন বাজারে রয়েছে, যাতে ইথাইল অ্যালকোহলের পরিবর্তে মিথাইল অ্যালকোহলের ব্যবহার হচ্ছে। মিথাইল অ্যালকোহল থাকা স্যানিটাইজার দিয়ে অলঙ্কার না ধোওয়াই উচিত। কারণ মিথাইল অ্যালকোহল খুবই বিষাক্ত। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যেগুলি ধাতব অলঙ্কার সেগুলিকে খুব ভাল ভাবে ধোওয়া ও মুছে নেওয়ার পর কিছু ক্ষণ সেগুলিকে রোদে রেখে দিলে আরও ভাল হয়। সোনা ও রুপোর মতো ধাতুতে কোভিড-১৯ বেশি ক্ষণ বেঁচে থাকতে না পারলেও অন্য ব্যাক্টিরিয়া বা ভাইরাস থাকতে পারে। তাই ধোওয়া ও মোছার পর অলঙ্কারগুলিকে কিছু ক্ষণ রোদে রাখলে উত্তাপে ব্যাক্টিরিয়া ও ভাইরাসগুলি মরে যাবে। আনন্দবাজার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button